সুরা নুর আয়াত ২৭-৩১
নামকরণ:
পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত (اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ) থেকে নুর শব্দটি সূরার নাম গৃহীত হয়েছে ।
নাযিলের সময়-কাল :
আলোচ্য এ সূরাটি যে বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময় নাযিল হয়, এ বিষয়ে সবাই একমত । কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হযরত আয়েশার রা: বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ঘটনা প্রসংগে এটি নাযিল হয় । (দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুকুতে এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে । আর সমস্ত নির্ভরযোগ্য বর্ণনা অনুযায়ী বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সফরের মধ্যে এ ঘটনাটি ঘটে । কিন্তু এ যুদ্ধটি ৫ হিজরী সনে আহযাব যুদ্ধের আগে, না ৬ হিজরীতে আহযাব যুদ্ধের পরে সংঘটিত হয় সে ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা যায় । আসল ঘটনাটি কি? এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের প্রয়োজন এ জন্য দেখা দিয়েছে যে, পরদার বিধান কুরআন মজীদের দু’টি সূরাতেই বর্ণিত হয়েছে । এর মধ্যে একটি সূরা হচ্ছে এটি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সূরা আহযাব । আর আহযাব যুদ্ধের সময় সূরা আহযাব নাযিল হয় এ ব্যাপারে কারোর দ্বিমত নেই । এখন যদি আহযাব যুদ্ধ প্রথমে হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, পরদার বিধানের সূচনা হয় সূরা আহযাবে নাযিলকৃত নির্দেশসমূহের মাধ্যমে এবং তাকে পূর্ণতা দান করে এ সূরায় বর্ণিত নির্দেশগুলো । আর যদি বনীল মুসতালিক যুদ্ধ প্রথমে হয়ে থাকে তাহলে বিধানের বিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে যায় । এ ক্ষেত্রে সূচনা সূরা নূর থেকে এবং তার পূর্ণতা সূরা আহযাবে বর্ণিত বিধানের মাধ্যমে বলে মেনে নিতে হয় । এভাবে হিজাব বা পরদার বিধানে ইসলামী আইন ব্যবস্থার যে যৌক্তিকতা নিহিত রয়েছে তা অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়ম ছিল, যখনই তিনি সফরে যেতেন তখনই স্ত্রীদের মধ্য থেকে কে তাঁর সংগে যাবে তা ঠিক করার জন্য লটারী করতেন । ” *বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময় লটারীতে আমার নাম ওঠে । ফলে আমি তাঁর সাথী হই । ফেরার সময় আমরা যখন মদীনার কাছাকাছি এসে গেছি তখন এক মনযিলে রাত্রিকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেলার যাত্রা বিরত্রি করেন । এদিকে রাত পোহাবার তখনো কিছু সময় বাকি ছিল এমন সময় রওয়ানা দেবার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় । আমি উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার জন্য যাই । ফিরে আসার সময় অবস্থান স্থলের কাছাকাছি এসে মনে হলো আমার গলার হারটি ছিঁড়ে কোথাও পড়ে গেছে । আমি তার খোঁজে লেগে যাই । ইত্যবসরে কাফেলা রওয়ানা হয়ে যায় । নিয়ম ছিল, রওয়ানা হবার সময় আমি নিজের হাওদায় বসে যেতাম এবং চারজন লোক মিলে সেটি উঠিয়ে উঠের পিঠে বসিয়ে দিতো । সে যুগে আমরা মেয়েরা কম খাবার কারণে বড়ই হালকা পাতলা হতাম । আমার হাওদা উঠাবার সময় আমি যে তার মধ্যে নেই একথা লোকেরা অনুভবই করতে পারেনি । তারা না জেনে খালি হাওদাটি উঠিয়ে উঠের পিঠে বসিয়ে দিয়ে রওয়ানা হয়ে যায় । আমি হার নিয়ে ফিরে এসে দেখি সেখানে কেউ নেই । কাজেই নিজের চাদর মুড়ি দিয়ে আমি সেখানেই শুয়ে পড়ি । মনে মনে ভাবি, সামনের দিকে গিয়ে আমাকে হাওদার মধ্যে না পেয়ে তারা নিজেরাই খুঁজতে খুঁজতে আবার এখানে চলে আসবে । এ অবস্থায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি । সকালে সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী আমি যেখানে শুয়ে ছিলাম সেখানে দিয়ে যেতে থাকেন । তিনি আমাকে দেখতেই চিনে ফেলেন । কারণ পরদার হুকুম নাযিল হবার পূর্বে তিনি আমাকে বহুবার দেখেন । (তিনি ছিলেন একজন বদরী সাহাবী । সকালে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকা ছিল তাঁর অভ্যাস । **তাই তিনিও সেনা শিবিরের কোথাও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এবং এখন ঘুম থেকে উঠে মদীনার দিকে রওয়ানা দিয়েছিলেন । ) আমাকে দেখে তিনি উট থামিয়ে নেন এবং স্বতষ্ফূর্তভাবে তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে পড়ে, (আরবী) “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী এখানে রয়ে গেছেন । ” তাঁর এ আওয়াজে আমার চোখ খুলে যায় এবং আমি উঠে সংগে সংগেই আমার মুখ চাদর দিয়ে ঢেকে নিই । তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেননি, সোজা তাঁর উটটি এনে আমার কাছে বসিয়ে দেন এবং নিজে দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন । আমি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যাই এবং তিনি উটের রশি ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন । দুপুরের কাছাকাছি সময়ে আমরা সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেই । সে সময় সেনাদল এক জায়গায় গিয়ে সবেমাত্র যাত্রা বিরতি শুরু করেছে । তখনো তারা টেরই পায়নি আমি পেছনে রয়ে গেছি । এ ঘটনার কুচক্রীরা মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে এবং এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল সবার আগে । কিন্তু আমার সম্পর্কে কিসব কথাবার্তা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি ছিলাম একেবারেই অজ্ঞ ।
* এ লটারীর ধরনটি প্রচলিত লটারীর মতো ছিলো না । আসলে সকল স্ত্রীর অধিকার সমান ছিল । তাদের একজনকে অন্যজনের প্রাধান্য দেবার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল না । এখন যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই কাউকে বেছে নিতেন তাহলে স্ত্রীরা মনে ব্যাথা পেতেন এবং এতে পারস্পরিক রেষারেষি ও বিদ্বেষ সৃষ্টির আংশকা থাকতো। তাই তিনি লটারীর মাধ্যমে এর ফয়সালা করতেন । শরীয়তে এমন অবস্থার জন্য লটারীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । যখন কতিপয় লোকের বৈধ অধিকার হয় একেবারে সমান সমান এবং তাদের মধ্য থেকে একজনকে অন্যজনের ওপর অগ্রাধিকার দেবার কোন ন্যায়সংগত কারণ থাকে না অথচ অধিকার কেবল মাত্র একজনকে দেয়া যেতে পারে।
** আবু দাউদ ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থে এ আলোচনা এসেছে, তাঁর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করেন যে, তিনি কখনো ফজরের নামায যথা সময় পড়েন না । তিনি ওজর পেশ করেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা আমার পারিবারিক রোগ । সকালে দীর্ঘসময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকার এ দূর্বলতাটি আমি কিছুতেই দূর করতে পারি না। একথায় রসূলূল্লাহ (সা) বলেনঃ ঠিক আছে, যখনই ঘুম ভাঙবে, সংগে সংগে নামাজ পড়ে নিবে। কোন কোন মুহাদ্দিস তাঁর কাফেলার পেছনে থেকে যাওয়ার এ কারণ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু অন্য কতিপয় মুহাদ্দিস এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, রাতের অন্ধকারে রওয়ানা হবার কারণে যদি কারোর কোণ জিনিস পেছনে থেকে গিয়ে থাকে তাহলে সকালে তা খুঁজে নিয়ে আসার দায়িত্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ওপর অর্পণ করেছিলেন ।
[অন্যান্য হাদীসে বলা হয়েছে, সে সময় সফওয়ানের উটের পিঠে চড়ে হযরত আয়েশা (রা) সেনা শিবিরে এসে পৌঁছেন এবং তিনি এভাবে পেচনে রয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই চিৎকার করে ওঠে, “আল্লাহর কসম, এ মহিলা নিষ্কলংক অবস্থায় আসেনি । নাও, দেখো তোমাদের নবীর স্ত্রী আর একজনের সাথে রাত কাটিয়েছে এবং সে এখন তাকে প্রকাশ্যে নিয়ে চলে আসছে । ”]
মদীনায় পৌঁছেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং প্রায় এক মাসকাল বিছানায় পড়ে থাকি । শহরে এ মিথ্যা অপবাদের খবর ছড়িয়ে পড়ে । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানেও কথা আসতে থাকে । কিন্তু আমি কিছুই জানতাম না । তবে যে জিনিসটি আমার মনে খচখচ করতে থাকে তা হচ্ছে এই যে, অসুস্থ অবস্থায় যে রকম দৃষ্টি দেয়া দরকার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টি আমার প্রতি তেমন ছিল না । তিনি ঘরে এলে ঘরের লোকদের জিজ্ঞেস করতেন (আরবী) (ও কেমন আছে?)
নিজে আমার সাথে কোন কথা বলতেন না । এতে আমার মনে সন্দেহ হতো, নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার ঘটেছে । শেষে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমি নিজের মায়ের বাড়িতে চলে গেলাম যাতে তিনি আমার সেবা শুশ্রূষা ভালোভাবে করতে পারেন ।
এক রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার জন্য আমি মদীনার বাইরে যাই । সে সময় আমাদের বাড়িঘরে এ ধরনের পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না । ফলে আমরা পায়খানা করার জন্য বাইরে জংগলের দিকে যেতাম । আমার সাথে ছিলেন মিসতাহ ইবনে উসাসার মা । তিনি ছিলেন আমার মায়ের খালাত বোন । [অন্য হাদীস থেকে জানা যায়, তাদের সমগ্র পরিবারের ভরণপোষণ হযরত আবু বকর সিদ্দিকের (রা) জিম্মায় ছিল । কিন্তু এ সত্ত্বেও মিসতাহ এমন লোকদের দলে ভিড়ে গিয়েছিলেন যারা হযরত আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছিল । ] রাস্তায় তাঁর পায় ঠোকর লাগে এবং তিনি সংগে সংগে স্বতষ্ফূর্তভাবে বলে ওঠেনঃ “ধ্বংস হোক মিসতাহ । ” আমি বললাম, “ভালই মা দেখছি আপনি, নিজের পেটের ছেলেকে অভিশাপ দিচ্ছেন, আবার ছেলেও এমন যে বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছে । ” তিনি বলেন, “মা, তুমি কি তার কথা কিছুই জানো না?” তারপর তিনি গড়গড় করে সব কথা বলে যান । তিনি বলে যেতে থাকেন, মিথ্যা অপবাদদাতারা আমার বিরুদ্ধে কিসব কথা রটিয়ে বেড়াচেছ । [মুনাফিকরা ছাড়া মুসলমানদের মধ্য থেকেও যারা এ ফিতনায় শামিল হয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে মিসতাহ, ইসলামের প্রখ্যাত কবি হাসসান ইবনে সাবেত ও হযরত যয়নবের (রা) বোন হামনা বিনতে জাহশের অংশ ছিল সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য । ] এ কাহিনী শুনে আমার শরীরের রক্ত যেন শুকিয়ে গেল । যে প্রয়োজন কারণের জন্য আমি বের হয়েছিলাম তাও ভুলে গেলাম । সোজা ঘরে চলে এলাম । সারা রাত আমার কাঁদতে কাঁদতে কেটে যায় । ”
সামনের দিকে এগিয়ে হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ “আমি চলে আসার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রা) ও উসামাহ ইবনে যায়েদকে (রা) ডাকেন । তাদের কাছে পরামর্শ চান । উসামাহ (রা) আমার পক্ষে ভালো কথাই বলে । সে বলে, ‘হে আল্লাহর রসূল! ভালো জিনিস ছাড়া আপনার স্ত্রীর মধ্যে আমি আর কিছুই দেখিনি । যা কিছু রটানো হচ্ছে সবই মিথ্যা ও বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই নয় । ’ আর আলী (রা) বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মেয়ের অভাব নেই । আপনি তাঁর জায়গায় অন্য একটি মেয়ে বিয়ে করতে পারেন । আর যদি অনুসন্ধান করতে চান তাহলে সেবিকা বাঁদীকে ডেকে অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করুন । ’ কাজেই সেবিকাকে ডাকা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয় । সে বলে, ‘সে আল্লাহর কসম যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি তাঁর মধ্যে এমন কোন খারাপ জিনিস দেখিনি যার ওপর অংগুলি নির্দেশ করা যেতে পারে । তবে এতটুকু দোষ তাঁর আছে যে, আমি আটা ছেনে রেখে কোন কাজে চলে যাই এবং বলে যাই, বিবি সাহেবা! একটু আটার দিকে খেয়াল রাখবেন, কিন্তু তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং বকরি এসে আটা খেয়ে ফেলে । ’ সেদিনই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবায় বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! এক ব্যক্তি আমার পরিবারের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করে আমাকে অশেষ কষ্ট দিচ্ছে! তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, তার আক্রমণ থেকে আমার ইজ্জত বাঁচাতে পারে? আল্লাহর কসম, আমি তো আমার স্ত্রীর মধ্যেও কোন খারাপ জিনিস দেখিনি এবং সে ব্যক্তির মধ্যেও কোন খারাপ জিনিস দেখিনি যার সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হচ্ছে । সে তো কখনো আমার অনুপস্থিতিতে আমার বাড়ীতে আসেনি । ’ একথায় উসাইদ ইবনে হুদ্বাইর (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী সা’দ ইবনে মু’আয) * উঠে বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি সে আমাদের গোত্রের লোক হয় তাহলে আমরা তাকে হত্যা করবো আর যদি আমাদের ভাই খাযরাজদের লোক হয় তাহলে আপনি হুকুম দিন আমরা হুকুম পালন করার জন্য প্রস্তুত । ’ একথা শুনতেই খাযরাজ প্রধান সা’দ ইবনে উবাদাহ (রা) দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন , ‘মিথ্যা বলছো, তোমরা তাকে কখনোই হত্যা করতে পারো না । তোমরা তাকে হত্যা করার কথা শুধু এ জন্যই মুখে আনছো যে সে খাযরাজদের অন্তরভুক্ত । যদি সে তোমাদের গোত্রের লোক হতো তাহলে তোমরা কখনো একথা বলতে না, আমরা তাকে হত্যা করবো । ’ ** উসাইদ ইবনে হুতাইর জবাব দেন, ‘তুমি মুনাফিক, তাই মুনাফিকদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছো । ’ একথায় মসজিদে নববীতে একটি হাংগামা শুরু হয়ে যায় । অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বসে ছিলেন । মসজিদের মধ্যেই আওস ও খাযরাজের লড়াই বেঁধে যাবার উপক্রম হয়েছিল কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে শান্ত করেন এবং তারপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসেন । ”
আয়াত ও অর্থ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
তোমাদের বলা হয় , ফিরে যাও তাহলে ফিরে যাবে, এটিই তোমাদের জন্য বেশী শালীন ও পরিচ্ছন্ন পদ্ধতি এবং যা কিছু তোমরা করো আল্লাহ তা খুব ভালোভাবেই জানেন ৷
لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍ فِيهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
তবে তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি নেই যদি তোমরা এমন গৃহে প্রবেশ করো যেখানে কেউ বাস করে না এবং তার মধ্যে তোমাদের কোন কাজের জিনিস আছে তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো ও যা কিছু গোপন করো আল্লাহ সবই জানেন
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
নবী ! মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে ৷ এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি ৷ যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন ৷
وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِهِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اٰبَآئِهِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوۡ نِسَآئِهِنَّ اَوۡ مَا مَلَكَتۡ اَیۡمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡهَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِهِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِهِنَّ ؕ وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیۡعًا اَیُّهَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে আর তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্ৰকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
তাফসির
২৭ নং আয়াতঃ
সূরার শুরুতে যেসব বিধান দেয়া হয়েছিল সেগুলো ছিল সমাজে অসৎপ্রবণতা ও অনাচারের উদ্ভব হলে কিভাবে তার গতিরোধ করতে হবে তা জানাবার জন্য । এখণ যেসব বিধান দেয়া হচ্ছে সেগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে অসৎবৃত্তির উৎপত্তিটাই রোধ করা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এমনভাবে শুধরানো যাতে করে এসব অসৎপ্রবণতা সৃষ্টির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
একঃ নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্তিগত গোপনীয়তার এ অধিকারটিকে কেবলমাত্র গৃহের চৌহদ্দীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং একে একটি সাধারণ অধীকার গণ্য করেন । এ প্রেক্ষিতে অন্যের গৃহে উঁকি ঝুঁকি মারা, বাহির থেকে চেয়ে দেখা এমনি অন্যের চিঠি তার অনুমতি ছাড়া পড়ে ফেলা নিষিদ্ধ। হযরত সওবান (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদ করা গোলাম) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা) বলেনঃ ”দৃষ্টি যখন একবার প্রবশ করে গেছে তখন আর নিজের প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেবার দরকার কি ৷” (আবু দাউদ) হযরত হুযাইল ইবনে শুরাহবীল বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কাছে এলেন এবং ঠিক তাঁর দরজার ওপর দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলেন । নবী (সা) তাকে বললেন, —– ”পিছনে সরে গিয়ে দাঁড়াও, যাতে দৃষ্টি না পড়ে সে জন্যই তো অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ (আবু দাউদ)
দুইঃ ফকীহগণ শ্রবণ শক্তিকেও দৃষ্টিশক্তির হুকুমের অন্তরভূক্ত করেছেন । যেমন অন্ধ ব্যাক্তি যদি বিনা অনুমতিতে আসে তাহলে তার দৃষ্টি পড়বে না ঠিকই কিন্তু তার কান তো গৃহবাসীদের কথা বিনা অনুমতিতে শুনে ফেলবে । এ জিনিসটিও দৃষ্টির মতো ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারে অবৈধ হস্তক্ষেপ ।
তিনঃ কেবলমাত্র অন্যের গৃহে প্রবেশ করার সময় অনুমতি নেবার হুকুম দেয়া হয়নি । বরং নিজের মা-বোনদের কাছে যাবার সময়ও অনুমতি নিতে হবে । এ ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কি আমার মায়ের কাছে যাবার সময়ও অনুমতি চাইবো ৷ জবাব দিলেন, হাঁ । সে বললো, আমি ছাড়া তাঁর সেবা কারার আর কেউ নেই। এক্ষেত্রে কি আমি যতবার তাঁর কাছে যাবো প্রত্যেকবার অনুমতি নেবো৷ জবাব দিলেন, —– ”তুমি কি তোমার মাকে উলংগ অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর ৷”
চারঃ শুধুমাত্র এমন অবস্থায় অনুমতি চাওয়া জরুরী নয় যখন কারোর ঘরে হঠাৎ কোন বিপদ দেখা দেয়া । যেমন, আগুন লাগে অথবা কোন চোর ঢোকে। এ অবস্থায় সাহায্য দান করার জন্য বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা যায় ।
পাঁচঃ প্রথম প্রথম যখন অনুমতি চাওয়ার বিধান জারি হয় তখন লোকেরা তার নিয়ম কানুন জানতো না । একবার এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসে এবং দরজা থেকে চিৎকার করে বলতে থাকে —– ( আমি কি ভেতরে ঢুকে যাবো৷) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাঁদী রওযাহকে বলেন, এ ব্যক্তি অনুমতি চাওয়ার নিয়ম জানে না । একটু উঠে গিয়ে তাকে বলে এস, —– (আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি৷) বলতে হবে । (ইবনে জারির ও আবু দাউদ)
২৮ নং আয়াতঃ
কারোর শূন্য গৃহে প্রবেশ করা জায়েয নয় । তবে যদি গৃহকর্তা নিজেই প্রবেশকারীকে তার খালি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে আপনি আমার কামরায় বসে যাবেন । অথবা গৃহকর্তা অন্য কোন জায়গায় আছেন এবং আপনার আসার খবর পেয়ে তিনি বলে পাঠিয়েছেন, আপনি বসুন,আমি এখনই এসে যাচ্ছি । অন্যথায় গৃহে কেউ নেই অথবা ভেতর থেকে কেউ বলছে না নিছক এ কারণে বিনা অনুমতিতে ভেতরে ঢুকে যাওয়া কারোর জন্য বৈধ নয় ।
অর্থাৎ এ জন্য নারাজ হওয়া মন খারাপ করা উচিত নয় । কোন ব্যক্তি যদি করো সাথে দেখা করতে না চায় তাহলে তার অস্বীকার করার অধিকার আছে। অথবা কোন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সে অক্ষমতা জানিয়ে দিতে পারে । ফকীহগণ —– (ফিরে যাও) এর হুকুমের এ অর্থ নিয়েছেন যে, এ অবস্থায় দরজার সামনে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই বরং সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত । অন্যকে সাক্ষাত দিতে বাধ্য করা অথবা তার দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে বিরক্ত করতে থাকার অধিকার কোন ব্যক্তির নেই ।
২৯ নং আয়াতঃ
এখানে মূলত হোটেল, সরাইখানা, অতিথিশালা, দোকান, মুসাফির খানা ইত্যাদি এককথায় যেখানে সকল লোকদের জন্য প্রবেশের সাধারণ অনুমতি আছে সেখানকার কথা বলা হচ্ছে ।
৩০ নং আয়াতঃ
”দৃষ্টি সংযত রাখা” থেকে এ অর্থ ভালোভাবে প্রকাশ পায় । অর্থাৎ যে জিনিসটি দেখা সংগত নয় তার ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে হবে । এ জন্য দৃষ্টি নত করাও যায় আবার অন্য কোন দিকে নজর ঘুরিয়েও নেয়া যায় । অর্থাৎ সমস্ত দৃষ্টি সংযত করার হুকুম দেয়া হয়নি বরং কোন কোন দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে ।
৩১ নং আয়াতঃ
এ দীর্ঘ আয়াতের সূচনাভাগে সেই বিধানই বর্ণিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আয়াতে পুরুষদের জন্য ব্যক্ত হয়েছে। অর্থাৎ তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে তথা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। পুরুষদের বিধানে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু জোর দেয়ার জন্য তাদের কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক আলেমের মতেঃ নারীদের জন্য মাহরাম নয়, এমন পুরুষের প্রতি দেখা সর্বাবস্থায় হারাম; কামভাব সহকারে বদ নিয়তে দেখুক অথবা এ ছাড়াই দেখুক।
পুরুষদের জন্য মেয়েদের সতর তার সারা শরীর। স্বামী ছাড়া অন্য কোন-পুরুষ এমন কি বাপ ও ভাইয়ের সামনেও তা খোলা উচিত নয়। মেয়েদের এমন পাতলা বা চোস্ত পোশাক পরা উচিত নয় যার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় বা শরীরের গঠন কাঠামো ভেতর থেকে ফুটে উঠতে থাকে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বৰ্ণনা করেন, তার বোন আসমা বিনতে আবু বকর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আসেন। তখন তিনি পাতলা কাপড় পরে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগে সংগেই মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ “হে আসমা! কোন মেয়ে যখন বলেগ হয়ে যায় তখন তার এটা ও ওটা ছাড়া শরীরের কোন অংশ দেখা যাওয়া জায়েয নয়।” বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাতের কজি ও চেহারার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। [আবু দাউদঃ ৪১০৪]
আয়াতের অর্থ এই যে, মুহরিম ব্যতিত সাজ-সজ্জার স্থানসমূহ প্ৰকাশ না করা মহিলাদের উপর ওয়াজিব।
আয়াতে পর্দার বিধানের কয়েকটি ব্যতিক্রম আলোচনা করা হচ্ছে। প্রথম ব্যতিক্রম হচ্ছে (مَا ظَهَرَ مِنْهَا) অর্থাৎ নারীর কোন সাজ-সজ্জার অঙ্গ পুরুষের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়, অবশ্য সেসব অঙ্গ ব্যতীত, যেগুলো আপনা-আপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে অর্থাৎ কাজকর্ম ও চলাফেরার সময় সেসব অঙ্গ স্বভাবতঃ খুলেই যায়। এগুলো ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো প্রকাশ করার মধ্যে কোন গোনাহ নেই। আয়াতের অর্থ এই যে, প্রয়োজনবশতঃ বাইরে যাওয়ার সময় যেসব উপরের কাপড় আবৃত করা সম্ভবপর নয়, সেগুলো ব্যতীত সাজ-সজ্জার কোন বস্তু প্ৰকাশ করা জায়েয নয়।
শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. কারো ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক
২. যে সকল স্থান জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত সে সকল স্থানে প্রবেশের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
৩. দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয়ই সমানভাবে নিজের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ রাখবে।
৪. ইসলাম নারীদের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য সাজসজ্জা করতে নিষেধ করে না। বরং গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের স্বামীর সামনে নিজকে যতটা সম্ভব পরিপাটি ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলে ধরে। কিন্তু পরপুরুষের সামনে সাজসজ্জা করে বের হওয়া যাবে না।
৫. পথ চলার সময় কোনভাবেই যেন নারীর অলংকারের প্রকাশ না ঘটে।
৬. পর্দা করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহাতায়ালা পবিত্র কুরআনে পর্দা করার নির্দেশ দিয়ে এর সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।