Saturday , December 21 2024

সিরাতে রাসুল (সঃ) বা রাসুল (সঃ) এর ধারাবাহিক জীবনী

সুরাতে রাসুল (সঃ) দেখে নিন

এবার রাসুল স: এর সিরাত নিয়ে আলোচনা করবো। পুরুষ্কার প্রাপ্ত গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতুম থেকে রাসুল স: এর সিরাত বর্ননা করা হলো।

জন্ম:

মক্কায় বনু হাশেম বংশে ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ ২০ এপ্রিল বা রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।

নামকরন:

তার দাদা নাম রাখলেন মুহাম্মদ

বাংশ পরিচয় :

তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমেনা, দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব, বংশের নাম কুরাইশ

দুধ পান:

তার মাতার পরে তাকে হালিমা (রা:) দুধ পান করিয়েছেন। হালিমা (রা:) এর অনুরোধে রাসুল স: এর মাতা আমেনা তার কাছে মুহাম্মদ স: দুধ পান বন্ধ করার পরেও অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছেন।

বক্ষবিদারনের ঘটনা :

তার বসয় চার বা পাচ বছর হলে এই ঘটনা ঘটে। জিবরাইল আ: তাকে চিতভাবে শোয়ায়ে তার বক্ষ চিরে কলব বের করে আনেন এবং তার কলব থেকে শয়তানের অংশ আলাদা করলেন। এরপর কলবকে যমযম এর পানি দ্বারা দৌত করে পূর্বের স্থান স্থাপন করেন। অন্য শিশুরা হালিম রা: কে বললেন মুহাম্মদ স: কে মেরে ফেলেছে তারা ছুটে এসে দেখলেন তিনি বিবর্ন চেহারায় বসে আছেন। এই ঘটনায় হালিম রা: ভয় পেলেন এবং তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

মায়ের মৃত্যু :

ছয় বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের স্নেহে বড় হলেন। একদিন তার মাতা আমেনার ইচ্ছা জাগল স্বামীর কবর জিয়ারত করবে তাই তিনি পুত্র মুহাম্মদ, দাসী উম্মে আয়মন ও শ্বশুর কে সাথে নিয়ে রওনা করলেন। একমাস সেখানে থাকার পর পুনরায় মক্কায় যাত্রা করেন। পথে আবওয়া নামক স্থানে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং মৃত্যুবরন করলেন।

দাদার মৃত্যু :

এরপর থেকে তার দাদা তাকে লালন পালন করেন। তার বয়স যখন আট বছর দুই মাস দশ দিন তখন তার দাদা মৃত্যুবরণ করেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তার চাচা আবু তালেব কে অসিয়ত করেন তার দেখাশোনা করার জন্য। তার চাচা তাকে নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন।

বুহাইরা পাদ্রীর ঘটনা:

রাসুল স: এর বয়স যখন ১২ বছর তখন তার চাচা তাকে নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় রওনা করেন। বসরায় পৌছে তাবু স্থাপন করলে সেখানে বুহাইরা পাদ্রী তাকে দেখে চিনতে পারেন এবং তার চাচাকে বললেন তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দিন না হলে সিরিয়ার ইহুদিরা তার ক্ষতি করতে পারে। তাই তার চাচা আবু তালেব তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন।

ফুজ্জারের লড়াই:

রাসুল স: এর বয়স পনের বছর। এই সময়ে কোরাইশ ও বনু কেনানদের সাথে কায়েসে আয়নালদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে রাসুল স: অংশ গ্রহন করেন তিনি চাচাদের হাতে তীর তুলে দিতেন।

হিলফুল ফুযুল:

ফুজ্জারের লড়াইয়ের পর হিলফুল ফুযুল সংগঠিত হয়। এর মাধ্যমে সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন মক্কায় সকল ধরনের জুলুম অত্যাচার প্রতিকার করা হবে। এই সংগঠনে মুহাম্মদ স: ও ছিলেন।

কর্মময় জীবন:

তরুন বয়েসে রাসুল স: এর নির্দিষ্ট কোন কাজ ছিলনা। তবে কিছু বর্ননা থেকে পাওয়া যায় তিনি বনু সাদ গোত্রের বকরী চরাতেন।  ২৫ বছর বয়সে তিনি খাদিজা রা: এর ব্যবসায়িক প্রস্তাবে রাজি হয়ে  ব্যবসায়িক পন্য নিয়ে খাদিজা রা: এর দাসী মাইসার সাথে সিরিয়ায় গমন করেন।

খাদিজা রা: এর সাথে বিয়ে:

ব্যবসায়িক সফর থেকে আসার পর খাদিজা রা: দেখলেন তার অনেক বেশি লাভ হয়েছে। এছাড়া তার দাসী মাইসার নিকট রাসুল স: উন্নত চরিত্র, সততা ইত্যাদি শুনে তার বান্ধবী নাফিসার মাধ্যমে রাসুল স: এর সাথে বিয়ের কথা আলোচনা করলেন। রাসুল স: সম্মত হয়ে তার চাচাদের সাথে পরামর্শ করলেন। তার চাচারা খাদিজা রা: এর চাচার সাথে আলোচনা করেন এবং দুই পক্ষ বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ের মোহরানা হিসেবে রাসুল স: বিশটি উট দিয়েছিলেন।

রাসুল স: এর সন্তানাদি:

ইব্রাহিম ব্যাতিত সকল সন্তান খাদিজা রা: এর গর্ভজাত। তার প্রথম সন্তানের নাম কাসেম, তারপর জয়নব, রোকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতেমা এবং আব্দুল্লাহ।  রাসুল স: সকল পুত্র শৈশবে মৃত্যুবরণ করেন। একমাত্র ফাতেমা রা: ব্যাতিত বাকি কন্যা সন্তান রাসুল স: এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন। ফাতেমা রা: তার পিতার মৃত্যুর ছয় মাস পরে মৃত্যুবরণ করেন।

কাবা গৃহের পুন নির্মাণ:

