ঈমান বৃদ্ধির উপায়
১। নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
সুরা হুদ আয়াত ৩
وَّ اَنِ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ
তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর
আমরা যত বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবো তত বেশি আমাদের ইমান বৃদ্ধি পাবে। তাই ইমানকে বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহ কাছে আমাদেরকে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আমরা ইস্তেগফারের সাথে লেগে থাকবো।
আমার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলঃ
প্রিয় বন্ধুরা হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর জমানায় সেই জমানায় তিনি অনেক বড় আলেম একজন প্রখ্যাত প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন এবং তিনি অনেক বড় একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। তো এই বুজুর্গ তিনি হাদীস সংগ্রহের কাজে দেশ-বিদেশে সফর করতেন বিভিন্ন জায়গায় দেশ থেকে দেশান্তরে গিয়ে তিনি হাদীস সংগ্রহ করতেন। তিনি একদিন হাদীস সংগ্রহের কাজে তার ঘর থেকে বাহির হয়ে তিনি রওনা করলেন পথিমধ্যে তিনি একটি মসজিদে এশার নামাজ পড়লেন এশার নামাজ আদায় করার পরে তো বাইরে ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা কনকনে শীতের দিন শীতের রাত। তো তিনি চিন্তা করলেন যে আমি মসজিদে রাতটা পার করেই সকাল বেলা আমি আবার আমার কাজে রওনা হয়ে যাব। তো তিনি এশার নামাজের পরে তার ব্যাগ থেকে কাঁথা বাহির করে সুবার জন্য বন্দোবস্ত করতে লাগলেন এমতাবস্থায় সেই মসজিদের খাদেম এসে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে নিসেধ করলেন তিনি বললেন যে এখানে ঘুমানো যাবে না মসজিদে ঘুমানো যাবে না তিনি কিন্তু ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে চিনতেননা এজন্য তিনি সেখানে তাকে থাকতে দেননি।
তো আল্লার অলি মসজিদ থেকে বাহির হয়ে আবার সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন এবং কোথায় রাতটা যাপন করা যায় এটা ভাবতে ভাবতে দেখলেন যে একজন রুটিওয়ালা যুবক একটা চুলার মধ্যে সে রুটি ভাজতেছে তো আল্লার অলি চিন্তা করলেন যে এই যুবকের কাছে তার চুলার
সামনে যদি আমি রাতটা কাটিয়ে দেই সেখানে বসে বসে তাহলে সে রুটি ভাজতেছে চুলার মধ্যে সেখান থেকে আমি কিছু উষ্ণতা অনুভব করব সেখানে আমার একটু শরীরটা গরম থাকবে এবং আমার রাতটা অনেক ভালো কাটবে। তিনি সেই যুবকের কাছে গেলেন যাওয়ার পরে সালাম দিলেন আসসালামুয়ালিকুম রহমাতুল্লাহ সালাম গ্রহণ করল ওয়ালাইকুমুসসালাম রাহমাতুল্লাহ তো আল্লাহর অলি বললেন যে বাবা আমি তো একজন মুসাফির আমি তো একজন পথিক তো আমার রাত্রে থাকার জায়গা নাই তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে তোমার চুলার সামনে আমি একটু বসে রাতটা কাটিয়ে দিতে চাই তো যুবক হেসে হেসে বলল যে এটা তো আমার খোশ নছীব যে আপনি আমার চুলার সামনে বসে রাত কাটাতে চান একজন মুসাফির মানুষ। তো সেই যুবক আহলান সাহলান বলে এই আল্লাহর অলি কে ওখানে বসার জন্য ওখানে অবস্থান করার জন্য সম্মতি দিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) তার চুলার সামনে বসে বসে তার কর্মকান্ড গুলো দেখতেছিলেন। তো সে যে চুলের মধ্যে রুটি ভাজতেছে রুটির খাম্বির যখন সে দলতেছে তখনও সে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেছে আবার যখন ভাজতেছে তখন আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতাছে ইস্তিগফার পাঠ করতেছে আবার যখন রুটি উঠাচ্ছেন তখনও শে আস্তাগফিরুল্লাহ পাট করতেছে যখন সে কাস্টমারের কাছে তার রুটি বিক্রি করতেছে তখনও সে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেছে আবার যখন কাস্টমার এর কাছ থেকে মূল্য বিনিময় গ্রহণ করতেছে তখনও সে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেছে তো সবসময় সে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেছিল ইস্তিগফার পাঠ করতেছিলো তখন আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) ওই যুবককে জিজ্ঞাসা করলো যে বাবা তুমি তো সব সময় ইস্তিগফার পাঠ করতেছ, কেন তুমি এভাবে সব সময় ইস্তিগফার পাঠ করতেছো? তো সেই যুবক উত্তর দিলো যি হুজুর এই ইস্তিগফার সব সময় পাঠ করার কারণে আল্লাহ তাআলা আমাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়া হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। আমি যখনই কোন দোয়া করি আল্লাহতালা সাথে সাথে আমার দোয়া কবুল করেনেন। আমার জিন্দেগীতে আমি যতগুলো দোয়া করেছি আল্লাহতালা আমার সমস্ত দোয়া কবুল করে নিয়েছেন তবে শুধু একটা দোয়া আল্লাহ কবুল করেননি তো আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) অবাক হয়ে গেল! তিনি বলল যে বাবা তুমি সত্যি মুস্তাজাবুদ দাওয়া? আচ্ছা তোমার কোন দোয়াটা কবুল হয় নাই সেটা আমাকে একটু বলতো আসলে এই আল্লাহর অলির তখনই আগ্রহটা বেড়ে গেল ওই যুবক সম্পর্কে যখন তিনি জানতে পারলেন যে হচ্ছে মুস্তাজাবুদ দাওয়া।
তখন সেই যুবক আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে বলল যে হুজুর আমার যে দোয়াটি আল্লাহতালা কবুল করেনি এখন পর্যন্ত সেই দুয়াটি হল এই যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) আমি তার সাক্ষাৎ পেতে চাই তার দেখা পেতে চাই তার হাতে হাত রেখে মুসাফাহা করতে চাই এবং তার কাছ থেকেই আমি দোয়া পেতে চাই এবং তার দোয়া নিয়ে আমি মৃত্যুবরণ করতে চাই। কিন্তু হুজুর এখনো পর্যন্ত আমি আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর দেখা পাইনি সাক্ষাৎ
পাইনি তার সঙ্গে মুসাফাহা করতে পারিনি এই দোয়াটি আল্লাহতালা আমার কবুল করেননি।
তখন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললো বাবা তোমার জীবনের যতগুলো দোয়া আল্লাহ সবগুলো কবুল করেছেন আর তুমি যে আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলে তার হাতে হাত রেখে মুসাফাহা করতে চেয়েছিলে তার কাছ থেকে দোয়া চাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলে সেটার জন্য আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর দরবারে তোমাকে যেতে হয় নাই আল্লাহতালা আহমদ ইবনে হাম্বল কে তোমার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে আমি আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)।
প্রিয় বন্ধুগণ এই ঘটনা থেকে আমরা কি বুঝলাম এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝলাম যে আসলেই ইস্তিগফারের আমল নিয়মিতভাবে করলে সব সময়ের জন্য হার হালতে ইস্তিগফার পাঠ করলে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন মুস্তাজাবুদ দাওয়া হিসেবে কবুল করেনেন এবং সেই ব্যক্তির সমস্ত দোয়া আল্লাহ তালা কবুল করেনেন।
বুখারী শরীফ (তাওহীদ প্রকাশনী) এর ৬৩০৭ নং হাদীসে এসেছেঃ
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ قَالَ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)
২। সময়মত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে।
সুরা আনকাবুত আয়াত ৪৫
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ
নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।
সালাত সম্পর্কে আরো বলা হয়াছে, শুধু মাত্র সুরা বাকারায়- ০৩, ৪৩, ৪৫, ১১০, ১৫৩, ২৩৮, ২৭৭ নং আয়াতে এছাড়া আরো অনেক জায়গায় বলা হয়েছে।
কেউ আমাকে প্রশ্ন করতে পারে আমাদের সমাজে অনেক মানুষতো নামাজ পরে কিন্তু তার দ্বারা অন্যায় কাজ সংগঠিত হয়, যেমন সে ওজনে কম দেয়, মিথ্যা কথা বলে, চুরি করে, অন্য মানুষ কে ধোকা দেয়, অন্যের হক লুন্ঠন করে, অন্যের প্রতি যুলুম করে প্রমুখ।
তার উত্তর আমি নাজমুল আযম এই ভাবে দিতে পারি যে, তার নামাজ হয়না। এখন আপনি হয়তো বলবেন কি বলেন সে কত সুন্দর করে নামায পড়ে, জামায়াতের সাথে ০৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে, আপনার কথা যদি সত্য হয় তাহলে আল্লাহ কথা কি মিথ্যা হবে, নাউযুবিল্যাহ।
আল্লাহ বলেছেন সুরা আনকাবুত আয়াত ৪৫
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ
নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।
আল্লাহ কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। তাহলে সমস্যা কোথায়? তার উত্তর হবে তার নামায রাসুল (সঃ) এর শিখানো পদ্ধতিতে হয়না। রাসুল (সঃ) বলেছেন-
صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي
তোমরা নামায পড় সেইভাবে যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ। সহী বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হাদিস- ৬৩১
তারা রাসুল (সঃ) এর শিখানো পদ্ধতিতে নামায আদায় করেনা। রাসুল (সঃ) এর শিখানো পদ্ধতিতে নামায আদায় করতে হলে আমি একটি বই পড়ার পরামর্শ দিতে পারি। বইটির নাম
রাসুল (সঃ) এর সালাত, লেখকঃ আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী,
বইটিতে রেফারেন্স সহকারে রাসুল (সঃ) নামাযের সঠিক পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
৩। নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত করা
সুরা তওবা আয়াত ১২৪
وَ اِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَۃٌ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّقُوۡلُ اَیُّکُمۡ زَادَتۡهُ هٰذِهٖۤ اِیۡمَانًا ۚ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فَزَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ هُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ
আর যখনই কোন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল?(১) অতঃপর যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়।
আমরা অনেকে এখন কুরআন কে শুধু রিডিং পড়ি, এর থেকে কোন শিক্ষা নেই না। শুধু রিডিং পড়লে আপনি সওয়াব পাবেন বটে কিন্তু এই কুরআন শুধু রিডিং পড়ার জন্য আসেনি। এই কুরআন হলো একটি সংবিধান। মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু এই কুরআনের মধ্যে আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। আমরা তা বুঝে পড়ার চেষ্টা করিনা, বিধায় আমাদের জীবন চলার সকল সমস্যার সমাধান পায়না।
আমরা অনেকে বলে থাকি কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে, এই ভাষা আমরা বুঝিনা, তাই কুরআনের অর্থ না বুঝার কারনে আমাদের সংবিধান জানিনা। এখন আপনাকে প্রশ্ন করি, মনে করুন আপনার খুব ভালো একজন বন্ধু যাকে ছাড়া আপনি একমুহুর্ত থাকতে পারেননা, সে ইংল্যান্ডে চলে গেছে, বহুদিন পরে আপনার বন্ধু আপনাকে একটি ইংরেজীতে চিটি বা ই-মেইল
লিখল। এখন আপনি ইংরেজী ভাষা বুঝেননা, আপনি এখন কি করবেন? চিটি টা পড়া বাদ দিয়ে এড়িয়ে যাবেন নাকি আপনার প্রিয় বন্ধু যাকে ছাড়া আপনি অসহায় ছিলেন তার লেখা চিটি, যেভাবে হোক এটাকে পড়ার ব্যবস্থা করবেন। হয় আপনি ইংরেজী ভাষা শিখে চিটি পড়বেন না হয় যে ব্যক্তি ইংরেজী ভাষা জানে তার কাছে নিয়ে যাবেন একটু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন আপনিই বলুন, একজন মুসলমানে সবচেয়ে আপন, প্রিয় ও ঘনিষ্ট বন্ধু কে? উত্তর হবে আল্লাহ। তাহলে আমাদের আল্লাহ আমাদেরকে একটা চিটি বা সংবিধান দিয়েছে তা পড়া দরকার কিনা না ভাষা না বুঝার অযুহাত দিয়ে এড়িয়ে যাবো। যদি আপনি এড়িয়ে যান তাহলে ধরে নিবেন আপনি আল্লাহর প্রিয় বন্ধু বা বান্দা হতে পারেননি। তাই আমি বলবো আমাদের উচিত কুরআন শুধু রিডিং পড়া নয়, কুরআন এর প্রতিটি লাইনে, প্রতিটি শব্দে আমাদের জন্য কি নির্দেশন রয়েছে তা বুঝে পড়তে হবে।
এখন বাজারে কুরআনের অর্থসহ বই পাওয়া যায় আমরা সেগুলো কিনে পড়তে পারি। ইনশাল্লাহ এইভাবে বুঝে কুরআন পড়লে আমাদের ইমান বৃদ্ধি পাবে।
৪। সর্বদা মৃত্যুর কথা স্বরন করা
আমাদের প্রত্যেককে মরতে হবে। মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সুরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে বলেন,
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ
প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।
মৃত্যু অবশ্যই আসবে, মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু কী আছে এই পৃথিবীতে? জীবনের মোহে পড়ে আমরা বেশিরভাগ সময়েই মৃত্যুর মতো অবধারিত সত্য ভুলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ি। মৃত্যুকে স্মরণ মানুষকে পাপকর্ম থেকে বাঁচায়। আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে সহায়তা করে। মনকে নরম করে। ইবাদতে আসে একনিষ্ঠতা। এমন কেউ কি আছে, যে মৃত্যুকে ভয় পায় না? মৃত্যুর স্মরণে মনটা কেঁপে ওঠে না? মৃত্যুকে স্মরণের কথা রাসুলুল্লাহর (সা.) একাধিক হাদিসে বলা হয়েছে। সাহাবিরা মৃত্যুকে স্মরণে হাউমাউ করে কাঁদতেন। আল্লাহপ্রেমে মশগুল মানুষমাত্রই মৃত্যুর স্মরণে ভীত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (তাহকীককৃত তিরমিজি-২৩০৭)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ “ . يَعْنِي الْمَوْتَ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারীর অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ কর।
প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা স্মরণ করা দরকার এ জন্য যে, প্রথমত এটা পাপকর্ম থেকে বিরত রাখবে। দ্বিতীয়ত, বান্দা যখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, তখন পরকালের পাথেয় সংগ্রহে
তৎপর হবে।
প্রত্যেকেরই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এটা এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক হবে না। কখন মৃত্যু আসবে, মানুষ জানে না। মানুষ যেন মৃত্যুকে ভুলেই থাকে। দুনিয়ার আরাম-আয়েশের পেছনে ছুটে চলা দেখলে তো তাই মনে হয়। দুনিয়ায় মানুষের যত কর্ম, সবই সেদিন প্রকাশিত হবে। কোনো কিছুই সেদিন আর গোপন থাকবে না। আমরা কেন ভুলে যাই- দৃশ্য-অদৃশ্য যা কিছু হয়; সবই আল্লাহপাক দেখেন। মানুষের মনের কথাও আল্লাহপাক জানেন। মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। এই চিন্তাটুকু মাথায় থাকা জরুরি। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে-(সুরা জুমআ-৮)।
قُلۡ اِنَّ الۡمَوۡتَ الَّذِیۡ تَفِرُّوۡنَ مِنۡهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِیۡکُمۡ
হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করতে চাও, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের কাছে পৌঁছবে।
তাই মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্বরন করলে আপনার ইমান বেড়ে যাবে।
৫। ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা
পবিত্র কুরআনের সুরা যুমার আয়াত-০৯ বলা হয়েছে
قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
বলুন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’
আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাত। জন্মগতভাবে অন্য প্রাণিদের মতো-ই প্রাণি। তবে অন্যান্য প্রাণি ও আমাদের মাঝে পার্থক্য হলো, ‘জ্ঞান থাকা’ বা ‘না থাকা’। আমাদের খেয়ে-ধেয়ে শুধু জীবনযাপন করলেই হয়না, অর্জন করতে হয় জ্ঞান, হতে হয় জ্ঞানী। আর আমাদের আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয় হলো, আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের ধর্ম ইসলামে প্রতিটি মানুষকে বলা হয়েছে জ্ঞান অর্জন করার কথা।
পবিত্র কুরআনের প্রথম যে আয়াতটি নাযিল হয়েছে সে আয়াতটি জ্ঞান অর্জন করতে বলেছে, আল্লাহর প্রথম নির্দেশ হলো সুরা আলাক -০১
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ
পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল্লাহর প্রথম নির্দেশ যদি আমরা অমান্য করি, তাহলে পরবর্তী নির্দেশ আমরা যে পালন করছি তার কি গেরান্টি আছে। তাই আল্লাহর প্রথম নির্দেশ পালন করতে হবে আমাদেরকে পড়তে হবে এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যত বেশি আপনি জ্ঞান অর্জন করবেন তত বেশি আপনার ইমান বেড়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।