Friday , December 27 2024

কখন জিহাদ ফরজ তথা আবশ্যক হয়

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক জিহাদ কখন একজন মুসলামানের উপর ফরজ হয়।

কখন জিহাদ ফরজ তথা আবশ্যক হয়?

অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারের মতে নিম্নের কয়েকটি অবস্থায় জিহাদ ফরজ হয়।

প্রথমত: মুসলিম ও অমুসলিম মুখামুখি হওয়া।

“তোমরা তাদেরকে যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করো”, “যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করে যাও” — কুর’আনে এরকম কিছু আয়াত রয়েছে, যা দেখলে কিছু অমুসলিমদের খুশিতে দাঁত বের হয়ে যায়। তারা এই আয়াতগুলো পড়ে ভাবে, “এই তো পেয়েছি! এইবার মুসলিমরা যাবে কই?” এই ধরনের আয়াতগুলোর আগে-পিছে কিছু না পড়েই, আয়াতগুলোকে কাটছাঁট করে ব্যাপক প্রচার করে, যেন তারা মানুষকে দেখাতে পারে যে, ইসলাম একটি অসহনীয়, আগ্রাসী, অশান্তির ধর্ম, আর তারা নিজেরা কত সাধু।

আসুন দেখি, তারা কী প্রচার করে, আর কুর’আনে আসলে কী বলা আছে—
সুরা বাকারা আয়াত-১৯০ হতে ১৯৪ তে উল্লেখ রয়ছে-

যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে লড়াই করো, কিন্তু সীমা অতিক্রম করবে না। যারা সীমা অতিক্রম করে, তাদেরকে আল্লাহ কখনোই ভালোবাসেন না।  তাদেরকে যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করো। আর সেখান থেকে বের করে দাও, যেখান থেকে ওরা তোমাদেরকে একদিন বের করে দিয়েছিল। অন্যায় বাঁধা, নির্যাতন (ফিতনা) হত্যার চেয়েও খারাপ। তবে মসজিদুল হারাম-এর কাছে ওদের সাথে লড়াই করবে না, যদি না তারা সেখানে তোমাদের সাথে লড়াই শুরু না করে। আর যদি তারা সেখানে লড়াই করেই, তাহলে তাদেরকে হত্যা করো — অবিশ্বাসীদের এটাই উচিত প্রাপ্য।  কিন্তু ওরা যদি বন্ধ করে, তবে অবশ্যই, আল্লাহ অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু।  যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যায় বাঁধা, নির্যাতনের (ফিতনা) অবসান না হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করে যাও। কিন্তু ওরা যদি বন্ধ করে, তাহলে কোনো বিরোধ থাকা যাবে না, শুধু মাত্র অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ছাড়া।

কুর’আনে যত জায়গায় আল্লাহ তায়লা  কিতাল (যুদ্ধ, লড়াই) এর আদেশ দিয়েছেন, তার প্রত্যেকটির পেছনে কোনো না কোনো প্রেক্ষাপট রয়েছে। এমন কোনো আয়াত পাওয়া যাবে না, যেখানে আল্লাহ তায়ালা  মুসলিমদেরকে কোনো কারণ ছাড়াই নিজে থেকেই গিয়ে মারামারি করতে বলেছেন, মানুষকে জোর করে মুসলিম বানানোর জন্য বা নিজেদের আধিপত্য প্রসার করার জন্য। যেমন, আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতগুলোতে মুসলিমদের লড়াই করার নির্দেশ তখনি দেওয়া হয়েছে, যখন মানুষ তাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। যুদ্ধ, লড়াই এর ব্যাপারে কুর’আনে সবসময় শর্ত হচ্ছে: আত্মরক্ষা বা ইসলাম মেনে চলতে বাঁধা দেওয়া।

আজকাল কিছু অমুসলিম কু’রআনে এই ধরনের আয়াতগুলো নিয়ে লেখালেখি করে দেখাতে চায় যে, ইসলাম একটি অসহনীয় ধর্ম। এই ধর্ম কিছু হলেই মারামারি করতে বলে। অথচ অন্য ধর্মগুলো কত শান্তির। সেই সব ধর্ম মানুষকে সবসময় মিলে-মিশে থাকতে বলে, যত সম্ভব অহিংসার পথ অবলম্বন করতে বলে। কিন্তু ইসলাম একরোখা ধর্ম, এটি মানুষকে অন্যায়ের প্রতি সহনশীল হতে বলে না, নিজেদের প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য যুদ্ধ করতে বলে ইত্যাদি। তাদের বক্তব্য পড়লে মনে হয় কু’রআনে উচিত ছিল এরকম কিছু আয়াত থাকা, “যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো না। চুপচাপ মার খেয়ে যাও। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, তাদেরকে আল্লাহ বড়ই ভালবাসেন। আর তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিও না, যেখান থেকে ওরা তোমাদেরকে একদিন বের করে দিয়েছিল। অন্যায় বাঁধা, নির্যাতন (ফিতনা) ধৈর্য ধরে সহ্য করে যাও, যুদ্ধ করার থেকে অন্যায় মুখ বুখে সহ্য করা উত্তম।”

মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ সম্পর্কে মূলত দুটো মত রয়েছে

১) একদল মনে করে জিহাদ শুধুমাত্র আত্মরক্ষা এবং ইসলাম মানতে বাঁধা দূর করতে করা যাবে। জিহাদে শুধুমাত্র যারা আক্রমণ করছে, তাদেরকে পালটা আক্রমণ করা যাবে। আক্রমণ করছে না বা আক্রমণে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করছে না, এরকম কাউকে আক্রমণ করা যাবে না।

২) আরেকদল মনে করে শুধুমাত্র কুফরি, অর্থাৎ ইসলামে বিশ্বাস না করার কারণে, যে কোনো মানুষ, জাতি, দেশকে আক্রমণ করা যাবে, তারা মুসলিমদের ক্ষতি না করলেও যাবে। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা যদি ইসলাম মেনে না নেয়, তাহলেই তারা কাফির হয়ে যাবে, এবং কুফরি করার কারণে তাদেরকে আক্রমণ করা যাবে, অথবা তাদের কাছ থেকে জিযিয়া (কর) নেওয়া যাবে।

প্রথম অবস্থানের পক্ষে ইসলামের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সিংহভাগ ইমাম ও ফাকিহদের সমর্থন রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ইবন তাইমিয়াহ, আস-সুয়ুতি, ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ সহ শত শত আলেম। দ্বিতীয় অবস্থানের পক্ষে ইমাম শাফিই এবং সংখ্যালঘু কিছু আলেমের সমর্থন রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানের পক্ষে যে সমস্ত দলিল দেখানো হয়, সেগুলো পরিষ্কারভাবে কু’রআনের বহু আয়াতের বিরুদ্ধে যায়। যে কারণে দ্বিতীয় অবস্থানের পক্ষের আলেমরা কু’রআনের সেই সব আয়াতকে মানসুখ অর্থাৎ বাতিল ঘোষণা করে তাদের অবস্থান সমর্থন করার চেষ্টা করেছেন, যা প্রথম পক্ষের আলেমরা যথেষ্ট দলিল দিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন।

যখন দু’টি দল (মুসলিম ও অমুসলিম) পরস্পর মুখোমুখি হয়। যুদ্ধ ছাড়া আর কোন শান্তিপূর্ণ পথ খোলা থাকে না তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের সেখান থেকে পলায়ন করা বৈধ নয়। তখন উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে যায় দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন: সূরা আনফালঃ আয়াত ১৫

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا زَحۡفًا فَلَا تُوَلُّوۡهُمُ الۡاَدۡبَارَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না।)

দ্বিতীয়ত: শত্রুবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ

যখন শত্রুবাহিনী কোন মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আকস্মিক আক্রমণ করে তখন নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপর আবশ্যক হয়ে যাবে তাদের গতিরোধ করা। তারা যদি সক্ষম না হয় তাহলে, তাদের পার্শ্ববর্তী লোকদের উপর পর্যায়ক্রমে জিহাদ ফরজ হবে।

তৃতীয়ত: রাষ্ট্রপ্রধান জিহাদে যাওয়ার নির্দেশ দিলে।

রাষ্ট্রপ্রধান যখন কোন সম্প্রদায়কে জিহাদে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তখন জিহাদে যাওয়া আবশ্যক হবে। তবে, কারও কোন ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যারা আহব্বান পাওয়ার পরেও জিহাদে অংশগ্রহন করেনা তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা তিরিস্কার করে বলেন- সুরা তাওবা: আয়াত- ৩৮

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَا لَکُمۡ اِذَا قِیۡلَ لَکُمُ انۡفِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اثَّاقَلۡتُمۡ اِلَی الۡاَرۡضِ ؕ اَرَضِیۡتُمۡ بِالۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا مِنَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا قَلِیۡلٌ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো,যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে জিহাদে বের হতে বলা হয়,তখনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাক?তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবনকে বেশী পছন্দ করে নিয়েছ?যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখ,দুনিয়ার জীবনের এমন সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুবই সামান্য বলে প্রমাণিত হবে।

অর্থাৎ মুসলিমদের ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধান যখন জিহাদের জন্য আহ্বান জানাবেন এবং অন্যান্য মুসলিম সাথে জিহাদে যাওয়ার নির্দেশ দিবে তখন সক্ষমতা থাকা অবশ্যই তাতে সাড়া দেয়া ফরজ।

About ISLAMIC DAWAH FOUNDATION

Check Also

রাসুল স: এর সুরাত

রাসুল স: এর জীবনীরাসুল স: এর জীবনী দুই ভাগে বিভাক্ত১। সুরাতে রাসুল স:২। সিরাতে রাসুল …

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী জানুন, আপনার অনেক ভুল সংশোধন …

প্রকৃত মুমিনের পরিচয় বা প্রকৃত ঈমানদার কে?

প্রকৃত মুমিন এর পরিচয় জানুন নাজমুল আযম শামীম Premium WordPress Themes DownloadPremium WordPress Themes DownloadDownload …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *