ইসলামি আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী
লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রাঃ)
বইটির সংক্ষিপ্ত নোট
ভূমিকাঃ
ইসলামী সমাজ প্রতষ্ঠিার আন্দোলনে অবর্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমইে আখরোতে আল্লাহর সন্তুষ্টি র্অজন নির্ভরশীল। আর যারা সত্যই একটি আর্দশ ইসলামী সমাজ কায়মে করতে চায় তাদরেকে র্সবপ্রথম নিম্নোক্ত দিক গুলো সর্ম্পকে সচতেন হতে হবেঃ
১. হতাশার দিক। ২. আশার দিক। ৩. করণীয় দিক।
হতাশার দিকঃ
আমাদের জাতির মধ্যে ইসলামী সমাজ প্রতষ্ঠিার আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের অভাব এবং তার চাইতেও বেশী অভাব যোগ্যতার। আমাদের সমাজের প্রভাবশালী অংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে বিকৃতি ও ভাঙ্গন সৃষ্টিতে মুখর। নির্বাচনে জনগনকে প্ররোচিত করা (নির্ভূল নির্বাচনে যোগ্য র্প্রাথী না হওয়ার জন্য জনগনকে প্ররোচিত করে)। আমাদেরকে আল্লাহ হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুরা ইমরান আয়াত-১৩৯
وَ لَا تَهِنُوۡا وَ لَا تَحۡزَنُوۡا وَ اَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
তোমরা হতাশ হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও।
আশার দিকঃ
১. সমাজে কিছু সৎলোক আছে, যাদের আগ্রহ ও যোগ্যতা আছে।
২. জাতি সামগ্রকি ভাবে অসৎ প্রবণ নয়। প্রচেষ্ঠা চালালে এরাও আন্দোলনের সর্মথক হতে পারে।
৩. বিকৃতির কাজে যারা লিপ্ত তারা দু’টি গুণ র্অজন করতে পারেনা।
ক) চারিত্রিক শক্তি।
খ) ঐক্যের শক্তি বা নৈতিক শক্তি।
করণীয় দিক চারটিঃ
১. আবেগ বর্জিত ধীর সুস্থ সিদ্ধান্ত।
২. হঠাৎ ফল পাওয়ার মানসকিতা পরিহার।
৩. সুশিক্ষিত কর্মী বাহিনী গঠন।
৪. ব্যক্তি গঠন।
মূল বইটির আলোচনার বিষয় ২টিঃ
১. অর্জনীয় গুনাবলী।
২. বর্জনীয় গুনাবলী।
ইসলামী আন্দোলনরে সফলতার র্শত ৫টিঃ
১. ব্যক্তিগত গুনাবলী।
২. দলীয় গুনাবলী।
৩. র্পূণতা দানকারী গুনাবলী।
৪. মৌলিক ও অসৎ গুনাবলী।
৫. মানবিক দূর্বলতা।
ব্যক্তিগত গুনাবলী ৪টিঃ
১. ইসলামের যর্থাথ জ্ঞান-
প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হব। এজন্য সবাইকে মুফতি হতে হবে না। কিছু লোককে বুদ্ধিজীবি হতে হব। জাহেলিয়াত ও ইসলামের মধ্যে র্পাথক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলামের আলোকে সমস্যা সমাধানের জ্ঞান থাকতে হবে, সমাজকে ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজাবার জ্ঞান থাকতে হবে। তাই আমাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের ১ম যে আয়াতটি নাযিল করেছেন, তা হলো সুরা আলাক, আয়াত-০১
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ
পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
২. ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাস-
দোদুল্যমান অবস্থায় কাজ করা যায় না। যাবতীয় ইসলামী বিষয়গুলোর উপর নিঃসংশয় হওয়া। সত্য মিথ্যার মানদন্ড ইসলাম, একথা বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা আহকাফ আয়াত-১৩
اِنَّ الَّذِیۡنَ قَالُوۡا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسۡتَقَامُوۡا فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ্, তারপর অবিচল থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
৩. চরিত্র ও কর্ম-
নিজেকে দাওয়াতের সাক্ষী বানাতে হয়। সত্যের পথে অবিচল থাকা। নিছক ইসলামের প্রতি ভালবাসা দিয়ে এ গুনের ঘাটতি পূরণ।
৪. দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য-
দ্বীন কায়েম নিছক একটি কাজ নয় বরং এটিই হবে মুমিন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মুমিন ইসলাম পরিপূর্ন ভাবে পালন করবে। আংশিক দ্বীন পালন করে মুমিন হওয়া যায়না, আল্লাহ্ তায়লা সুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে বলেছেন
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ادۡخُلُوۡا فِی السِّلۡمِ کَآفَّۃً ۪ وَ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্ৰ
দলীয় গুনাবলী ৪টিঃ
১. ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা-
মুমিনরা একে অপরের ভাই, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা হুজরাতের ১০ নং আয়াতে বলেছেন
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ
মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই
তাই মুমিনরা একে অপরকে ভালবাসা উচিত
২. পারস্পরিক পরামর্শ-
কাজ করতে হবে পরামর্শের ভিত্তিতে। স্বেচ্ছাচারী বেশী দিন টিকে না। পরামর্শে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সুরা ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন
“আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন(১) যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন”
৩. সংগঠন ও শৃখংলা-
সংগঠনের অভাবে উদ্দেশ্য পূরণ হয়না। সংগঠনের নির্দেশ মেনে চলা দরকার। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করা।
৪. সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা-
যতই নিষ্ঠা থাকুক দূর্বলতা থাকবেই। নিরব দর্শক হলে দূর্বলতা বৃদ্ধি পায়। সমালোচনা দাবিয়ে রাখা ঠিক নয়। সমালোচনা করার যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাতীত অপমান করার জন্য সমালোচনা করা যায়েয নেই। সুরা হুমাযার ০১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন
وَیۡلٌ لِّکُلِّ هُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِۣ ۙ
দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পিছনে ও সামনে লোকের নিন্দা করে
পূর্ণতা দানকারী গুনাবলী ৫টিঃ
১. খোদার সাথে যথাযথ সম্পর্ক ও আন্তরিকতা-
দ্বীন কায়েমের জন্য এটি অপরিহার্য। আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতে হবে। কোন কিছুর লোভ বা ভয় না করা। সৎ কাজরে প্ররেণা আসে আল্লাহর সাথে সর্ম্পক থেকে। আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা। অন্তরে জবাবদিহীর ভয় থাকা। সকল দুনিয়াবী স্বার্থ ত্যাগ করা। আল্লাহ হর সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কে গড়ে তোলতে পারলে তিনি আমাদের কাছ থেকে সকল অন্ধকার দুর করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা বাকারার ২৫৭ নং আয়াতে
اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ
আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা ঈমান আনে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফরী করে তাগূত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়(১)। তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
২. আখিরাতের চিন্থা-
লক্ষ্য থাকবে কেবল আখেরাত। আখেরাতের সাফল্যই চুড়ান্ত সাফল্য, সকল কাজে এই চিন্তা থাকা। দুনিয়া প্রীতি দূর করতে হবে। আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কারের কথা চিন্ত করতে হবে। তাই আখিরাতের প্রতি আমাদের চিন্তাশীল হতে হবে।
৩. চরিত্র ও মাধুর্য-
মানবতার সেবক হতে হবে। কোমল স্বভাবের অধিকারী হতে হবে। নিজের দোষত্রুটি খুজতে হবে। মাফ করার মানসিকতা থাকতে হবে। চরিত্র ও মাধুর্য দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়।
৪. ধৈর্য-
সকল কাজে ধৈর্যশীল হওয়া। বার বার ব্যর্থ হয়েও পরিশ্রম থেকে বিরত না হওয়া।নফসের খাবাবির বিপেক্ষ থেকে নিজেকে মুক্ত করা। সুরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে
اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবরকারীদের সাথে আছেন।
৫. প্রজ্ঞা-
অনুধাবন, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ। সার্বিক পরিস্থিতির উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিস্থিতি নজর রাখা। অন্ধের মত কাজ না করা।
মৌলিক ও অসৎ গুনাবলী ৩টিঃ
১. গর্ব ও অহংকার।
সর্বপ্রথম যে পাপের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা প্রকাশ করা হয় তা হচ্ছে অহংকার । আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘এবং আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বললাম, হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা কর , তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করলো, সে নির্দেশ পালনে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করলো । ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (সূরা বাকারা-৩৪)
২. প্রদর্শনেচ্ছা।
মানুষকে দেখাবার জন্য কোন ইবাদাত করা যাবেনা।
৩. ত্রুটিপূর্ণ নিয়াত।
সকল কিছু নির্ভর করে তার নিয়তের উপর, সহী বুখারীর ০১ নং হাদিসে বলা হয়েছে।
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
কাজ এর প্রাপ্য হবে নিয়্যাত অনুযায়ী।
মানবিক দূর্বলতা ১৩টিঃ
১. আত্মপূজা।
২. আত্মপ্রীতি।
৩. হিংসা ও বিদ্বেষ।
৪. কূ-ধারণা।
৫. গীবত।
৬. চোগলখোরী।
৭. কানাকানি ফিসফিসানী।
৮. মেজাজের ভাসাম্যহীনতা।
৯. একগুঁয়েমী।
১০. একদেশদর্শিতা।
১১. সামষ্ঠিক ভারসাম্যহীনতা।
১২. সংর্কীর্ণমনতা।
১৩. দূর্বল সংকল্প।