রসুলের (সঃ) এর জীবনী সম্পর্কে জানা সকল মুসলমানের জন্য কর্তব্য।
বংশ পরিচয়ঃ
রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ সারা বিশ্বের সেরা ও উত্তম বংশ। আপন পর সবাই অকপটে তা স্বীকার করত। আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোচ্চ বংশোদ্ভত হওয়ার দিকে ইঙ্গিঁত করে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাঁর রিসালত বা পয়গামের দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞাত।” (সূরা আন আমঃ ১২৪)
নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেনঃ “আমি বনী আদমের সর্বোত্তম বংশে প্রেরীত হয়েছি। আমার যুগই সর্বশেষ্ঠ যুগ।”(সহীহ আল বুখারীঃ ৪/১৫১)
পবিত্র বংশধারাঃ
রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বংশধারা নিম্নরূপঃ
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) ইবনে আব্দিল্লাহ, ইবনে আব্দিল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আব্দিমানাফ, ইবনে কুছাই, ইবনে কিলাব, ইবনে মুররাহ, ইবনে কাআ’ব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফেহের (কুরাইশ), ইবনে মালিক, ইবনে নযর, ইবনে কিনানা, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে মুদরিকাহ, ইবনে ইলিয়াস, ইবনে মুদ্বার, ইবনে নাযার, ইবনে মাআ’দ, ইবনে আদনান, ইবনে আদু, ইবনে মাইসা’, ইবনে সালামান, ইবনে এওয়ায, ইবনে বূয, ইবনে ক্বামওয়াল, ইবনে উবাই, ইবনে আওয়াম, ইবনে নাশিদ, ইবনে হাযা, ইবনে বিলদাস, ইবনে ইয়াদলাফ, ইবনু ত্বাবিখ, ইবনু জাহিম, ইবনু নাহিশ, ইবনু মাখী, ইবনু আইফী, ইবনু আবকার, ইবনু উবাইদ, ইবনু আলদুআ’, ইবনু হামদান, ইবনু সাবজ, ইবনু ইয়াসরাবী, ইবনু ইয়াহযান, ইবনু ইয়ালহান, ইবনু আরআওয়া, ইবনু আইফা, ইবনু যীশান, ইবনু আইসার, ইবনু আকনাদ, ইবনু ইহাম, ইবনু মুকছির, ইবনু নাহিছ, ইবনু যরাহ, ইবনু সুমাই, ইবনু মযযী, ইবনু ইওয়ায, ইবনু আরাম, ইবনু কায়দার, ইবনু ইসমাঈল, ইবনু ইবরাহীম, ইবনু তারা (আযর), ইবনু নাহুর, ইবনু সারুজ, ইবনু রাঊ, ইবনু ফাইজ, ইবনু আবির, ইবনু আরফাকশাও, ইবনু সাম, ইবনু নূহ, ইবনু লামক, ইবনু নাতুশাইহ, ইবনু আখনূ’, ইবনু ইদ্রিস, ইবনু ইয়ারিদ, ইবনু মালহালঈল, ইবনু কায়নান, ইবনু আনূশ, ইবনু শীছ, ইবনু আদম আলাইহিসসালাম। -(রাহমাতুল্লিল আলামীন, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ২৫-৩১, কাজী মুহাম্মদ সুলাইমান মনছুরপূরী)
হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা পিতা পর্যন্ত নারী পুরুষের যতগুলি স্তর রয়েছে প্রত্যেক স্তরের প্রতিটি নারী ও পুরুষ সৎ ও পবিত্র ছিলেন। কেউ কখনো ব্যবিচারে লিপ্ত হন নি। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি বিবাহের মাধ্যমে জন্ম গ্রহন করেছি, ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমার পিতা মাতা পর্যন্ত কোন নারী পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হননি। আর জাহেলী যুগের ব্যভিচার আমাকে ছুয়েঁ নি।” (ইরওয়াউল গালীলঃ ১৯৭২, সহীহুল জামিউস্ সাগীরঃ ৩২২৫।)
আব্দুল্লাহ ও আমেনাঃ
কুরাইশ সর্দার আব্দুল মুত্তালিবের ছিল দশ পুত্র। এদের সকলেই ছিলেন বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান। তাঁর সকল পুত্রের মধ্যে আব্দুল্লাহ খুবই প্রশংসনীয় গুণাবলী ও কেন্দ্রীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর পিতা বিয়ে দিয়েছিলেন বনূ যুহরার সর্দার ওহাব এর কন্যা আমেনার সঙ্গেঁ, যাঁকে সে সময় উচ্চ বংশ, সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কুরায়শদের ভিতর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলা মনে করা হত।
রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি সিরিয়া সফর থেকে ফেরার পথে মদীনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তথায় মৃত্যু বরণ করেন। ‘দার আল্ নাবেগা আলজা’দী’ নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, ছফীউররাহমান মুবারকপুরী, পৃঃ ৫৩।) হযরত আমেনা তাঁর জন্মের পূর্বেই এমন বহু নিদর্শন দেখতে পান যাদ্বারা বোঝা যেত যে, তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ অত্যুজ্জল ও মর্যাদাকর হবে।” (নবীয়ে রহমত- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী- ১১৩)
জন্মঃ
রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ হস্তি বাহিনীর অভিযানের বছর প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ মুতাবিক ৫৭০ খৃষ্টাব্দ শুক্রুবার দিন সকালে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি ছিল মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকোজ্জল ও বরকতময় দিন।
উল্লেখ্য যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে বিদ্বান গণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইতিহাস গ্রন্থসমূহে অনেক উক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী বলেনঃ “ইমাম মালিক ও অন্যান্য মুহাদ্দিসরা মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুত্ইম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল, রবিউল আওয়ালের ৮ তারিখ। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মূছা আল খাওয়ারযমী এউক্তিকে অকাট্য বলেছেন। আর ইবনে দেহয়াহ এউক্তিকে প্রধান্য দিয়েছেন।”(সহীহুস সীরাতিন নববীয়্যাহ, টীকা, পৃঃ ১৩।) মিসরের প্রসিদ্ধ গণিতশাস্ত্র বিশারদ মাহমূদ পাশা একটি পুস্তিকা রচনা করেন যাতে তিনি গণিত বিদ্যার অকাট্য দলীল প্রমাণাদী দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল রবিউল আওয়ালের ৯ তারিখ মুতাবিক ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল। (সীরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী পৃঃ ১০৮)
নাম করণঃ
হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হতেই মা আমেনা এসংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পেতেই তিনি ছুটে আসেন, পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। আরবে এনাম ছিল একেবারেই নতুন। ফলে লোকেরা খুব বিস্মিত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশামঃ ১/১৫৯-৬০, ইবনু কাছীরঃ ১/২১০।)
যুবাইর ইবনে মুতায়িম থেকে বর্ণিত রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি মুহাম্মদ, আহমদ, হাশির, আকিব, মাহি এবং খাতম।” (মুসনাদে আহমদঃ ৪/৮১,৮৪/ ১৬৮৬৯,১৬৮৯২।)
মদীনার সফরঃ
রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ছয় বছর চলছিল তখন মা আমেনা তাঁকে নিয়ে মদীনা সফর করলেন। সাথে ছিল উম্মে আয়মান বারাকা নামে একজন হাবশী দাসী। ‘ইয়াছরিব’ তথা মদীনা শরীফের নাজ্জার গোত্র ছিল তাঁর দাদার মাতৃকুল। আর রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ এর কবরও ছিল তথায়। মা আমেনা তাঁর শিশুকে নিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত মদীনায় অবস্থান করেন। (সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলী)
দাদার স্নেহ ছায়ায়ঃ
তখন থেকে পিতা মাতা হারা এই শিশু দাদার স্নেহ ছায়ায় লালিত পালিত হতে থাকে। দাদা তাঁকে মন প্রাণ দিয়ে চাইতেন, ভালবাসতেন এবং ক্ষণিকের তরেও তিনি তাঁর এই এতীম পৌত্র সম্পর্কে গাফেল হতেন না।
দাদার ইন্তেকালঃ
দুই বৎসর পর্যন্ত হযরত দাদা আব্দুল মুত্তালিব স্বীয় পৌত্র মুহাম্মাদ (সা) কে অতি আদর যত্নের সহিত লালন পালন করেন। যখন তাঁর বয়স আট বছরে উপণিত হয় তখন তাঁর দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব বিরাশী বছর বয়সে ইহদাম ত্যাগ করেন।
চাচা আবু তালিবের দায়িত্বেঃ
তাঁর দাদা ইন্তেকালের সময় নিজ পুত্র আবু তালিব কে পৌত্র মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অছিয়ত করে যান এবং তাঁকে লালন-পালন করার দায়িত্ব দিয়ে যান। হযরত আবু তালিবও তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়েও বেশী মায়া দিয়ে লালন-পালন করতে থাকেন।
খদীজা (রাঃ) এর সঙ্গেঁ বিবাহঃ
যখন তিনি পঁচিশ বছর বয়সে উপনীত হলেন তখন হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়ায়লিদ এর সঙ্গেঁ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরত খদীজা কুরায়শ গোত্রের খুবই প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন এবং বোধ শক্তি, দুরদর্শিতা, মহান চরিত্র ও ব্যবহার, অধিকন্তু ধন সম্পদের দিক দিয়েও খ্যাতনাম্নী ছিলেন।
বিয়ের সময় মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল পঁচিশ বছর আর হযরত খাদীজার বয়স ছিল ৪০ বছর। আবু তালেব বিয়ের খুতবা পাঠ করেন এবং এখান থেকেই তাঁর দাম্পত্য জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর সন্তান ইব্রাহীম ছাড়া আর সকলেই ছিলেন হযরত খাদীজার গর্ভজাত। (সীরাত ইবনে হিশামঃ ১/১৮৭-৯০, ইবন কাছীরঃ ২৬২-৬৫, নবীয়ে রহমত পৃ ১২০, ১২১।)
কা’বার নব নির্মাণ এবং একটি বিরাট ফেতনার অবসানঃ
রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর, তখন কুরায়শরা নতুন ভাবে কা’বা শরীফ নির্মাণ করতে চাইলেন এবং এর উপর ছাদ ঢালাইয়ের মনস্থ করলেন। দেওয়াল যখন উঁচু করে হাজরে আসওয়াদের উচ্চতা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল তখন হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরায়শ নেতৃবর্গের মধ্যে বিরাট মতানৈক্য দেখা দিল। প্রতিটি গোত্রই চাচ্ছিল যে, তার গোত্রই এই সৌভাগ্য লাভ করুক এবং তারা এই পাথর উঠিয়ে তার সঠিক স্থানে স্থাপন করুক। মতানৈক্য বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে তা যুদ্ধ বিগ্রহে উপণীত হবার উপক্রম হল। মোট কথা যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হল। কুরাইশরা কয়েকদিন যাবত এই সংকটের মাঝে কালক্ষেপণ করল। অতঃপর সকলেই এ বিষয়ে একমত হল যে, যে ব্যক্তি অমুক দিন প্রথম প্রবেশ করবে সে এ ব্যাপারে ফায়সালা প্রদান করবে। অনন্তর সর্বপ্রথম রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম প্রবেশ করেন। তাঁকে প্রবেশ করতে দেখেই সবাই সমস্বরে চেচিয়ে উঠে, এই যে আমাদের ‘আল আমীন’ আসছেন। আমরা তাঁর ফয়সালায় রাজী আছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক গোত্র থেকে এক একজন সর্দার নির্বাচন করলেন এবং একটি চাদর বিছিয়ে নিজ হাতে পাথরটি চাদরের উপর রাখলেন এবং প্রত্যেক গোত্রের সর্দারকে চাদরের পাশ ধরতে বললেন। তারপর যখন সবাই উঠালেন তখন তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদকে তার বর্তমান স্থানে রেখে দিলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৪)
নুবুওয়াত লাভঃ
চল্লিশের কাছাকাছি সময়ে একাকিত্ব ও নির্জনতা প্রিয়তা তাঁর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তিনি সকলের থেকে আলাদা হয়ে নিঃসঙ্গঁ অবস্থানে বিরাট তৃপ্তি ও শান্তি পেতেন। তিনি মক্কার বিভিন্ন ঘাঁটি ও উপত্যকাসমূহ যখন অতিক্রম করতেন তখন গাছ পালা ও প্রস্তর মালা থেকে শব্দ ভেসে আসত ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ ’। (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসূল।) তিনি ডানে বামে ঘুরে তাকাতেন কিন্তু গাছপালা ও প্রস্তুর খন্ড ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। তিনি বলেছেনঃ আমি সেই পাথরকে এখনো চিনি যা আমাকে নবী হওয়ার আগে থেকে সালাম করত। (সহীহ মুসলিম।)
এসময় তিনি নিজের মধ্যে এক ধরণের অদৃশ্য ও অনিশ্চিত অস্থিরতা অনুভব করতেন। আল্লাহ তাআলা এব্যাপারে বলেছেনঃ “এভাবে আমি তোমার প্রতি ওহী (প্রত্যাদেশ) করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ। তুমি তো জানতেনা কিতাব কি এবং ঈমান কি। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যাদ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকে আহবান করবে”। (সূরা শুরাঃ ৫২।)
অন্যত্র বলেনঃ “তুমি আশা করনি যে তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ হবে। এতো কেবল তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং তুমি কখনো কাফিরদের সহায় হয়োনা”। (সূরা কাসাসঃ ৮৬।)
হেরা গুহায় জৌতির সাক্ষাৎ
বেশীর ভাগ সময় তিনি মক্কার প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘জাবালে নূরে’ অবস্থিত ‘গারে হেরা’ তথা হেরা গুহায় অবস্থান করতেন এবং উপর্যুপরি কয়েক রাত সেখানে অতিবাহিত করতেন। এর ব্যবস্থাও তিনি আগে থেকেই করে নিতেন। এভাবে একদা তিনি হেরা গুহায় তশরীফ আনেন এমন সময় তাঁকে নুবুওয়াতের পদমর্যাদা দিয়ে সৌভাগ্যবান করার পবিত্র মুহুর্ত এসে যায়। জন্মের ৪১ তম বছরে ২৭ ই রজব (হিজরতের ১৩ বছর পূর্বে) মুতাবিক ৬১০ খৃষ্টাব্দ তারিখে জাগ্রত ও চৈতন্য অবস্থায় এঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) প্রথমবারের মত তাঁর কাছে, পৃথিবীবাসীদের জন্য আল্লাহর সর্বশেষ ঐষীবাণী, বিশ্বমানবতার মুক্তির পথের দিশারী, জ্বিন ও ইনসানের জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান ‘আল্ কুরআনুল কারীম’ এর সর্বপ্রথম কথাগুলো নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন।
মি’রাজঃ
দ্বাদশ নব্বীতে মি’রাজ সংঘটিত হয়। তথায় মুসলমানদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। একই বছর হজ্জের মৌসূমে আঠার জন ব্যক্তি মদীনা থেকে মক্কা আগমন করে এবং ইসলাম প্রহণ করে। হযরত মুছ আ’ব ইবন উমায়রকে তাবলীগের জন্য পাঠান হয় মদীনায়।
হিজরাতঃ
হিজরাতের পর থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতী জীবনের শেষ পর্ব অর্থাৎ মাদানী জীবন শুরু হয়। নুবুওয়াতের ১৩ বছরে প্রায় ছাহাবীগণ ধীরে ধীরে মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে গেলেন। মহিলা এবং শিশুরা ছাড়া প্রসিদ্ধ ছাহাবীদের মধ্যে আবুবকর এবং আলী (আঃ) ব্যতীত বাকী সবাই মদীনায় হিজরাত করলেন। রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম হিজরাতের জন্য আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় ছিলেন। পরিশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে হিজরাতের জন্য অনুমতি দেয়া হল।
ইন্তেকালঃ
নুবুওয়াত লাভের পর তিনি ২৩ বছর পাঁচ দিন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে উম্মতকে দ্বীন শিক্ষা দেন। ২৮ ই সফর ৬৩ বছর বয়সে পবিত্রাত্মা শরীর থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং তিনি দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে যান। রাসুল (সাঃ) কে হযরত আলী (আঃ) গোসল দেন এবং তারপর নামাযে জানাযা পড়েন ও দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।