রাসুল স: এর বসয় তখন ৩৫ বছর। কোরাইশরা কাবা গৃহ পুন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তারা সিন্ধান্ত নেয় শুধু হালাল উপার্জিত অর্থ দিয়ে কাবার গৃহ পুন নির্মাণ করবে। তারা কেউ এই ঘর পুন নির্মাণের জন্য ভাঙার সাহস পাচ্ছেনা। প্রথমে অলীদ ইবনে মুগীরা তা ভাঙা শুরু করেন তারা দেখলো তার উপর কোন বিপদ আসেনা তখন তারা সবাই ভাঙা শুরু করেন।  এরপর তারা নতুন করে কাবা গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যখন হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের সময় আসলো তখন তা স্থাপন নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লাগলো কে এই পাথর স্থাপন করবে। আবু উমাইয়া মাখজুমী এই বিবাদ মিমাংসের জন্য একটি উপয় বললেন, আগামীকাল মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথমে প্রবেশ করবে সে এই সমস্যার মিমাংসা দিবেন। সবাই এই কথায় একমত হলেন। পরদিন সবার প্রথমে রাসুল স: প্রবেশ করলেন তখন তাকে মিমাংসাকারী হিসাবে মনোনীত করা হলো। তিনি একটি বড় চাদর মাটিতে বিছিয়ে তার উপর হাজরে আসওয়াদ পাথার রাখলেন এবং বিদ্যমান গোত্রের নেতারদের চাদর ধরে পাথরটি যথাস্থানে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। এতে সবাই সন্তুষ্ট হলেন।

অহি প্রাপ্ত:

চল্লিশ বছর বয়সে রাসুল স: এর কাছে হেরা গুহায় ১ম অহী নিয়ে আসেন জিবরাইল আ: রমজান মাসের শবে কদর রাতে। ১ম নাযিলকৃত অহী সুরা আলাক আয়াত-১। জিবরাইল আ: তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন এবং বললেন পড়, তিনি বললেন আমি পড়তে জানি না। পুনরায় আবার চাপ দিলেন এবং বললেন পড়, তিনি বললেন আমি পড়তে জানি না। তৃতীয়বার আবার চাপ দিলেন এবং বললেন পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।  তিনি খুব ভয় পেলেন এবং বাসায় এসে খাদিজা রা: বললেন আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত করে দাও।  খাদিজা রা: তাকে সাহস দিলেন এবং তাকে তার চাচাতো ভাই  ওয়ারাকা ইবনে নওফেল এর নিকট নিয়ে গেলেন।

ওয়ারাকা ইবনে নওফেল এর পরামর্শ:

রাসুল স: সব কথা তাকে খুলে বললেন। সব শুনে ওয়ারাকা বললেন তিনি সেই দৃত যিনি মুসা আ: এর নিকট এসেছিল। তিনি আরো বলেন হায় আমি যদি সেই সময় বেচে থাকতাম যখন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দিবে। রাসুল স: অবাক হয়ে বললেন তারা সত্যিই আমাকে বের করে দিবে। তিনি বলেন আমি বেচে থাকলে তোমাকে সাহায্য করবো। এর কিছু দিন পরে ওয়ারাকা মারা যায়।

যারা প্রথমে ইসলামের দাওয়াত কবুল করেছেন:

রাসুল স: প্রথমে নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছেন। এতে যারা সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেন তারা হলো ১। খাদিজা রা: ২। যায়েদ ইবনে সাবেত ৩। আলী রা: ৪। আবু বকর রা:

এরপর আবু বকর রা: দাওয়াত শুরু করলে ১। ওসমান রা: ২। জুবাইর রা: ৩। আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা: ৪। সাদ ইবনে ওয়াক্কাস ৫। তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ ৬। বিলাল রা:।  এরা ছিলেন ইসলামের প্রথম সারির সৈনিক।

নামাযের নির্দেশ:

মেরাজের ঘটনার পূর্বেই সাহাবায়ে কেরাম নামায আদায় করতেন। সেই সময় কত ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ছিল তা নিয়ে মতবেদ আছে তবে অনেকের মতে সৃর্য উদয়ের পূর্বে ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে মোট দুই ওয়াক্ত ফরজ ছিল।  তিন বছর পর্যন্ত গোপন দাওয়াত এর মাধ্যমে ইমানদারদের একটি দল তৈরি হয়। এরপর আল্লাহ তায়ালা দাওয়াতের সাথে সাথে কোরাইশদের বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

প্রকাশ্যে দাওয়াত:

যখন রাসুল স: বুঝতে পারলেন আবু তালিব তাকে সাহায্য করবেন তখন একদিন সাফা পাহাড়ে সকলকে ডাকলেন, প্রায় সকল নেতৃস্থানীয় লোক একত্রিত হলো। রাসুল স: বললেন আমি যদি তোমাদেরকে বলি পাহাড়ের অপর প্রান্তের একদল লোক তোমাদের আক্রমণ করতে চায় তোমরা কি বিশ্বাস করবে, তারা বললো হ্যা। তখন তিনি বললেন তোমাদেরকে এক ভয়াবহ আযাবের ব্যপারে সতর্ক করতে প্রেরিত হয়েছি। তখন আবু লাহাব বললো তুমি ধ্বংস হও এই কথা বলার জন্য তুমি আমাদেরকে ডেকেছো। তখন সুরা লাহাব নাযিল হয়। এরপর থেকে রাসুল স: প্রকাশ্যে দাওয়াত দিতে শুরু করেন এবং তাদের মুর্তির মূল্যহীনতা তুলে ধরেন।

হজ্ব যাত্রীদের বাধা প্রধান:

প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার কয়েক মাস পরে হজ্বের মাস আসলো। যাতে করে অন্য দেশের মানুষ রাসুল স: এর কথায় প্রভাবিত না হয় সে জন্য কুরাইশরা  জরুরি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা যাত্রীদের বিভিন্ন পথে থাকবে এবং বলবে মুহাম্মদ একজন যাদুকর তোমরা তার কথা শুনবা না।

জুলুম নির্যাতন:

কোরাইশরা যখন দেখলো কোন ভাবে দাওয়াত বন্ধ করা যাচ্ছে না তখন তারা পঁচিশজন কাফেরের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করলো। কমিটির প্রধান ছিল আবু লাহাব। তার নেতৃত্বে সাহাবিদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। একেক সাহাবিকে একেক ভাবে কষ্ট দেওয়া হতো। রাসুল স: সেজদায় গেলে তার উপর নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হতো।

বেলাল রা: এর উপর নির্যাতন:

হযরত বেলাল (রাঃ) ছিলেন উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণের পর উমাইয়া হযরত বেলাল (রাঃ) কে গলায় দড়ি বেঁধে উচ্ছৃঙ্খল বালকদের হাতে তুলে দিত। বালকেরা তাঁকে মক্কার অলিগলিতে নিয়ে যেত। এ রকম করায় তাঁর গলায় দড়ির দাগ পড়ে যেত। উমাইয়া নিজেও তাকে বেঁধে নির্মম ভাবে প্রহার করত। এরপর তপ্ত বালির ওপর জোর পূর্বক শুইয়ে রাখত। এ সময়ে তাঁকে খাদ্য পানীয় কিছুই দেয়া হত না। কখনো কখনো দুপুরের প্রখর রোদে মরু বালুকার ওপর চিৎ করে শোয়ায়ে বুকের ওপর ভারি পাথর চাপা দিয়ে রাখত। এ সময় তাকে বলা হত, তোমাকে মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে ফেলে রাখা হবে। তবে যদি বাঁচতে চাও তবে মুহাম্মদের রাস্তা ত্যাগ কর। কিন্তু তিনি এমনি কষ্টকর অবস্থাতেও বলতেন ‘আহাদ, আহাদ’। তাঁর ওপর নির্যাতন চলতে দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) একদিন খুবই ব্যথিত হলেন। তিনি হযরত বেলাল (রাঃ) কে একটি কাল ক্রীতদাসের বদলে মতান্তরে দু’শ’ দেরহামের পরিবর্তে খরিদ করে আযাদ করে দেন।

ইসলামের প্রথম শহিদ:

বনু মাখযুমের ক্রীতদাস ছিলেন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (রাঃ)। তিনি এবং তার পিতামাতা ইসলাম গ্রহণের পর তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করা হল। আবু জেহেলের নেতৃত্বে পৌত্তলিকরা তাঁদেরকে উত্তপ্ত রোদে বালুকাময় প্রান্তরে শুইয়ে কষ্ট দিত। একবার তাদের এভাবে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছিল। এমন সময় নবী করীম (ছঃ) সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে ইয়াসের পরিবার, ধৈর্যধারণ কর, তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে বেহেশত।’ হযরত আম্মারের মা হযরত ছুমাইয়া (রাঃ) লজ্জাস্থানে দুর্বৃত্ত আবু জেহেল বর্শা নিক্ষেপ করে। ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ।

আবিসিনিয়া হিজরত:

নবুওয়তের ৫ম বছর অত্যাচার যখন তীব্র হলো তখন রাসুল স: দ্বীনের হেফাজতের জন্য আবিসিনিয়া হিজরত করার আদেশ দেন। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোরাইশরা উপঢৌকন সহ দুইজন দৃত পাঠান। তারা বলে কিছু লোক স্বজাতির ধর্ম ত্যাগ করে এখানে পালায়ন করেছে। তাদেরকে ফিরিয়ে দিন। তখন মুসলমানদের ডাকা হলে জাফর ইবনে তালিব রা: ইসলাম সম্পর্কে বাদশাকে বুঝিয়ে বলেন। তখন বাদশা কোরাইশদের ফিরিয়ে দেন এবং মুসলমানদের বলেন তোমরা আমার দেশে সম্পর্ন নিরাপদ।

সর্বাত্মক বয়কট:

হামযা রা: ও ওমর রা: ইসলাম গ্রহনের পর ষষ্ঠ হিজরিতে মূর্তিপূজকরা রাসুল স: এর মৃত্যুর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে  সর্বাত্মক বয়কট পরিকল্পনা করে। এই বয়কট পরিকল্পনা তিন বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে এতে ক্ষুধার জ্বালার কারনে বৃক্ষপত্র এবং চামড়া আহার করে জীবন ধারণ করতেন।

আবু তালিব এর মৃত্যু:

অবরোধ থেকে মুক্ত হওয়ার ছয় মাস পরে নবুওয়তের দশম বছর আবু তালিব মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর সময় রাসুল স: তাকে বললেন আপনি কেবল লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু বলুন কিন্তু তিনি তা বলেন নি। রাসুল স: কে সাহায্য করায় তাকে জাহান্নামে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে। কেবল তার দুই পায়ের হাটু পর্যন্ত আগুন পৌছবে।

সাওদা রা: এর সাথে রাসুল স: এর বিয়ে:

খাদিজা রা: এর মৃত্যুর পরে নবুওয়তে দশম বছর সাওদা রা: এর সাথে বিবাহ হয়।

তায়েফে রাসুল স: এর দাওয়াত:

নবুওয়তের দশম বছর রাসুল স: দাওয়াতের জন্য তায়েফ গমন করেন। তার সঙ্গী ছিল যায়েদ ইবনে হারেসা রা:। তায়েফে তিনি প্রায় প্রত্যেক নেতাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন তার দাওয়াতে কেউ সাড়া দেয়নি বরং ছোট বাচ্ছাদের তার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। রাসুল স: ফিরার পথে বাচ্ছারা তাকে গালমন্দ ও পাথর ছুড়তে শুরু করে এতে তিনি ও যায়েদ ইবনে হারেসা রা: রক্তাক্ত হয়। অবশেষে তারা ওতবা, শায়বা এবং রবিয়াদের একটি বাগানে আশ্রয় নেয়। তিনি একটি আংগুর গাছের ছায়া বসে তাদের জন্য দোয়া করলেন। এরপর  রবিয়ার পুত্ররা তাদের দাস আসাদের হাতে কিছু আংগুর নিয়ে রাসুল স: এর কাছে পাঠালেন তিনি বিসমিল্লাহ বলে তা খাওয়া শুরু করলেন। আসাদকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার বাড়ি কোথায়? সে বললো নিনোভায়। তখন রাসুল স: বললেন আপনি পূন্যশীল বান্দা ইউসুফ আ: এর এলাকার অধিবাসী। তাদের মধ্যে আরো কিছু কথা হলো। এরপর তিনি সেখান থেকে বের হয়ে মানায়েল নামক স্থানে আসার পর জিবরাইল আ: আসলেন এবং বললেন আপনি চাইলে তাদেরকে দুই পাহাড় দিয়ে পিষে দিবো। তখন রাসুল স: বললেন না। তাদের মধ্যে ভালো মানুষ আসবে যারা আল্লাহর ইবাদাত করবে।

রাসুল স: এর মেরাজ:

অধিকাংশ এর মতে নবুওয়তের দ্বাদশ বছর রমজান মাসে মেরাজ সংগঠিত হয়েছে। সেদিন তাকে বোরাকে তুলে স্বশরীরে প্রথমে কাবা থেকে বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়। সেখানে সকল নবীদের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেন। তারপর তাকে ১ম আসমানে নেওয়া হয় সেখানে আদম আ: এর সাথে কথা হয়। এভাবে প্রত্যেক আসমানে একেকজন নবীর সাথে কথা হয় অবশেষে তাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হন তবে আলাহকে স্বচোখে দেখেননি। আল্লাহর সাথে কথা বলের শেষে উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। ফেরার পথে মুসা আ: এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন আপনাকে আল্লাহ কি দিয়েছেন তখন রাসুল স: বলেন পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। মুসা আ: বলেন আপনার উম্মত পারবেনা কমিয়ে নিয়ে আসেন তখন রাসুল স: আবার গেলে এবং পাচ ওয়াক্ত কমানো হলো এভাবে কয়েকবার যাওয়ার পর রাসুল স: লজ্জায় আর গেলেন না তাই পাচ ওয়াক্ত সালাত নিয়ে ফিরে আসলেন। সফর থেকে ফিরে আসার সময় রাসুল স: কে জিবরাইল আ: জান্নাত, জাহান্নাম সহ অনেক কিছু দেখালেন।

রাসুল স: হত্যার পরিকল্পনা:

মেরাজের ঘটনার পর ইসলাম মদিনা সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে। মদিনার কিছু লোক রাসুল স: এর সাথে গোপনে বায়াত গ্রহন করে। তখন মক্কায় মুসলিমদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করা হয় তাই রাসুল স: মুসলিমদের মদিনায় হিজরত করার আদেশ দেন। এরপর রাসুল স: কে হত্যা করার জন্য মুশরিকরা সভার আয়োজন করে। রাসুল স: কে নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবের পর আবু জাহেল প্রস্তাব করে সকল গোত্র থেকে একজন করে একত্রিত হয়ে তাকে হত্যা করা হবে এতে বনু আবদে মান্নাফ সব গোত্রের সাথে যুদ্ধ করতে পারবেনা। তার কথায় সবাই একমত হলো।

রাসুল স: এর মদিনায় হিজরত:

রাসুল স: কে হত্যার প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর জিবরাইল আ: অহী নিয়ে আসেন। তাকে মদিনায় হিজরত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দিয়েছেন এবং আজ রাতে নিজ বিছানায় শয়ন করবেন না। তখন রাসুল স: আবু বকর রা: এর বাড়িতে যান এবং তার সাথে কথা বলে হিজরতের প্রস্তুতি নেন। রাতে রাসুল স: আলী রা: কে তার বিছানায় শয়ন করতে বলেন। এরপর পরিকল্পনাকারী ১১জন রাসুল স: এর বাড়ি ঘেরাও করে। রাসুল স: একমুঠো ধুলা নিয়ে তাদের প্রতি নিক্ষেপ করে এতে তারা সাময়িক অন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাসুল স: আবু বকর রা: গৃহে গেলেন এবং তাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন তারা একটি গুহায় যাত্রা বিরতি করলেন। কাফেরারা রাসুল স: এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলো তার বিছানায় আলী রা: তাকে বললো মুহাম্মদ কোথায়? তিনি বললেন আমি জানি না।

ছুড় পাহাড়ের গুহা:

গুহা পরিস্কার করে তারা ভিতরে অবস্থান করলেন। গুহায় কিচু ছিদ্র ছিল সেগুলো চাদর ছিড়ে বন্ধ করলেন কিন্তু দুটি ছিদ্র বাকি থাকায় আবু বকর রা: পা দিয়ে চাপা দিলেন তখন রাসুল স: তার কোলে ঘুমিয়ে পড়লেন। উক্ত ছিদ্র থেকে কি যেন আবু বকর রা: কে দংশন করলো এতে তার চোখ থেকে পানি বের হলো যা রাসুল স: গায়ে পড়লো এতে রাসুল জেগে গেলেন এবং আবু বকর রা: এর ঘটনা শুনে ক্ষত স্থানে থুথু লাগালেন সাথে সাথে যাতনা ভালো হয়ে গেল। সেখানে তারা তিন দিন অবস্থান করেছেন এবং আবু বকর রা: সকালে মক্কায় আসতেন খাবার সংগ্রহ করে রাতে সেখানে ফিরে যেতেন। কাফেরারা তাদের খোজে যখন ছুড় পাহাড়ে সেই গুহার কাছে গেল তখন আবু বকর রা: বললেন ওদের পা দেখা যাচ্ছে ওরা আমাদের ধরে ফেলবে তখন রাসুল স: বললেন এখানে আমরা দুইজন নই বরং আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

কোবায় অবস্থান:

নবুওয়তের চৌদ্দতম বছর মদিনার মুসলমানরা রাসুল স: আগমনের খবর জানতো তাই তারা প্রতিদিন হাররার নামক স্থানে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতো। একদিন একজন ইহুদি তার ব্যক্তিগত কাজে টিলার উপরে উঠেছে তিনি রাসুল স: দেখতে পেল এবং চিৎকারে করে বলতে লাগলো হে মুসলমানেরা তোমারা যার জন্য অপেক্ষা করছো সে এসেছে। একথা শুনে সবাই তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বেরিয়ে পড়ল। সেখানে তিনি মসজিদে কোবা স্থাপন করেন এবং সালাত আদায় করেন।

রাসুল স: এর মদিনায় প্রবেশ:

রাসুল স: যখন মদিনায় প্রবেশ করেন তখন সেখানকার লোকেরা তার উটের রশি ধরে তাকে গৃহে আসার আবেদন জানান। কিন্তু রাসুল স: বললেন তোমরা উটনীর পথ ছেড়ে দাও সে নিজ থেকে স্থান নির্বাচন করবে। উটনী যেখানে গিয়ে বসলে সেখানে মসজিদে নববী তৈরি করা হয়েছে। এরপর আউয়ুব আনসারী রা: এগিয়ে এসে উটের লাগাম ধরলেন এবং তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন।

মুজাহির এবং আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন:

মসজিদে নববী নির্মাণের মাধ্যমে পারস্পরিক মিল মহাব্বতের কেন্দ্র স্থাপন করেন। মোট ৯০ জন সাহাবী যাদের অর্ধেক মুজাহির অর্ধেক আনসার এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করেন। তারা একে অপরের দু:খে দু:খী এবং সুখে সুখী হবে।

বদরের যুদ্ধ:

কোরাইশদের ষড়যন্ত্র ও হুমকি অব্যাহত থাকায় রাসুল স: খুব সতর্ক ছিলেন। কোরাইশদের একটি বানিজ্য কাফেলা মক্কা থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে রাসুল স: ঘোষণা করলেন এ কাফেলার লক্ষ্যে তোমরা বেরিয়ে পড়। বদরের উদ্দেশ্যে মতান্তরে ৩১৩ জন সাহাবী নিয়ে রাসুল স: রওনা হয়েছেন। কোরাইশদের বানিজ্য কাফেলার নেতৃত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান। আবু সুফিয়ান মুসলমানদের আক্রমণের খবর পেয়ে জামজাম ইবনে আমর কে মক্কায় পাঠিয়ে তাদের রক্ষা করার জন্য আবেদন জানান। মক্কাবাসী প্রস্তুতি নিয়ে রওনা করে।  অমুসলিমরা দলে দলে বেরিয়ে এল এবং উভয় দল মুখোমুখি হতে শুরু করল। রাসুল স: দোয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা এই যুদ্ধে ফেরেস্তা দিয়ে মুসলমানদের সাহায্য করলেন। ইবলিশ ছোরাকা ইবনে মালেক এর রুপ ধরে কাফেরদের সাহায্য করতে এসেছিল কিন্তু সে ফেরেস্তাদের দেখে পালায়ন করে। এই যুদ্ধে আবু জাহেলসহ কাফেরদের ৭০ জন নেতা মারা যায়। আর মুসলমানদের ১৪ জন শহিদ হয়েছে। এই যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হয়।

ওহুদের যুদ্ধ:

বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের অবমাননা কারনে কাফেররা ওহুদের যুদ্ধের ঘোষণা দেন। তারা মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। রাসুল স: খবর পাওয়ার পর তাদের প্রতিহত করার জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। তারা যখন ওহুদ পাহাড়ের নিকটে অবস্থান নিল অথন রাসুল স: মজলিসে শুরার সভা ডাকলেন। অবশেষে ১০০০ জন সৈন্য নিয়ে রাসুল স: যুদ্ধের জন্য রওনা হয়। মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ৩০০ জন সঙ্গী নিয়ে যুদ্ধ থেকে ফিরে গেলেন এতে অনেকের মনে ভয় প্রবেশ করে। বাকী ৭০০ জন সাহাবী নিয়ে রাসুল স: এগিয়ে যান। যুদ্ধের ময়দানে রাসুল স: ৫০ জনের একটি তীরন্দাজ বাহিনী গঠন করে একটি গিরিপথে তাদের নিয়োগ করা হলো এবং বললেন তোমরা কোন অবস্থায় এই স্থান ত্যাগ করবে না। এরপর চারদিকে যুদ্ধের দানাবল ছড়িয়ে পড়লো। যুদ্ধে মুসলমানদের সাহসীকতা ও অনেক কাফেরের মৃত্যুর কারনে মুশরিকদের মনবল ভেঙ্গে যায়। তারা পিছু হটতে শুরু করে। এরপর রাসুল স: যেই ৫০ জন তীরন্দাজ নিয়োগ করেছেন এবং তাদেরকে স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন তারা রাসুল স: এর নিষেধ ভুলে গিয়ে তারা সম্পূর্ণ বিজয় আসার পূর্বে স্থান ত্যাগ করে গনিমতের জন্য চলে যায়। এতে ঐ পথে কাফেরারা আক্রমণ শুরু করে এবং অনেক সাহাবী শহিদ হয়। এরমধ্যে রাসুল স: শহিদ হয়েছে বলে মিথ্যা খবর প্রচার হয়ে এতে যুদ্ধ অনেকটা  থেমে যায়। এরপর রাসুল স: এর নির্দেশে সাহাবীরা পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে।  কাফেরেরা তাদের হামলা করার জন্য পাহাড়ের দিকে যায় কিন্তু একদল মুজাহিদ তাদেরকে আক্রমণ করে নিচে নামতে বাধ্য করে।

খন্দকের যুদ্ধ:

ওহুদের যুদ্ধের পর ছোট ছোট অনেক যুদ্ধ হয় এতে দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং কাফেরদের হিংসা বাড়তে থাকে তাই তারা পরিকল্পনা করে মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। অল্পদিনের মধ্যে ১০ হাজাত সৈন্যের বিরাট বাহিনী মদিনার পাশে সমাবেত হল। এই খবর শুনে রাসুল স: মজলিসে শুরার বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে সালমান ফারসির মত গৃহীত হয় যে যুদ্ধের স্থানের চারদিকে পরিখা খনন করতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিখা খনন শুরু হয়, রাসুল স: নিজেও এই কাজে অংশ নেন। পরিখা খননের কারনে মুখামুখি সংঘর্ষ হয়নি। দুই দলের মধ্যে তীর নিক্ষেপ হয়েছে এতে উভয় দলের সামান্য কয়েকজন মারা যায়। দীর্ঘ এক মাসের কাছাকাছি সময় একদল অন্য দলের বিভিন্ন ভাবে মনোবল নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এতে কাফেরদের মনোবল অধিক নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।

ইফকের ঘটনা:

রাসুল স: কোথাও সফরে যাওয়ার সময় স্ত্রীদের নাম লিখে লটারি করতেন যার নাম উঠতো তাকে নিয়ে যেতেন। বনু মুস্তালিকের সামরিক অভিযানে যাওয়ার সময় আয়েশা রা: এর নাম উঠে তাকে নিয়ে সফরে যায়। সফর থেকে ফিরার পথে যা স্থানে যাত্রা বিরতি হয় সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে আয়েশা রা: তার গলার হার হারিয়ে ফেলেন। হারটি খুজতে গেলে বাকিরা যাত্রা শুরু করেন। যারা আয়েশা রা: এর হাওদাজ উটের পিঠে রেখেছেন তারা মনে করেছিল তার ভিতরে আয়েশা রা: আছেন। কারন আয়েশা রা: ছিলেন হালকা পাতলা। আয়েশা রা: ফিরে এসে দেখেন সবাই চলে গেছেন।  তাই তিনি সেখানে শুয়ে পড়লেন ভাবলেন তারা তাকে না পেয়ে খুজতে আসবেন। সেই স্থান দিয়ে সফওয়ান রা: আগমন করলেন আয়েশা রা: তাকে চিনতে পারে এবং তার উটের পিঠে করে রওনা করেন। তাদেরকে এভাবে আসতে দেখে মুনাফিকরা নানা অপবাদ রটাতে শুরু করে। রাসুল স: চুপচাপ ছিলেন, দীর্ঘদিন অহি না আসায় রাসুল স: তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে সাহাবিদের সাথে আলোচনা করেন। এদিকে সফর থেকে এসে আয়েশা রা: অসুস্থ হয়ে পড়েন তার অপবাদের ব্যাপারে কিছু জানতেন না  কিন্তু তিনি অনুমান করেছে অন্য সময় অসুস্থ হলে রাসুল স: যেরকর সেবা করতেন এখন সে রকম করছেন না। তাই সবকিছু ভালো ভাবে অবগত হওয়ার জন্য তার আব্বা আম্মার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তাকে অনুমতি দেওয়া হলে তিনি বাড়িতে গিয়ে সব জানতে পারলেন। সব শুনে তিনি শুধু কাদলেন তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার পিতা মাতা বললেন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাকে নির্দোষ করে আয়াত নাজিল করলেন। যারা আয়েশা রা: ব্যাপারে অপবাদ দিয়েছে তাদেরকে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।

হুদায়বিয়ার সন্ধিঃ

আরবের পরিস্থিতি মুসলমানদের অনুকূলে এসে গিয়েছিল।  ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুল স: ১৫০০ জন সাহাবী নিয়ে ওমরা পালন করার জন্য মক্কায় রওনা করেন। রাসুল স: ঘোষণা দিলেন আমরা ওমরার জন্য যাবো কোন যুদ্ধ নয় তবে কেউ যদি আমাদেরকে বাধা দেয় তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। এদিকে কাফেরেরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলমানদেরকে বাধা প্রদান করবে। তারা সিদ্ধান্ত নিল মুসলমানরা সালাতে দাড়ালো আক্রমণ করতে সহজ হবে তাই আল্লাহ তায়ালা সালাতুল খাওফ এর হুকুম দিলেন এতে তারা আক্রমণ করতে পারলোনা। এরপর ওসমান রা: কে কোরাইশদের কাছে পাঠালেন এবং তাদের আগমনের উদ্দেশ্য বলতে বললেন। ওসমান রা: তাদের কাছে গেলেন এবং কথা বললেন। কোরাইশরা ওসমান রা: কে তাদের কাছে রেখে দিলেন। দীর্ঘসময় ওসমান রা: ফিরে না আসায় গুজব ছড়িয়ে পড়লো তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই রাসুল স: বললেন কোরাইশদের সাথে লড়াই না করে আমরা স্থান ত্যাগ করবো না। এরপর সাহাবিদের থেকে বায়াত নিলেন তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাবে না। বায়েত শেষে ওসমান রা: এসে উপস্থিত হলেন। কোরাইশরা অবস্থা নাজুক দেখে সোহায়েল ইবনে আমরকে সন্ধি করতে পাঠালেন।  তার সাথে আলোচনা করে কিছু শর্তে সন্ধিতে চুক্তিবদ্ধ হলেন। শর্তগুলো হলো ১। এই বছর ফিরে যাবে আগামী বছর তারা আসবে। ২। দশ বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। ৩। যার যার ধর্ম পালন করবে কাউকে জোড় করা যাবেনা। ৪। কোরাইশদের কেউ আসলে ফিরিয়ে দিতে হবে কিন্তু মুসলিমদের কেউ তাদের কাছে গেলে ফেরত দেওয়া হবেনা। তখন মুসলমানরা ওমরাহ সমাপ্ত ভেবে কোরবানি এবং মাথামুণ্ডন করে ফিরে গেলেন।

খায়বর যুদ্ধঃ

হুদায়বিয়ার সন্ধির অল্প কিছু দিন পরে কাফেররা তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের একটি কাফেলার উপর হামলা করে। এতে দুই দলের মধ্যে খায়বর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। উভয় দল খায়বরে পৌছালেন, রাসুল স: বলেন আমি আগামীকাল এমন একজনের পতাকা প্রদান করবো যে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলকে ভালোবাসেন। সাহাবীরা সকলে পতাকা পাওয়ার আসায় রইল। সকাল বেলা রাসুল স: বললেন আলী রা: কোথায়? সাহাবীরা বলল তার উঠেছে, তারপর তাকে আনা হলো রাসুল স: তার চোখে থুথু লাগালেন এতে তার চোখ ভালো হয়ে যায়। আলী রা: মুসলিম সৈন্যদের সাথে নিয়ে ইহুদিদের ইসলামের দাওয়াত দেন তারা দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে মুসলমানদের মুখামুখি দাঁড়ায়। এবং যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে কাফেরদের আটটি দুর্গ ছিল মুসলমানরা সবগুলো দুর্গ ভেঙে দিলেন। তারপর কাফেরেরা সকল সম্পত্তি দেওয়ার শর্তে সন্ধির প্রস্তাব পেশ করলে রাসুল স: সন্ধি মেনে নিলেন এবং মুসলমানদের চূড়ান্ত জয় হয়।

রাসুল স: কে বিষ মিশ্রিত মাংস খাওয়ানোর ঘটনাঃ

খায়বর বিজয়ের পর সালাম ইবনে মুশকিম এর স্ত্রী যয়নব বিনতে হারেছ রাসুল স: কে বকরির ভুনা মাংস উপঢৌকন হিসাবে প্রেরণ করে। তার কিছু অংশ রাসুল স: মুখে নিয়ে চিবিয়ে ফেলে দেন এবং বলেন এই হাড় আমাকে বলছে এতে বিষ মিশানো হয়েছে। যয়নব কে জিজ্ঞাসা করলে সে স্বীকার করে। তুমি কেন এই কাজ করেছো বলা হলে সে বলে আমি ভাবছিলাম এই ব্যক্তি নবী হলে আমার বিষ মিশানোর খবর তাকে জানানো হবে। এই কথা শুনে রাসুল স: তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু রাসুল স: এর সাথে তার সাহাবী বাশার ইবনে বারা রা: ছিলেন তিনি মারা গেলেন তাই ঐ মহিলাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মুতার যুদ্ধঃ

রাসুল স: এর জীবিত অবস্থায় যেসকল যুদ্ধ হয় সেসবের মধ্যে মুতার যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। ৮ম হিজরিতে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়।  রাসুল স: হারেছ রা: কে বসরায় গভর্নর এর নিকট চিঠিসহ পাঠান কিন্তু তারা তাকে হত্যা করে তাই রাসুল স: তিন হাজার সৈন্য প্রস্তুত করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এই যুদ্ধে তিনজনকে সেনাপতির দায়িত্ব দেন যায়েদ ইবনে হারেছ রা:, জাফর রা: ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওহা রা:। সৈন্যদলকে রাসুল স: বলেন তোমরা হারেছ রা: এর হত্যাকাণ্ডের স্থানে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে লড়াই করবে। এই যুদ্ধে দুই লক্ষ কাফেরদের বিরুদ্ধে মাত্র তিন হাজার মুসলমান যুদ্ধ করে। যুদ্ধ চলাকালে এক এক করে তিনজন সেনাপতি শহিদ হওয়ার পরে সাহাবারা খালেদ ইবনে ওলীদ রা: কে সেনাপতির দায়িত্ব দেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। খালেদ ইবনে ওলীদ রা: এর নয়টি তরবারি ভেঙে যায় এবং তিনি ছোট একটা তরবারি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। পরের দিন খালেদ ইবনে ওলীদ রা: কৌশল করে মুসলিমদের পিছনে নিয়ে গেলেন এবং কাফেরেরা ফিরে গেলেন।

মক্কা বিজয়ঃ

কোরাইশরা হুদাবিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে কিছু মুসলিমকে হত্যা করেছে। পুনরায় সন্ধি করার চেষ্টা করার জন্য আবু সুফিয়ান মদিনায় আসে কিন্তু তিনি কারো কাছে ঠাই পায়নি। ৮ম হিজরিতে রাসুল স: মক্কা অভিমুখে দশ হাজার সাহাবী নিয়ে রওনা হলেন। মক্কায় পৌছানের পূর্বে কোরাইশদের অনেকে রাসুল স: এর নিকট নিজেদের নিরাপত্তার আবেদন করেন। আব্বাস রা: আবু সুফিয়ান কে রাসুল স: নিকট নিয়ে আসেন।  ওমর রা: তাকে হত্যা করতে চাইলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশেষে আবু সুফিয়ান ইসলাম কবুল করেন। আবু সুফিয়ান রা: মক্কায় প্রবেশ করে উচ্চ কন্ঠে বলল, মুহাম্মদ স: এত সৈন্য নিয়ে এসেছে যে তাদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আজ যারা আবু সুফিয়ান এর ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। এই কথা সুনে তার স্ত্রী হিন্দা বলল তোমারা এই বুড়াকে মেরে ফেল। আবু সুফিয়ান রা: বললেন তোমার সর্বনাশ হোক। আরো বলেন যারা মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে তারা নিরাপদ।  রাসুল স: মক্কার বিভিন্ন প্রবেশ পথে বিভিন্ন বাহিনী প্রেরন করেন। খালেদ ইবনে ওলীদ ও তার সাথীদের যাত্রা পথে যারা বাধা দিয়েছিল তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।  বিভিন্ন স্থানে ১২ জন মুশরিক নিহত হয় এতে কোরাইশরা আতংকিত হয়ে পড়ে। এরপর রাসুল স: কাবা ঘরে প্রবেশ করে হাযরে আসওয়াদ চুম্বন করে তারপর তাওয়াফ করে এরপর ৩৬০ টি মূর্তি ভেঙ্গে দিলেন। এরপর কাবা ঘরে নামায আদায় করেন। এরপর সকলের উদ্দেশ্যে ভাষন দেন। তিনি বলেন আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। কিন্তু তিনি নয়জন চিহ্নিত অপরাধীকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। অপরাধীদের যারা ইসলাম কবুল করেন তাদের প্রানভিক্ষা দেওয়া হয়। যারা ইসলাম কবুল করেন নাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। 

বিদায় হজঃ

মক্কা বিজয়ের পর দাওয়াত ও বিভিন্ন অভিযানের ফলে ইসলামের কাজের পূর্নতা হয়েছে।  রাসুল স: দশম হিজরিরতে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষের সামনে এক ঐতিহাসিক ভাষন দেন। তিনি বলেন-

১.

 أَيُّهَا النَّاسُ، فَإِنِّى وَاللهِ لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَلْقَاكُمْ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا بِمَكَانِى هَذَا، فَرَحِمَ اللهُ مَنْ سَمِعَ مَقَالَتِى الْيَوْمَ فَوَعَاهَا، فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ وَلاَ فِقْهَ لَهُ، وَلَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ

২.

 وَاعْلَمُوا أَنَّ أَمْوَالَكُمْ وَدِمَاءَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ هَذَا الْيَوْمِ فِى هَذَا الشَّهْرِ فِى هَذَا الْبَلَدِ

৩.

وَاعْلَمُوا أَنَّ الْقُلُوبَ لاَ تَغِلُّ عَلَى ثَلاَثٍ: إِخْلاَصِ الْعَمَلِ للهِ، وَمُنَاصَحَةِ أُولِى الأَمْرِ، وَعَلَى لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ

৪.

– أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوْعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعَةٌ

৫.

وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوْعٌ كُلُّهُ-

৬.

فَإِنَّهُ مَوْضُوْعٌ كُلُّهُ- فَاتَّقُوا اللهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوْهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوْجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ

৭.

تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ

৮.

وَأَنْتُمْ تُسْأَلُوْنَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُوْنَ- قَالُوْا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ. فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلىَ السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ، اللهُمَّ اشْهَدْ، اللهُمَّ اشْهَدْ- ثَلاَثَ مَرَّاتٍ

৯.

أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ؟ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِى طَاعَةِ اللهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ الْخَطَايَا وَالذُّنُوبَ

১০.

أَلاَ وَإِنِّى فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ وَأُكَاثِرُ بِكُمُ الأُمَمَ فَلاَ تُسَوِّدُوا وَجْهِى

১১.

أَلاَ وَإِنِّى مُسْتَنْقِذٌ أُنَاسًا وَمُسْتَنْقَذٌ مِنِّى أُنَاسٌ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُصَيْحَابِى. فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ-

১২.

إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِى كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً

১৩.

أَىُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالُوا يَوْمُ الْحَجِّ الأَكْبَرِ. قَالَ: فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِى بَلَدِكُمْ هَذَا، أَلاَ لاَ يَجْنِى جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِى وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ-

১৪.

أَلاَ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ مِنْ أَنْ يُعْبَدَ فِى بِلاَدِكُمْ هَذِهِ أَبَدًا وَلَكِنْ سَتَكُونُ لَهُ طَاعَةٌ فِيمَا تَحْتَقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ فَسَيَرْضَى بِهِ-

১৫.

أَلاَ إِنَّ الْمُسْلِمَ أَخُو الْمُسْلِمِ فَلَيْسَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌ إِلاَّ مَا أَحَلَّ مِنْ نَفْسِهِ ‘

(১) ‘হে জনগণ! আল্লাহর কসম, আমি জানিনা আজকের পরে আর কোনদিন তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে মিলিত হ’তে পারব কি-না। অতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে যে ব্যক্তি আজকে আমার কথা শুনবে ও তা স্মরণ রাখবে। কেননা অনেক জ্ঞানের বাহক নিজে জ্ঞানী নয় (সে অন্যের নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়) এবং অনেক জ্ঞানের বাহক তার চাইতে অধিকতর জ্ঞানীর নিকটে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়।

(২) তোমাদের মাল-সম্পদ ও তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’

(৩) জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না : (ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এখলাছের সাথে কাজ করা। (খ) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা এবং (গ) মুসলমানদের জামা‘আতকে আকড়ে ধরা।

(৪) ‘শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট হ’ল। জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী পরিত্যক্ত হ’ল।

(৫) ‘জাহেলী যুগের সকল সূদ পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের সূদ সমূহের প্রথম যে সূদ আমি শেষ করে দিচ্ছি সেটি হ’ল (আমার চাচা) আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবের পাওনা সূদ। যার সবটুকুই বাতিল করা হ’ল।

(৬) ‘তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ।

(৭) ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস।

(৮) ‘আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি সবকিছু পৌঁছে দিয়েছেন, (রিসালাতের আমানত) আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন’। অতঃপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলী আসমানের দিকে উঁচু করে অতঃপর সমবেত জনমন্ডলীর দিকে নীচু করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক’ (তিনবার)

(৯) ‘আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দিব না? সে ঐ ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল ও জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকর্ম সমূহ পরিত্যাগ করে।

(১০) ‘মনে রেখ! আমি তোমাদের সকলের আগেই হাউয কাউছারে পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব। অতএব তোমরা আমার চেহারাকে কালেমালিপ্ত করো না।

(১১) মনে রেখ! আমি অনেককে সেদিন মুক্ত করব এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব, ‘হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তুমি জানো না তোমার পরে এরা (ইসলামের মধ্যে) কত বিদ‘আত সৃষ্টি করেছিল’

(১২) হে জনগণ! নিশ্চয় প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে পশু কুরবানী ফরয।

(১৩) ‘আজকে কোন দিন? লোকেরা বলল, হাজ্জে আকবারের দিন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম। যেমন এই দিন ও এই শহর তোমাদের জন্য হারাম। ‘মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যের উপরে বর্তাবে না। পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপর এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপর বর্তাবে না’।

(১৪) ‘‘মনে রেখ, শয়তান তোমাদের এই শহরে পূজা পাওয়া থেকে (অর্থাৎ তোমাদের কাফের হওয়া থেকে) চিরদিনের মত নিরাশ হয়ে গেছে। তবে যেসব কাজগুলিকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর, সেসব কাজে তার আনুগত্য করা হবে, আর তাতেই সে খুশী থাকবে।

(১৫) ‘মনে রেখ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই-এর কোন বস্ত্ত হালাল নয় কেবল অতটুকু ব্যতীত যতটুকু সে তার জন্য হালাল করে

রাসুল স: এর মৃত্যুঃ  

বিদায় হজের ভাষন এর পরে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াত নাযিল, সুরা মায়েদা আয়াত নং-৩, মৃত্যুর ০৭দিন পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মৃত্যুর ০৫ দিন পূর্বে অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল এবং তার মাথায় পানি দেওয়া হলো। তিনি কিছুটা সুস্থ অনুভব করলে মসজিদে গমন করেন এবং কিছু ভাষন দেন। তিনি বলেন তোমরা আমার কবরকে পুজা করার উদ্দেশ্য মূর্তিতে পরিনত করোনা। এরপর সকলের উদ্দেশ্যে বললেন আমি কাউকে আঘাত করলে সে যেন বদলা নিয়ে নেয়, কাউকে অসম্মান করলে বদলা নিয়ে নেয়।  মৃত্যুর চার দিন পূর্বে অধিক অসুস্থতার কারনে আবু বকর রা: কে নামাযের ইমামতি করার জন্য আদেশ করেন। মৃত্যুর দুই দিন পূর্বে কিছুটা সুস্থ অনুভব হলে তিনি দুজন লোকের কাধে ভর করে মসজিদে যান, তাকে দেখে আবু বকর রা: পিছনে সরে আসতে চাইলে তিনি ইশারায় নিষেধ করেন। মৃত্যুর আগের দিন তিনি তার সকল দাস দাসীকে মুক্ত করে দিলেন এবং মাত্র সাত দিনার ছিল তা তিনি সদকা করে দিলেন। অবশেষে ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মুসলমানরা ফজরের সালাত আদায় করতেছে এমন সময় আয়েশা রা: হুজরার পর্দা সরালে রাসুল স: মৃদু হাসলেন। এরপর চাশত সালাতের সময় ফাতেমা রা: এর সাথে কথা বললেন। এরপর সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেন আস সালাত, আস সালাত অমা মালাকাত আইমানুকুম। এরপর রাসুল স: মেসওয়াক করলেন কিছু দোয়া পড়লেন। অবশেষে তিনি পরম প্রিয়ের সান্নিধ্যে চলে গেলেন।

শোকের ছায়াঃ  

মদিনার জনগন শোকে অভিভুত হয়ে গেলেন। আবু বকর রা: নিজ গৃহ থেকে খবর শুনা মাত্র ছুটে এলেন এবং রাসুল স: এর চেহারায় চুম্বন করলেন। এর ওমর রা: সমাবেত লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবু বকর রা: তাকে বসতে বললেন তিনি বসলেল না। তখন আবু বকর রা: বললেন যে  ব্যক্তি মুহাম্মাদের পুজা করতো সে যেন জেনে রাখে মুহাম্মদ স: ইনতেকাল করেছে, আর যে আল্লাহর ইবাদাত করে সে যেন জেনে রাখে আল্লাহ চিরঞ্জীব, পরের দিন মঙ্গলবার রাসুল স: কে গোসল দিলেন। গোসলের পরে তাকে তিন খানা চাদর দিয়ে কাফন প্রদান করা হয়। এরপর সাহাবিরা ব্যক্তিগত ভাবে তার জানাযা আদায় করেন কারন এই নামাযে কেউ ইমাম হননি। এরপর মঙ্গলবার রাতে তাকে রাসুল স: যেই বিছানায় মৃত্যু বরন করে সেখানে তাকে দাফন করা হয়।

About Md Nazmul Azam

I am website developer.

Check Also

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী

মানব সৃষ্টির সুচনা এবং আদম (আঃ) এর দলিল ভিত্তিক জীবনী জানুন, আপনার অনেক ভুল সংশোধন …

প্রকৃত মুমিনের পরিচয় বা প্রকৃত ঈমানদার কে?

প্রকৃত মুমিন এর পরিচয় জানুন নাজমুল আযম শামীম Premium WordPress Themes DownloadPremium WordPress Themes DownloadDownload …

ইমান সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা, যা পূর্বে শুনা হয়নি

নাজমুল আযম শামীম Download Best WordPress Themes Free DownloadFree Download WordPress ThemesPremium WordPress Themes DownloadDownload …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *