Tuesday , March 11 2025

সাওম বা রোজা সম্পর্কে আলোচনা

সাওম বা রোজা

সিয়াম অর্থ:

সিয়ামের আভিধানিক অর্থ হলো: বিরত থাকা। আর শরিয়তের পরিভাষায় অর্থ হলো: আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সিয়ামের নিয়তে সুব্হে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও সকল প্রকার সিয়াম ভঙ্গের জিনিস থেকে বিরত থাকা।

সিয়াম কাদের উপর ফরয

১। সুরা বাকারা আয়াত নং-১৮৩

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَیۡكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববতীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো।

রমজানের রোজা নারী-পুরুষ প্রত্যেক মুসলিম, বালেগ, বিবেকবান, সিয়াম পালন করতে সক্ষম, বাড়িতে অবস্থানকারী, নিষিদ্ধতা থেকে মুক্ত (যেমন: মাসিক ঋতু বা প্রসূতির রক্ত যা মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট) ব্যক্তির

উপর ফরজ।

রুগী বা বৃদ্ধ লোক যিনি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের রোযার বিধান

২। সুরা বাকারা আয়াত নং-১৮৪

اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ كَانَ مِنۡكُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡكِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে

সিয়াম পালনকারীর কারীর ফজিলত

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৮৯৪

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৮৯৬

সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯০৫

‘আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে।

সাওম এর দৈহিক ও মানসিক উপকারিতা

দৈহিক উপকারিতা
১. সিয়াম মানব দেহে নতুন সূক্ষ্ম কোষ  গঠন করে থাকে।
২. সিয়াম পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
৩. মোটা মানুষের স্থূলতা কমিয়ে আনতে সিয়াম সাহায্য করে।
৪. মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগবালাই থেকে হিফাযত করে। অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে ডায়াবেটিস ও গ্যাস্ট্রিক রোগ নিরাময়ে ফলদায়ক ও এক প্রকার সহজ চিকিৎসা।

মানসিক উপকারিতা
১. সিয়াম তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহ ভীরু হতে সহায়তা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

অর্থাৎ, “হে ঈমানদাররা! পূর্ববর্তী উম্মতদের মতো তোমাদের উপরও সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা ২; বাকারা ১৮৩)
২. শয়তানি শক্তি ও কু-প্রবৃত্তির ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। শরীরের যে শিরা-উপশিরা দিয়ে শয়তান চলাচল করে সিয়ামের ফলে সেগুলো নিস্তেজ ও কর্মহীন হয়ে পড়ে।
৩. সিয়াম হলো আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ইবাদতের প্রশিক্ষণ।
৪. আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ ও হারাম বস্তু থেকে দূরে থাকার সহনশীলতার প্রশিক্ষণ দেয় এ সিয়াম।
৫. ঈমান দৃঢ়করণ এবং বান্দার প্রতি আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারীর অনুভূতি সৃষ্টি করে  দেয়। এজন্য রোযাদার লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনেও কোন কিছু খায় না।
৬. দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের মোহ কমিয়ে সিয়াম পালনকারীকে আখিরাতমুখী হওয়ার দীক্ষা  দেয় এবং ইবাদতের প্রতি তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে দেয়।
৭. সিয়াম সাধনার ফলে বান্দা সৎ গুণাবলি ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে।
৮. সিয়ামে ক্ষুধার অনুভূতিতে অভাবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দূরবস্থা অনুধাবন করতে শিখায়। ফলে তাকে বঞ্চিত ও অনাহারী মানুষের প্রতি দয়াদ্র ও সহানুভুতিশীল করে তুলে।
৯. সৃষ্ট জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
১০. সিয়াম পালন আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে।
১১. এ রমযান বান্দাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়।

রোজার মাস শুরু ও শেষ

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯০৬

عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلاَلَ وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ

’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফ্তার বন্ধ করবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে।

সাহরীতে বারকাত রয়েছে তবে তা ওয়াজিব নয়।

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯২৩

أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।

সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার করা বৈধ

২। সহীহ মুসলিম হাদিস নং-১০৯৪

سَمُرَةَ، بْنَ جُنْدَبٍ – رضى الله عنه – وَهُوَ يَخْطُبُ يُحَدِّثُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ لاَ يَغُرَّنَّكُمْ نِدَاءُ بِلاَلٍ وَلاَ هَذَا الْبَيَاضُ حَتَّى يَبْدُوَ الْفَجْرُ – أَوْ قَالَ – حَتَّى يَنْفَجِرَ الْفَجْرُ

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বিলালের আযান এবং এ শুভ্র রেখা যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সুবহে সাদিক সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়।

সওম পালনের নিয়্যাত সম্পর্কে

২। আবু দাউদ (তাহকীককৃত) হাদিস নং-২৪৫৪

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী হাফসাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে সওমের নিয়্যাত করেনি তার সওম হয়নি

নোটঃ ফরয রোজার ক্ষেত্রে ফজরের পূর্বে নিয়ত করা আবশ্যক তবে অন্যান্য রোজার ক্ষেত্রে ফজরের পরে নিয়ত করার সহীহ হাদিস রয়েছে। 

দ্রুত ইফতার করা

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯৫৭

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা যতদিন শীঘ্র ইফতার করবে [সৃর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে], ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।

যে সমস্ত জিনিস রোজাকে বিনষ্ট করে দেয়

১. রমজান মাসের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় পনাহার করা।

২. রমজানের দিনে স্ত্রী সহবাস করা।

৩. জাগ্রত অবস্থায় স্ত্রীর শরীরের সাথে ঘষর্ণ করে বা চুমা কিংবা হস্তমৈথুন ইত্যাদি দ্বারা বীর্যপাত হলে।

৪. রমজানের দিনের বেলা ভিটামিন যুক্ত ইঞ্জেকশন নিলে। এগুলো তখন রোজা ভঙ্গকারী বলে বিবেচিত হবে যখন স্বেচ্ছায়, জানা ও রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় হবে।

৫. স্বেচ্ছায় বমি করলে। তবে যদি অনিচ্ছায় বমি হয়ে যায় তাহলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

৬. নারীদের হায়েয় ও নিফাস রক্ত বের হলে।

৭. ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে।

ভুলবশতঃ কিছু খেলে বা পান করে ফেললে।

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯৩৩

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সওম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।

রমাযানে স্ত্রী মিলন করলে  কাযা  কাফফারা উভয়টি জরুরি

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯৩৬

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদাকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্তকে সাদাকা করব? আল্লাহর শপথ, মাদ্বীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেনঃ এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।

নোটঃ শুধু মাত্র পুরুষকে কাফফরা দিতে হবে স্ত্রীকে দিতে হবেনা। স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন ভাবে রোযা ভঙ্গ করলে কাফফরা দিতে হবে এই মর্মে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায়না তবে কাযা করতে হবে

ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গ করার শাস্তি

১।  সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং : ১৫০৯

আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ‘একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুইজন ব্যক্তি এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা বলল, পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। আমি উঠা শুরু করি এবং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছি। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের আওয়াজ। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে যায় যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা এমন রোজাদার যারা (অকারণে রমজান মাসের) রোজা শেষ না করেই ভঙ্গ করত।’

কখন ফিদিয়া দিতে হয়

১। সুরা বাকারা আয়াত১৮৪

اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ كَانَ مِنۡكُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡكِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে(১) বা সফরে থাকলে(২) অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে(৩)। আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা(৪)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে

নোটঃ অতিশয় বৃদ্ধ নর ও নারীর জন্য রোযা পালন যদি কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয় তবে তাঁরা রোযা পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন। তাঁরা যদি মিসকীন খাওয়াতেও অক্ষম হন তবে তাদের উপর কোন কিছু বর্তাবে নাসুরা বাকারা আয়াত ২৮৬ আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না

ফিদিয়ার পরিমান
প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো সাদকায়ে ফিতরের সমান তথা অর্ধ ‘সা’ বা ১ দশমিক ৫ কিলোগ্রাম খাবার। যেমন—খেজুর, চাল বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য। অতএব, কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে একান্ত অপারগ হলে তিনি প্রতিদিন একজন মিসকিনকে পেট পুরে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করবেন। কেউ চাইলে নগদ টাকাও দিয়ে দিতে পারবেন। আর কেউ যদি নিজেই মিসকিন হয় তাহলে তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে ফিদিয়া দেওয়া প্রয়োজন নেই।

মুসাফিরের রোজা

১। সুরা বাকারা আয়াত১৮৪

اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ كَانَ مِنۡكُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡكِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে(১) বা সফরে থাকলে(২) অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে(৩)। আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা(৪)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে

যে সব দেশে সূর্যাস্ত হয় না সেখানে রোজা রাখার পদ্ধতি

যে ব্যক্তি এমন দেশে বসবাস করে যেখানে গ্রীষ্মকালীন সূর্যাস্ত ও শীতকালীন সূর্য  উদিত হয় না। অথবা এমন দেশ যেখানে ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত কিংবা এর চেয়ে কম বেশী। এমতাবস্থায় তাদের সালাত ও রোজার সময় পার্শ্ববর্তী দেশ যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য করা যায় তার সময় অনুসরণ করবে। যার সমস্ত সময় হবে ২৪ ঘন্টা। রোজার মাসের প্রথম ও শেষ এবং সেহরির শেষ ও ইফতারির শুরু ঐ পাশের দেশের সময় অনুযায়ী নির্ধারণ করবে।

সওমের মানত রেখে যিনি মারা যান

২। সহী বুখারী হাদিস নং-১৯৫২

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে সওম আদায় করবে।

নোটঃ মানতের রোযা ব্যাতীত অন্য কোন রোজা অভিভাবকের পক্ষ থেকে রাখা যায়েয নয়, তবে যদি ফিদিয়া বাকি থাকে তাহলে ফিদিয়া আদায় করতে হবে।

About Md Nazmul Azam

I am website developer.

Check Also

অযু ভঙ্গের কারন, দলিলসহ জানুন (নাজমুল আযম শামীম)

অযু ভঙ্গের কারন, দলিলসহ জানুন (নাজমুল আযম শামীম) Download Premium WordPress Themes FreeDownload WordPress Themes …

মানুষ তৈরির ছয়টি পর্যায়, (নাজমুল আযম শামীম)

মানুষ তৈরির ছয়টি পর্যায়, (নাজমুল আযম শামীম) Download Premium WordPress Themes FreePremium WordPress Themes DownloadDownload …

সিরাতে রাসুল (সঃ) বা রাসুল (সঃ) এর ধারাবাহিক জীবনী

সুরাতে রাসুল (সঃ) দেখে নিন এবার রাসুল স: এর সিরাত নিয়ে আলোচনা করবো। পুরুষ্কার প্রাপ্ত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *