প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির বর্ননা
সুরা বাকারার ৩০-৩৯ নং আয়াতের ঘটনা
সুরা বাকারা আয়াত নং ৩০
وَ اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡهَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡهَا وَ یَسۡفِکُ الدِّمَآءَ ۚ وَ نَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِکَ وَ نُقَدِّسُ لَکَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ
অর্থঃ আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি। আল্লাহ বললেন, নিশ্চয় আমি তা জানি, যা তোমরা জান না
ফেরাস্তাদের সাথে আল্লাহর কথোপকথনঃ
মহান আল্লাহ্ তা’আলা যখন আদম ‘আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার প্রাক্কালে এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য তার এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করতে চাই’, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি।
এতে ইংগিত ছিল যে, তারা যেন এ ব্যাপারে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। কাজেই ফেরেশতাগণ অভিমত প্রকাশ করলেন যে, মানব জাতির মাঝে এমনও অনেক লোক হবে, যারা শুধু বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে। সুতরাং এদের উপর খেলাফত ও শৃংখলা বিধানের দায়িত্ব অর্পণের কারণ তাদের পুরোপুরি বোধগম্য নয়। এ দায়িত্ব পালনের জন্য ফেরেশতাগণই যোগ্যতম বলে মনে হয়। কেননা, পুণ্য ও সততা তাদের প্রকৃতিগত গুণ। তারা সদা অনুগত।
এ জগতের শাসনকার্য পরিচালনা ও শৃংখলা বিধানের কাজও হয়তো তারাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। তাদের এ ধারণা যে ভুল, তা আল্লাহ শাসকোচিত ভংগীতে বর্ণনা করে বলেন যে, বিশ্ব খেলাফতের প্রকৃতি ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তোমরা মোটেও ওয়াকিফহাল নও। তা শুধুমাত্র আমিই পূর্ণভাবে পরিজ্ঞাত।
ফেরেস্তাদের আপত্তির কারনঃ
এখানে প্রশ্ন জাগে যে, ফেরেশতারা কিভাবে জানতে পারল যে, যমীনে বিপর্যয় হবে? এর উত্তর বিভিন্নভাবে এসেছে।
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ যমীনে পূর্বে জিনরা বাস করত। তারা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।
ফেরেশতারা তাদের উপর কিয়াস করে একথা বলেছিলেন। আবার কারও কারও মতে, তারা মাটি থেকে আদমের সৃষ্টি দেখে বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের মধ্যে বিপর্যয় হবে। কাতাদাহ (রঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে পূর্বাহ্নে জানিয়েছিলেন যে, যমীনের বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে যদি কোন সৃষ্টি রাখা হয় তবে তারা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, রক্ত প্রবাহিত করবে।
ফিরিশতাদের এমন বলা হিংসা ও অভিযোগমূলক ছিল না, বরং সত্য ও যৌক্তিকতা জানার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সম্প্রদায় সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা কি? অথচ এদের মধ্যে এমন লোকও হবে যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি এবং খুনাখুনি করবে? যদি উদ্দেশ্য এই হয় যে, তোমার ইবাদত হোক, তাহলে এই কাজের জন্য তো আমরা রয়েছি। আর আমাদের নিকট থেকে সে বিপদের আশঙ্কাও নেই, যা নতুন সৃষ্টি থেকে হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি জানি তাদের কল্যাণের দিক যেহেতু তোমাদের উল্লিখিত ফাসাদের দিক থেকেও বেশী তাই তাদেরকে সৃষ্টি করছি। আর এ কথা তোমরা জানো না। কেননা, এদের মধ্যে আম্বিয়া, শহীদ, সৎশীল এবং বড় ইবাদতকারী মানুষও হবেন। (ইবনে কাসীর)
