Tuesday , December 3 2024

পরকাল বা আখিরাত সম্পর্কে ধারনা

পরকাল বা আখিরাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের

সুরা আল মুমিনুন আয়াত ১৬

ثُمَّ اِنَّکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تُبۡعَثُوۡنَ

তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।

কিয়ামত সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, সুরা বাকারা-৪৮, সুরা দুখান- ৪০, সুরা নাহল-১১১ 

মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলে। এ জীবন চিরস্থায়ী ও অনন্ত। এ জীবনের কেনো শেষ নেই। আখিরাত বা পরকালের বেশ কয়েকটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। যেমন:
মৃত্যু : আখিরাত বা পরকালীন জীবনের শুরু হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। সুতরাং মৃত্যু হলো পরকালের প্রবেশদ্বার। আল্লাহ তায়ালা সকল প্রাণীর মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি বলেন,

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ

” প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৮৫)।

মৃত্যু থেকে কেউ পালিয়ে বাচতে পারবে না। বিভিন্ন যুগের জালেমরা যেমন মৃত্যু থেকে বাচতে পারেনি, এই যুগের জালেমরাও মৃত্যু থেকে বাচতে পারবেনা।

কোরআন মজিদে বলা হয়েছে-(সুরা জুমআ-৮)।

قُلۡ اِنَّ الۡمَوۡتَ الَّذِیۡ تَفِرُّوۡنَ مِنۡهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِیۡکُمۡ

হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করতে চাও, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের কাছে পৌঁছবে।

তারা যতই ক্ষমতা প্রয়োগ করুক অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহ কাছে ফিরে যেতে হবে। আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো।

আল্লাহ তাআলা বলেন, [সূরা সজদা: ১১]

قُلۡ یَتَوَفّٰىکُمۡ مَّلَکُ الۡمَوۡتِ الَّذِیۡ وُکِّلَ بِکُمۡ ثُمَّ اِلٰی رَبِّکُمۡ تُرۡجَعُوۡنَ

“বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘মালাকুল মওত’ তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।”

কবর: মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়কে কবরের জীবন বলা হয়। দুনিয়াতে মানুষকে মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হয়। এসময় ফেরেশতা কবরে আসেন। তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেন।

এক হাদিস থেকে কবরের আজাব সম্পর্কে জানা যায়, সহী বুখারি, (তাওহীদ প্রকাশনা) ১৩৩৮ নং হাদিস শরিফে এসেছে,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশ্তা এসে তাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, না তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে মারা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে, তার আশেপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জ্বীন ছাড়া।

তাই হাদিসের আলোকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা খুবই সহজ যে পাপীদের জন্য কবর তথা বরজখি জীবন থেকে আজাব শুরু

হয়ে যায়, যেভাবে নেককারদের জন্য কবর তথা বরজখি জীবন থেকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত প্রদান করা হয়।

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে, কিয়ামতের দিন চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে শাস্তি দেওয়া কি ইনসাফবিরোধী নয়?

এ ধরনের প্রশ্ন আধুনিক শিক্ষিত ভাইয়েরা করে থাকেন। এর জবাব হলো, এটি ইনসাফবিরোধী নয়। বিষয়টি এমন—

দুনিয়ার জীবনে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলে আদালত কর্তৃক তার চূড়ান্ত রায় হরওয়া

আগে তাকে কারাগারে থাকতে হয়। সেখানে জেলখানার কষ্ট তাকেও ভোগ করতে হয়। এটাকে ন্যায়বিচার পরিপন্থী

ধরা হয় না। ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি পাপী ও অবিশ্বাসী হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, সে পাপী ও অবিশ্বাসী অবস্থায় গ্রেপ্তার

হয়েছে। কিয়ামতের চূড়ান্ত বিচারের আগে তাকেও ‘বরজখি জেলখানা’য় থাকতে হবে। এটা ন্যায়বিচার পরিপন্থী নয়,

বরং ন্যায়বিচারের সহায়ক।

কিয়ামত: আকাইদ শাস্ত্রে কিয়ামত বলতে দুটি অবস্থাকে বোঝানো হয়। প্রথমত, কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়, দ্বিতীয়ত, কিয়ামতের অন্য অর্থ দাঁড়ানো।

কিয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা আল ইমরান-আয়াত ১৮৫

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ

“জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে”

হাশর: হাশর হলো মহাসমাবেশ। হাশর আরবি শব্দ। হাশর অর্থ একত্র হওয়া, জড়ো । আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সকল মানুষ ও প্রাণীকুল মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবে। মানুষের এ মহাসমাবেশকেই হাশর বলা হয়।

হাশরের মাঠের চিত্র হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সেদিন পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে জমায়েত করা হবে। হাশরের ময়দানে আপনজনদের ভুলে যাবে : হাশরের ময়দানে মানুষ তার আপনজনদের ভুলে যাবে। সবাই নিজের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে।

ইসরাফিল (আ.) দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দিলে মানুষ যার যার কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানের দিকে ছুটতে থাকবে। মানুষ সাধারণত পা দিয়ে ভর করে হাঁটে। কিন্তু হাশরের ময়দানে কিছু মানুষ চেহারার ওপর ভর করে হাঁটবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, হাশরের ময়দানে মানুষকে তিনভাবে উপস্থিত করা হবে। একদল মানুষ পায়ে হেঁটে উপস্থিত হবে। একদল সওয়ারিতে আরোহণ করে উপস্থিত হবে। একদল মুখের ওপর ভর করে উপস্থিত হবে। এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ মুখের ওপর ভর করে কীভাবে চলবে? তখন রাসুল (সা.) বললেন যে মহান সত্তা পৃথিবীতে তোমাদের দুটো পায়ে ভর করে হাঁটার শক্তি দিয়েছেন, হাশরের ময়দানে চেহারায় ভর করে হাঁটার শক্তিও তিনি দিতে পারেন। তারা তাদের মুখের দ্বারাই জমিনের প্রতিটি টিলা ও কাঁটা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।’ (সহী বুখারি (তাওহীদ প্রকাশনা) : ৪৭৬০)

মিযান: মিযান অর্থ পরিমাপক যন্ত্র বা দাঁড়িপাল্লা। হাশরের ময়দানে মানুষের আমলসমূহ ওজন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে পাল্লা প্রতিষ্ঠা করবেন তাকে মিযান বলা হয়।

পবিত্র কুরআনের সুরা আম্বিয়া আয়াত -২১ এই বলা হয়েছে-

وَ نَضَعُ الۡمَوَازِیۡنَ الۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٌ شَیۡئًا

কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লাসমূহ; সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।

পুলসিরাত: ইসলামি শরিয়তের ভাষায় সিরাত হলো হাশরের ময়দান হতে জান্নাত পর্যন্ত জাহান্নামের উপর দিয়ে চলমান একটি উড়াল সেতু।

আল্লাহ্‌ কোরআন এবং হাদীসে পুলসিরাত সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন। এবং সকল মুসলিম এই পুলসিরাতকে বিশ্বাস করে। এটি জাহান্নামের উপর দিয়ে একটি ব্রীজ বা পুল। মু’মিনগণ তা পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছে যাবে। নবী (সঃ) এই ব্রীজের বিবরন দিয়েছেন, যে এর পথ এমন পিচ্ছল হবে যে পা স্থির রাখা যাবে না। দুই পাশে এমন কিছু থাকবে যা ছোঁ মেরে নিবে এবং লোহার আকুড়া থাকবে এবং “সদান” নামক গাছের কাঁটার মত শক্তিশালী কাঁটা থাকবে এগুলো মাষের গোস্ত ছিঁড়ে নিবে। পুলসিরাত চুলের চাইতেও চিকন ও তরবারীর চাইতে ধারালো হবে। এ সময় মু’মিনদেরকে তাদের আমল অনুসারে আলো দেয়া হবে। আর যার আমল সবচেয়ে কম হবে তার আলো হবে অতি ক্ষুদ্র যা তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির এক পাশে থাকবে। ঐ আলোর রশ্মিতে তারা পুলসিরাত পার হবে। মুমিন ব্যক্তি কেউ চোখের পলকে কেউ বিদ্যুতের বেগে কেউ ঝড়ের বেগে, পাখির মত, দ্রুতগামী ঘোরার মত, সাধারণ সোয়ারীর মত পুলসিরাত অতিক্রম করবে। তাদের মধ্যে কিছু নিরাপদে পৌঁছাবে, কারও শরীরের গোস্ত ছিঁড়ে যাবে এবং কেউ আবার জাহান্নামে পড়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

শাফাআত: ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সঃ) বলেছেন কিয়ামত দিবসে মানুষ এমনি কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হবে যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমরা কী বিপদের সম্মুখীন হয়েছ, তা কি দেখতে পাচ্ছ না? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারী হবেন? কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদমের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাঁকে বলবে, আপনি আবুল বাশার আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে নিজ হস্ত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন এবং মালায়িকাহ্কে হুকুম দিলে তাঁরা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তখন আদম (আঃ) বলবেন, তিনি আমাকে একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি, আজ আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী । তোমরা অন্যের কাছে যাও, তোমরা নূহ (আঃ)-এর কাছে যাও। তখন সকলে নূহ্ (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে নূহ্ (আঃ)! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের প্রতি প্রথম রাসূল। আর আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমার একটি গ্রহণযোগ্য দু‘আ ছিল, যা আমি আমার কওমের ব্যাপারে করে ফেলেছি, আজ আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী । তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও তোমরা ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে। তখন তারা ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে ইব্রাহীম (আঃ)! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি তাদের বলবেন, আমি তো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। আজ আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী । তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও মূসার কাছে। তারা মূসার কাছে এসে বলবে, হে মূসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ আপনাকে রিসালাতের সম্মান দিয়েছেন এবং আপনার সঙ্গে কথা বলে সমস্ত মানবকূলের উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমি তো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম, যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়নি। আজ আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী । তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও ঈসা (আঃ)-এর কাছে। তখন তারা ঈসা (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, হে ঈসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং কালিমাহ যা তিনি মারইয়াম (আঃ)-এর উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি ‘রূহ’। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তিনি নিজের কোন গুনাহর কথা বলবেন না। আজ আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী । তোমরা অন্য কারও কাছে যাও- যাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার আগের, পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। তখন আমি আরশের নিচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের এমন সুন্দর নিয়ম আমার সামনে খুলে দিবেন, যা এর পূর্বে অন্য কারও জন্য খোলেননি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও, তোমাকে দেয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবূল করা হবে।

এরপর আমি আমার মাথা উঠিয়ে বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত। হে আমার রব! আমার উম্মত। হে আমার রব! আমার উম্মত। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার উম্মাতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পার্শ্বের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে অন্য দরজায় ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সে সত্তার শপথ! জান্নাতের এক দরজার দুই পার্শ্বের মধ্যবর্তী স্থানের প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামীরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বস্রার মাঝে দূরত্বের সমতুল্য। [৩৩৪০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৫৩)

জান্নাত: ইসলামি পরিভাষায় পরকালীন জীবনে পুণ্যবানগণের জন্য পুরস্কার স্বরূপ যে আরামদায়ক স্থান তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে বলা হয় জান্নাত। সুরা বাকারা আয়াত-৮২

وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন যার দরজা হবে আটটি।

আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা রয়েছে যে, জান্নাত এর সংখ্যা আটটি, কিন্তু সহী হাদিস থেকে প্রমান পাওয়া যায় জান্নাত হলো মাত্র একটি আর তার দরজা হবে আটটি। যাকে যে দরজার জন্য মনোনিত করা হবে সে সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।

সহীহুল বুখারী: (তাওহীদ প্রকাশনা)এর হাদিস নং- ৩২৫৭ এ উল্লেখ করা হয়েছে

ﻭَﻋَﻦْ ﺳَﻬْﻞِ ﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠّٰﻪِ : ﻓِﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴَﺔُ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ : ﺑَﺎﺏٌ ﻳُﺴَﻤَّﻰ ﺍﻟﺮَّﻳَّﺎﻥَ ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻪ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮْﻥَ . ﻣُﺘَّﻔَﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

সাহল ইবনু সা‘দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রইয়্যান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

এই জান্নাত চরম সুখের আবাস সেখানে কি আপনার যেতে মন চাইনা। আমাদের প্রত্যেকের একটি মাত্র ইচ্ছা থাকা উচিত, শুধু জান্নাতে যাওয়া। দুনিয়াতে আমরা যত কাজ করবো সব কিছু জান্নাতে যাওয়ার জন্য করা উচিত তাহলে আমরা সফলকাম হতে পারবো।

জাহান্নাম: পরকালে মুমিনদের জন্য যেমন জান্নাতের ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি পাপীদের জন্য রয়েছে শাস্তির স্থান। আর জাহান্নামই হলো সে শাস্তির জায়গা। জাহান্নামকে (নার) বা আগুনও বলা হয়। পাপীদের শাস্তি দানের জন্য আল্লাহ তায়ালা দোযখ তৈরি করে রেখেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুরা বাকারা আয়াত-৩৯

وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে(১) মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

আল্লাহ তায়ালা তার অবাধ্য বান্দাদের জন্য জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছেন যার দরজা হবে সাতটি।

আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা রয়েছে যে, জাহান্নামের এর সংখ্যা সাতটি, কিন্তু সহী হাদিস থেকে প্রমান পাওয়া যায় জাহান্নাম হলো মাত্র একটি আর তার দরজা হবে সাতটি। যাকে যে দরজার জন্য মনোনিত করা হবে সে সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।

মহান আল্লাহ বলেন: সূরা হিজর ৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত

لَهَا سَبۡعَۃُ اَبۡوَابٍ ؕ لِکُلِّ بَابٍ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٌ مَّقۡسُوۡمٌوَ اِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوۡعِدُهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ

“তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে।”

About Md Nazmul Azam

I am website developer.

Check Also

রাসুল স: এর সুরাত

রাসুল স: এর জীবনীরাসুল স: এর জীবনী দুই ভাগে বিভাক্ত১। সুরাতে রাসুল স:২। সিরাতে রাসুল …

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী জানুন, আপনার অনেক ভুল সংশোধন …

প্রকৃত মুমিনের পরিচয় বা প্রকৃত ঈমানদার কে?

প্রকৃত মুমিন এর পরিচয় জানুন নাজমুল আযম শামীম Premium WordPress Themes DownloadDownload Nulled WordPress ThemesFree …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *