আমাদের বেশিরভাগেরই ইমান দুর্বল, আজকে জানবো কোন লক্ষণগুলো দেখলে সহজে বুঝা যাবে যে, আমার বা তাদের ইমান দূর্বল। দুর্বল ঈমানের লক্ষণ গুলো হলো নিম্মরুপঃ
গুনাহ করার পর সে যে অপরাধ করেছে এরকম মনে হবে না।
আমাদের সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি যে, তারা গুনাহ করার পর সেটাকা গুনাহ মনে করেনা। অনেকেই আবার গুনাহ করে অনন্দিত হয়। ১৯৯৮ সালের কথা। পত্রিকা মারফত একদিন জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জসীমউদ্দীন মানিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনে মিষ্টি বিতরণ করছে! তার মূল পরিচয় তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ছিল। বন্ধবান্ধব নিয়ে ফুর্তির অনুষ্ঠান করেছে। কত জঘন্য কাজ, কিন্তু তার কাছে ধর্ষনের গুনা আনন্দের মনে হয়েছে।
অলসতা কাজ করবে।
আজ আমরা কিছু সময় নামাজ পড়লেও কিছু সময় নামাজ ছেড়ে দিয়ে থাকি, আমাদের ভিতরে অলসতা কাজ করে। এটি আমাদের ইমান দুর্বল হওয়ার লক্ষণ।
আল্লাহ তায়াল বলেন, সুরা নিসা-১৪২
وَ اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی
আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়
সুন্নত পালনে অবহেলা।
আমাদেরকে রাসুল (সঃ) এর কোন সুন্নতের কথা সহী হাদিস থেকে বলা হলেও আমরা পূর্বের সিন্ধান্তে অটল থাকি। যদি কোন আমল আমরা যেভাবে পালন করতেছি, তার বিপরীত বা তার চেয়ে উন্নত কোন পন্থা সহী হাদিস থেকে পাওয়া যায় তখন আমরা তা মেনে নিতে পারিনা। এর কারন আমাদের ইমান দূর্বল। আমাদের সমাজে এমন মানূষও আছে যাদের কে বুখারী ও মুসলিম শরীফ থেকে সহি হাদিস দেখালেও তারা বলে, আমাদের বাপ দাদারা যেভাবে আমল করেছে আমরাও সেভাবে আমল করবো। এই হাদিস মানা যাবেনা, এটি আমাদের মাযহাব বা মতের সাথে মিলেনা।
মন ও মেজাজ খারাপ থাকবে
যাদের ইমান দূর্বল, তাদের অধিকাংশ সময় মন ও মেজাজ খারাপ এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকে, তারা কি করবে না করবে সর্বদা চিন্তিত থাকে। আল্লাহ তাদেরকে সর্বদা পেরেশানির মধ্যে নিমজ্জিত রাখবেন। তাদের মনে কোন শান্তি থাকবেনা। তারা শান্তির খুজে ব্যাকুল থাকবে।
আল্লাহর নাম স্মরণ করা কঠিন মনে হবে।
আমাদের প্রতিটি কাজ করার সময় আল্লাহর নাম স্বরন থাকলে, আমার মনে হয় কোন সুষ্ঠ মানুষ দ্বারা পাপ কাজ সংঘটিত হতে পারেনা। যাদের ইমান আছে তাদের মনে যদি আল্লাহর আযাবের কথা স্বরন হয় তাহলে পাপ কাজ সামনে আসলে আমাদের মন কেপে উঠে। আল্লাহর নাম স্বরন করা যদি আপনার কাছে কঠিন মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ইমান দূর্বল। যাদের ইমান দূর্বল হবে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে যাবে তাদের আল্লাহর নির্দেশ পালন করা, তার কিতাব পড়া, ও আল্লাহর নির্দেশ মত চলা। ঐ লোকদের মন চাইবে না যে তারা তাল্লাহর পথে সময় ব্যয় করবে।
দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ আর সম্মানের ইচ্ছা হবে।
যাদের ইমান দূর্বল, তারা সর্বদা টাকা পয়সার দিকে ছুটাছুটি করে। তাদের আরো টাকা লাগবে, যার একটি বাড়ি আছে তার আরো একটি বাড়ি লাগবে, যার একটি গাড়ি আছে, তার আরো একটি গাড়ি লাগবে, যার যত আছে তার আরো বেশি লাগবে। এই যে দুনিয়ার লোভ তাকে ঘিরে ফেলেছে। যার দুর্বল ইমান, সে সর্বদা নিজে কে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিজে আরো কিভাবে দুনিয়ার মানুষের কাছে পরিচিত করা যায়, আরো কিভাবে সম্মান বাড়ানো যায়, পক্ষান্তরে তাদের সম্মান বাড়ানো দ্বায়িত্ব আল্লাহর হাতে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা ইমরান আয়াত-২৬
قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
বলুন, ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে।(১) নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান
অন্যের ইসলাম পালনকে অবজ্ঞা এবং তিরস্কার করা।
আমাদের সমাজে দেখা যায় কিছু লোক রয়েছে, যারা নিজেরা সঠিক ভাবে ইসলাম পালন করেনা
এবং তার পাশবর্তী অন্য কেউ ইসলাম পালন করতে চাইলে তাকে নিয়ে তিরিস্কার করে। তারা
বাজে কমেন্ট এর মাধ্যমে তাকে অবজ্ঞা করে। তারা মনে করবে তারা যেভাবে চলতেছে সেটাই
সঠিক পথ। তারা অন্য কারো মাঝে ইসলামের কোন সুন্নত পালন করতে দেখলে বলবে এগুলো আবার কি? যা আমাদের বাপদাদারা তো পালন করেনি। আমরাও এগুলো পালন করবোনা, তোমরা ভুল করতেছো। আসলেই তারাই ভুল পথে আছে, তারা কুরআন ও হাদিস নিয়ে গবেষণা করেনা। এদের ইমান দূর্বল।
যাদের মাঝে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যাবে বুঝতে হবে তাদের ইমান দূর্বল হয়ে গেছে।