আবার কারও কারও মতে, ফিরিশতাদের এমন বলা হিংসা ও অভিযোগমূলক ছিল না, বরং সত্য ও যৌক্তিকতা জানার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সম্প্রদায় সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা কি? অথচ এদের মধ্যে এমন লোকও হবে যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি এবং খুনাখুনি করবে? যদি উদ্দেশ্য এই হয় যে, তোমার ইবাদত হোক, তাহলে এই কাজের জন্য তো আমরা রয়েছি। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেন قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ নিশ্চয় আমি তা জানি, যা তোমরা জান না
আদম (আঃ) সৃষ্টির উপকরনঃ
আল্লাহ প্রথম আদমের অবয়ব সৃষ্টির উপকরণ হিসেবে মাটি ব্যবহার করেন।
হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টির ৬ টি ধারাবাহিক পর্যায় পাওয়া যায়। যেমন:
১. প্রথম পর্যায় মাটি- কুরআন বলছে হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হেয়েছে মাটি থেকে।
সুরা হিজর আয়াত-২৮
وَ اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
স্মরণ কর; যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বললেন, ‘আমি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।
২. দ্বিতীয় পর্যায় ত্বীন বা খামীর- যা মাটির সাথে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। সূরা সিজদার ৭নং আয়াতে বলা হয়েছে:
وَ بَدَاَ خَلۡقَ الۡاِنۡسَانِ مِنۡ طِیۡنٍ
কাদা হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
এখানে طِیۡنٍ শব্দটি অর্থ, আল মুজামুল ওয়াফী ডিকশনারি অনুযায়ী, কাদা মাটি, নরম মাটি, কর্দম
৩. তৃতীয় পর্যায়- ত্বীনে লাসিব বা আঠাযুক্ত খামীর, যে খামীর অনেক দিন পড়ে থাকার ফলে আঠা সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ বলেন: সুরা সাফফাত আয়াত নং -১১
اِنَّا خَلَقۡنٰهُمۡ مِّنۡ طِیۡنٍ لَّازِبٍ
নিশ্চয় আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি আঠালো মাটি থেকে।
এখানে لَّازِبٍ শব্দটি অর্থ, আল মুজামুল ওয়াফী ডিকশনারি অনুযায়ী, আঠার মত লেগে থাকে এমন, আঠালো
৪. চতুর্থ পর্যায়- হামায়িন মাসনূন অর্থাৎ ঐ খামীর যাতে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন: সুরা হিজর আয়াত নং -২৬
وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে ও দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি হতে
এখানে مَّسۡنُوۡنٍ শব্দটি অর্থ, আল মুজামুল ওয়াফী ডিকশনারি অনুযায়ী, দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি
৫. পঞ্চম পর্যায়- ঐ খামীর যা গন্ধযুক্ত হওয়ার পর আদম আঃ কে বানিয়ে শুকিয়ে পোক্ত করা হয়েছে। সূরা আল হিজরের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে ও দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি হতে
এখানে صَلۡصَالٍ শব্দটি অর্থ, আল মুজামুল ওয়াফী ডিকশনারি অনুযায়ী, ঠনঠনে মাটি, শুকনো মাটি
৬. ষষ্ঠ পর্যায়- ‘বাশার’ বা মাটির চুড়ান্ত অবস্থা যাতে আল্লাহ রূহ প্রবিষ্ট করেছেন। (দ্র. সূরা ছোয়াদ, আয়াত ৭২
فَاِذَا سَوَّیۡتُهٗ وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ
অতঃপর যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো
আদম আঃ কে, আল্লাহ কি কি শিক্ষা দিলেন?
সুরা বাকার আয়াত নং-৩১
وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ کُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ ۙ فَقَالَ اَنۡۢبِـُٔوۡنِیۡ بِاَسۡمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও
কাতাদাহ (র.) বলেন, সবকিছুর নাম শিখিয়েছিলেন, যেমন এটা পাহাড়, এটা সমুদ্র, এটা এই, ওটা সেই, প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। তারপর ফেরেশতাগণের কাছে সেগুলো পেশ করে নাম জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। [ইবনে কাসীর] আর তা ছিল মূলত: সমস্ত সৃষ্টিকুলের নাম এবং তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের নাম।
বিখ্যাত শাফাআতের হাদীসেও এসেছে যে, “মানুষজন কিয়ামতের মাঠে যখন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হবে তখন আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ করে বলবে যে, আপনি সকল মানুষের পিতা, আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সাজদাহ করিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং وَعَلَّمَكَ أسْمَاءَ كُلَّ شَيْءٍ বা সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন।” [বুখারী ৪৪৭৬, বুখারী অনুবাদকৃত তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩৩৪০]
তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও
তখন তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞান নেই। আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ৩২ নং আয়াতে তা উল্লেখ করেছেন।
قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ
তারা বলল, ‘আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়
আদম আঃ সব কিছুর নাম ব্জানালেন
যখন ফেরেস্তারা কোন কিছুর নাম বলতে পারলোনা তখন আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ কে তাদের সামনে উপস্থাপন করলেন, অতঃপর যখন আদম (আঃ)-কে ঐ জিনিসগুলোর নাম বলতে বলা হল, তখন তিনি সত্বর তা বলে দিলেন। অথচ ফিরিশতাগণ তা পারেননি। এইভাবে আল্লাহ তাআলা প্রথমতঃ ফিরিশতাদের সামনে আদম সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করলেন। দ্বিতীয়তঃ দুনিয়ার নিয়ম-নীতি পরিচালনার জন্য জ্ঞানের কত গুরুত্ব এবং তার কত ফযীলত ও মর্যাদা তা বর্ণনা করে দিলেন। যখন ফিরিশতাদের সামনে (আদম সৃষ্টির) যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে গেল,
আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুরা বাকারা ৩৩ নং আয়াত
قَالَ یٰۤاٰدَمُ اَنۡۢبِئۡهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۚ فَلَمَّاۤ اَنۡۢبَاَهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۙ قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکُمۡ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ غَیۡبَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۙ وَ اَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَ مَا کُنۡتُمۡ تَکۡتُمُوۡنَ
তিনি বললেন, ‘হে আদম! ওদেরকে (ফিরিশতাদেরকে) এদের (এ সকলের) নাম বলে দাও।’ অতঃপর যখন সে তাদেরকে সে-সবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?
আদম আঃ কে ফেরেস্তাদের সম্মানের সেজদা করার নির্দেশ
অতঃপর আল্লাহ তাদের সবাইকে আদমের সম্মুখে সম্মানের সিজদা করতে বললেন। সবাই সেজদা করল, ইবলিস ব্যতীত। সে অংহকার করলো, ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
আল্লাহ তায়াল বলেন সুরা বাকারা আয়াত ৩৪
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।
তবে ফেরেস্তাগণ আল্লাহর নির্দেশে আদম (আঃ)-কে যে সিজদা করেছিলেন এবং যে সিজদা দ্বারা ফেরেস্তাদের সামনে তাঁর (আদম)এর সম্মান ও ফযীলত প্রকাশ করা হয়েছিল, সে সিজদা ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে; ইবাদতের ভিত্তিতে নয়। এখন এই সম্মান প্রদর্শনের জন্যও কাউকে সিজদা করা যাবে না। (যেহেতু এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ নেই।)
সূরা ইউসুফ-এ ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পিতা-মাতা ও ভাইগণ মিশর পৌছার পর ইউসুফকে সম্মানের তার ভাইগন সিজদা করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। সুরা ইউসুফ আয়াত ১০০
وَ رَفَعَ اَبَوَیۡهِ عَلَی الۡعَرۡشِ وَ خَرُّوۡا لَهٗ سُجَّدًا
আর ইউসুফ তার পিতা-মাতাকে(১) উঁচু আসনে বসালেন এবং তারা সবাই তার সম্মানে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।
ইবলিশ কি ফেরেস্তা ছিল?
সুরা বাকারার ৩৪ নং আয়াত অনুযায়ী, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল। এই আয়াতের কারনে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা তৈরি হয়েছে, ইবলিশ একজন সম্মানিত ফেরাস্তা যা ভুল, এতে ফেরেস্তাদের কে অবমাননা করা হয়। ফেরেস্তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সুরা আত তাহরিমে ০৬ নং আয়াতে বলেছেন
یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্ৰাপ্ত হয় তা-ই করে।
যেহুত ইবলিশ আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে তাই উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী তিনি ফেরেস্তা হতে পারেনা। তাহলে ইবলিশ কে ছিলেন? তার উত্তর আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন, সুরা কাহাফ ৫০ নং আয়াতে
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ کَانَ مِنَ الۡجِنِّ
আর স্মরণ করুন, আমরা যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমের প্রতি সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করল ইবলীস ছাড়া; সে ছিল জিন্দের একজন।
আদম আঃ এর আকৃতি কেমন
আল্লাহ্ তাআলা আদম (আঃ) কে খাসভাবে নিজহাতে সৃষ্টি করেছেন যেমনটি তিনি জানিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-[সূরা সা’দ, আয়াত: ৭৫]
قَالَ یٰۤاِبۡلِیۡسُ مَا مَنَعَکَ اَنۡ تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ ؕ اَسۡتَکۡبَرۡتَ اَمۡ کُنۡتَ مِنَ الۡعَالِیۡنَ
হে ইবলীস! আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সেজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে; নাকি তুমি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন?’
আদম আঃ এর দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ হাত, বুখারী শরীফ হাদিস নং ৬২২৭
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আঃ) (ফেরেশতাদের) বললেন, ’’আস্সালামু ’আলাইকুম’’। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে ’’আস-সালামু ’আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ’’ওয়া রহমাতুল্লাহ’’ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম (আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।
হাওয়া আঃ কে কিভাবে তৈরি করা হলো
হাওয়া আঃ কে তৈরি করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুরা নিসা আয়াত ০১
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ بَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالًا کَثِیۡرًا
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন
এই আয়াত থেকে বুঝা যায় হাওয়া আঃ কে আদম আঃ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, একটি হাদিস থেকে আরো স্পষ্ট হওয়া যায়।
আবু হুরায়রা সূত্রে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড্ডি সবচেয়ে বেশী বাঁকা, যদি তা সোজা করতে চাও ভেঙ্গে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।’ হাফেজ ইব্ন হাজার রহ. বলেন, এ হাদিস ইবনে ইসহাকও বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন- الْيُسْرَى مِنْ قَبْل أَنْ يَدْخُل الْجَنَّة ، وَجُعِلَ مَكَانه لَحْم ‘জান্নাতে প্রবেশ করানোর পূর্বে বাম পাঁজর থেকে (তাকে সৃষ্টি করা হয়), অতঃপর তার জায়গায় মাংস তৈরি করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস নং ৩৩৩১, মুসলিম, হাদিস নং ১৪৭০)
আদম আঃ কে জান্নাতে বসবাসের নির্দেশ
ফেরেস্তাদের সেজদা করার পর আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ কে জান্নাত থাকার নির্দেশ দেন,
আল্লাহ তায়ালা বলেন সুরা বাকারার ৩৫ নং আয়াতে
وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
আর আমরা বললাম, ‘হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন এবং যেখান থেকে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করুন, কিন্তু এই গাছটির কাছে যাবেন না; তাহলে আপনারা হবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ ও হাওয়া আঃ কে জান্নাতে থাকার সময় একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন, তারা গাছটির ফল খেয়েছিলেন। কিন্তু এই ফলটা কী, এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ আছে। সুস্পষ্ট কোনো দলিলের মধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়নি। সুতরাং, কেউ যদি আন্দাজ করে এমন বক্তব্য দেন, তাহলে তিনি ভুল বক্তব্য দিলেন। এতটুকু বলা যেতে পারে যে ওই নিষিদ্ধ গাছের ফল তিনি খেয়েছেন। যদি গাছটা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে আল্লাহ এই গাছের পরিচয় করে দিতেন। কোরআনের কোথাও এই গাছের কথা বলা হয়নি।
হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-কে আল্লাহ সৃষ্টি করার পর তাঁদের জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। সুতরাং, জান্নাতের গাছ আর দুনিয়ার গাছ একই নয়। তাই বলার আবকাশ নেই যে এটা কোন গাছ ছিল। আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে এমন বক্তব্য না দেওয়াই উত্তম।
পরবর্তী যুগে ইহূদীদের গল্পকাহিনীর ভিত্তিতে মুফাস্সিরগণ গন্ধক,গম, আঙুর, খেজুর… ইত্যাদি বিভিন্ন গাছের নাম বলেছেন। এগুলো সবই অনুমানভিত্তিক কথা। হাদীসে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি। মুমিনের দায়িত্ব হলো, এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, গাছের বা ফলের নাম জানা নয়। সর্বাবস্থায় এ সকল মানবীয় মতামতকে আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের (ﷺ) কথা বলে মনে করা যাবে না।
তারা উভয়ে নিষিদ্ধ গাছটির ফল খেয়েছেন
আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুরা বাকারার ৩৬ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে
فَاَزَلَّهُمَا الشَّیۡطٰنُ عَنۡهَا فَاَخۡرَجَهُمَا مِمَّا کَانَا فِیۡهِ ۪ وَ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ وَ لَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّ مَتَاعٌ اِلٰی حِیۡنٍ
অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বের করল। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শক্র রূপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে
ইবলীস এর প্রতারণা করলো এবং বলল আল্লাহ চাইনা যে “তোমরা উভয়ে ফিরিশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন” সুরা আরাফ- ২০-২১, তাই তারা দুজনেই সেই নিষিদ্ধ গাছ থেকে ফল খেলো যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে পবিত্র কুরআনে অবহিত করলো: সূরা আরাফ: আয়াত ২২
فَدَلّٰىهُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡاٰتُهُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَ نَادٰىهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡهَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَ اَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
অতঃপর সে তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বার অধঃপতিত করল। এরপর যখন তার সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু।
পবিত্র কুরআনের কোথাও এই কথা উল্লেখ নেই যে হাওয়া-ই আদম (আঃ) কে সেই ফল খেতে দিয়েছিলেন। এ তো বরং ইয়াহুদি এবং খ্রিস্টানদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সাপের সাহায্যে শয়তান হাওয়া (আঃ) কে প্ররোচিত করেছিল সেই গাছের ফলটি খেতে, নিজে খাওয়ার পর হাওয়া (আঃ) স্বয়ং তা আদম (আঃ) কে খেতে দিয়েছিলেন। তাহলে আমরা সেগুলো কোথায় ফেলাম?
একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন, বাইবেলের Old Testament-এ:
“…সেই নারী (হাওয়া) দেখল গাছটা সুন্দর এবং এর ফল সুস্বাদু, আর এই ভেবে সে উত্তেজিত হল যে ঐ গাছ তাকে জ্ঞান দেবে। তাই নারী গাছটা থেকে ফল নিয়ে খেল। তার স্বামী (আদম) সেখানেই ছিল, তাই স্বামীকেও ফলের একটা টুকরো দিল আর স্বামীও সেটা খেল।” [বাইবেল, জেনেসিস, ৩/৬]
“…আদম প্রভুকে বলল, আমার জন্য আপনি যে নারী তৈরি করেছিলেন, সেই নারী গাছটা থেকে আমায় ফল খেতে দিয়েছিল, তাই আমি সেটা খেয়েছি।” [বাইবেল, জেনেসিস, ৩/১২]
“…(সেই অপরাধের কারনে) প্রভু নারীকে বললেন, ‘তুমি যখন গর্ভবতী হবে, সেই দশাটাকে আমি দুঃসহ করে তুলব, তুমি অসহ্য ব্যথাতে সন্তানের জন্ম দেবে। তুমি তোমার স্বামীকে আকুলভাবে কামনা করবে, কিন্তু সে তোমার ওপর কর্তৃত্ব করবে।’”
[বাইবেল, জেনেসিস, ৩/১৬]
কুরআনের কোথাও একতরফাভাবে হাওয়া (আঃ) কে দোষ দেয়া হয়নি। বরং আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ) দুজনকেই সমানভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। কিংবা এটাও বলা হয়নি যে হাওয়া (আঃ) এর ভুলের কারনেই জান্নাত থেকে দুজনকে বিতাড়িত করা হয়েছিল বা হাওয়া (আঃ) আদম (আঃ)-কে বিপথে পরিচালিত করেছিলেন।
মূলকথা, আদম এবং হাওয়া (আঃ) দুজনেই সমান অপরাধ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, আর আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আর গর্ভধারণের মত এত পবিত্র যাতনা কোন অবস্থাতেই মা দের ওপর আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালার চাপিয়ে দেয়া শাস্তি হতে পারেনা।
শয়তান সাপ ও ময়ূরের সাহায্যে আদম এবং হাওয়া (আঃ)-কে সেই বিশেষ গাছের ফল খেতে প্ররোচিত করেছিলেন বলে সমাজে যেসব কথা প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই বাইবেলের Old Testament-এর কথা, কুরআন কিংবা সহীহ হাদিসের নয়। এই ব্যাপারের জন্য জেনেসিস অধ্যায়ের ৩/১-৪ পড়ে দেখুন।
ইমাম ইবনে কাসিরের মতে, মুসলিম সমাজে প্রচলিত উপরের সব ঘটনাগুলো ইসরায়েলিদের বর্ননা থেকে প্রাপ্ত – এগুলোর ওপর বিশ্বাস করা যায়না।
নগ্নতা শয়তানের প্রথম কাজ
সূরা আরাফ: আয়াত ২২
فَدَلّٰىهُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡاٰتُهُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَ نَادٰىهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡهَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَ اَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
অতঃপর সে তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বার অধঃপতিত করল। এরপর যখন তার সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু।
মানুষের উপরে শয়তানের প্রথম হামলা ছিল তার দেহ থেকে কাপড় খসিয়ে তাকে উলঙ্গ করে দেওয়া। আজও পৃথিবীতে শয়তানের পদাংক অনুসারী ও ইবলীসের শিখন্ডীদের প্রথম কাজ হ’ল তথাকথিত ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতার নামে নারীকে উলঙ্গ করে ঘরের বাইরে আনা ও তার সৌন্দর্য উপভোগ করা। অথচ পৃথিবীর বিগত সভ্যতাগুলি ধ্বংস হয়েছে মূলতঃ নারী ও মদের সহজলভ্যতার কারণেই। অতএব সভ্য-ভদ্র ও আল্লাহভীরু বান্দাদের নিকটে ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয হ’ল স্ব স্ব লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ও ইযযত-আবরূর হেফাযত করা।
আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা
গাছের ফল খাওয়ার পর তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তারা তাদের কাজের জন্য লজ্জিত হলো এবং তারা আল্লাহর শিখানো বাক্য দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুরা বাকারার ৩৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে
فَتَلَقّٰۤی اٰدَمُ مِنۡ رَّبِّهٖ کَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَیۡهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
তারপর আদম তার রবের কাছ থেকে কিছু বাণী পেলেন। অতঃপর আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনিই তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু
আদম আঃ আল্লাহ তায়ালার কাছে কি বানী পেলেন? তার উত্তর আল্লাহ নিজেই দেয়েছেন, সুরা আরাফ, আয়াত-২৩
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।
কেউ কেউ এখানে একটি জাল হাদীসের আশ্রয় নিয়ে বলেন যে, “আদম (আঃ) যখন গুণাহ করে ফেললেন , তখন তাকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হল । তিনি তিনশ’ বছর কাঁদতে থাকলেন । তবুও ক্ষমা পেলেন না । শেষে একদিন তিনি বললেন : হে আমার প্রভু ! তোমার নিকট মুহাম্মাদকে সত্য জেনে প্রার্থনা করছি । আমাকে ক্ষমা করে দাও । আল্লাহ বললেন হে আদম ! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনলে , অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি ? আদম (আঃ) বললেন : হে আমার প্রভু ! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আত্মার প্রবেশ ঘটান , তখন আমি আমার মাথা উঁচু করেছিলাম । অতঃপর আমি আরশের গায়ে লিখা দেখেছিলাম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ । আমি জেনেছি যে , আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি ব্যতীত অন্য কাউকে আপনি আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত করবেন না । তখন আল্লাহ বললেন : সত্যই বলেছ হে আদম ! নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আমার সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি । তার ওসিলায় তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম । ”
ঘটনাটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত , কারণ অনেক বই-পুস্তকে এটি দেখতে পাওয়া যায় । তার মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ বইয়ের নাম হচ্ছে ফাযায়েলে আমাল (পৃষ্ঠা নং ১৩০ , ফাযায়েলে জিকির অধ্যায়) , যা প্রায় সবগুলো মসজিদেই তালিমী বৈঠকে পড়া হয়ে থাকে ।
এটা ভিত্তিহীন বর্ণনা এবং ক্বুরআনের বর্ণনারও পরিপন্থী। এ ছাড়া এটা আল্লাহর বর্ণিত তরীকারও বিপরীত। প্রত্যেক নবী সব সময় সরাসরি আল্লাহর নিকট দুআ করেছেন। অন্য কোন নবী ও অলীর মাধ্যম ও অসীলা ধরেননি। কাজেই নবী করীম (সাঃ) সহ সকল নবীদের দুআ করার নিয়ম এটাই ছিল যে, তাঁরা বিনা অসীলা ও মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে সরাসরি দুআ করেছেন।
আদম আঃ যে সরাসরি আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছে তা আমরা সুরা বাকারার ৩৭ নং আয়াত ও সুরা আরাফের -২৩ নং আয়াত থেকে জানতে পারি।
তাদেরকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো
সুরা বাকারার ৩৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে
قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا مِنۡهَا جَمِیۡعًا ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ هُدًی فَمَنۡ تَبِعَ هُدَایَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
আমরা বললাম, তোমরা সকলে এখান থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট কোন হিদায়াত আসবে তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না
কুরআনের থেকে পরিস্কার এ কথা বোঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম কর্তৃক আল্লাহ্ তা’আলার হুকুম লংঘন সাধারণ পাপীদের মত ছিল না, বরং শয়তানের প্রতারণায় প্রতারিত হয়েই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
আদম ও হাওয়াকে আসমানে অবস্থিত জান্নাত থেকে নামিয়ে দুনিয়ায় কোথায় রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে আদমকে সরনদীপে (শ্রীলংকা) ও হাওয়াকে জেদ্দায় (সউদি আরব) এবং ইবলিসকে বসরায় (ইরাক) ও ইবলাসের জান্নাতে ঢোকার কথিত বাহন সাপকে ইস্ফাহানে (ইরান) নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ বলেছেন, আদমকে মক্কার ছাফা পাহাড়ে এবং হাওয়াকে মারওয়া পাহাড়ে নামানো হয়েছিল। এছাড়া আরও বক্তব্য এসেছে। তবে যেহেতু কুরআন ও সহিহ হাদিছে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি, সেকারণ এ বিষয়ে আমাদের চুপ থাকাই শ্রেয়। হজরত আদম ও হাওয়া [আ.]-কে পৃথিবীর কোন অংশে নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো? এ-সম্পর্কে কিছু দুর্বল বর্ণনা দেখা যায়। হজরত আদম [আ.]-কে হিন্দুস্তানে এবং হজরত হাওয়া [আ.]-কে জেদ্দায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো। তারপর এক দীর্ঘকাল পরে তাঁরা দুজনই হেজাজের আরাফাত নামক স্থানে একত্রে মিলিত হলেন। এ কারণে হজের এই ময়দানটির নাম হয়েছে আরাফাত (জানাশোনা)। কেননা, এখানে তাঁরা পরস্পর মিলিত হয়ে একে অপরকে চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু কুরআনুল কারিম ঘটনার এই অংশটি সম্পর্কে নীরব রয়েছে। কারণ এই বিষয়টি প্রকাশ করার সঙ্গে হেদায়েত ও নসিহতের কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্য অন্তরের প্রবল ধারণা এদিকে ধাবিত হয় যে, হজরত আদম ও হাওয়া আ. একই স্থানে অবতারিত হয়ে থাকবেন। কেননা, তাহলে আল্লাহ তাআলার পূর্ণ হেকমতের চাহিদা অনুযায়ী সত্বরই মানজাতির বংশবৃদ্ধির কাজ শুরু হতে পারবে। এই জড়জগতের উত্তরাধিকারী ও অধিবাসীরা জমিনকে আবাদ করে মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা ‘দুনিয়ার খেলাফতের’ পুরোপুরি হক আদায় করতে পারবে। আল্লাহই ভালো জানেন!
আদম (আঃ) এর পাঁচটি শ্রেষ্ঠত্ব
(১) আল্লাহ তাকে নিজ দু’হাতে সৃষ্টি করেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)।
(২) আল্লাহ নিজে তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭২)।
(৩) আল্লাহ তাকে সকল বস্ত্তর নাম শিক্ষা দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/৩১)।
(৪) তাকে সিজদা করার জন্য আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/৩৪)।
(৫) আদম একাই মাত্র মাটি থেকে সৃষ্ট। বাকী সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট (সাজদাহ ৩২/৭-৯)।
আহদে আলাস্ত
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুরা আরাফের ১৭২ নং আয়াত
وَ اِذۡ اَخَذَ رَبُّکَ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُهُوۡرِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَ اَشۡهَدَهُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ ۚ اَلَسۡتُ بِرَبِّکُمۡ ؕ قَالُوۡا بَلٰی ۚۛ شَهِدۡنَا ۚۛ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اِنَّا کُنَّا عَنۡ هٰذَا غٰفِلِیۡنَ
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব আদম-সন্তানের পিঠ থেকে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এ জন্যে যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম।
এটিকে ‘আলাসতু’ অঙ্গীকার বলা হয় যা ألست بربكم হতে তৈরী। এই অঙ্গীকার আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পর তাঁর সৃষ্টজাত সকল সন্তানের নিকট হতে নেওয়া হয়েছিল। একটি সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আরাফার দিনে নু’মান নামক জায়গায় মহান আল্লাহ আদম-সন্তান হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। আদম (আঃ)-এর সকল সন্তানকে তার পৃষ্ঠদেশ হতে বের করলেন এবং তাদেরকে নিজের সামনে (পিঁপড়ের আকারে) ছড়িয়ে দিলেন ও তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব (প্রভু) নই।’ সকলে বলেছিল, بَلَى شَهِدنَا অবশ্যই, আমরা সকলেই আপনার রব হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছি। (সিলসিলাহ সহীহাহ ১৬২৩ নং)
আদম আঃ এর দুনিয়ার জীবযাপন
মানুষের দুনিয়াবী জীবনে প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার শিল্পকর্ম অহীর মাধ্যমে কোন না কোন নবীর হাতে শুরু হয়েছে। অতঃপর যুগে যুগে তার উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। সর্বপ্রথম আদম (আঃ)-এর উপরে যে সব অহী নাযিল করা হয়েছিল, তার অধিকাংশ ছিল ভূমি আবাদ করা, কৃষিকার্য ও শিল্প সংক্রান্ত। যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য চাকা চালিত গাড়ী সর্বপ্রথম আদম (আঃ) আবিষ্কার করেন। কালের বিবর্তনে নানাবিধ মডেলের গাড়ী এখন চালু হয়েছে। কিন্তু সব গাড়ীর ভিত্তি হ’ল চাকার উপরে। বলা চলে যে, সভ্যতা এগিয়ে চলেছে চাকার উপরে ভিত্তি করে। অতএব যিনি প্রথম এটা চালু করেন, তিনিই বড় আবিষ্কারক। আর তিনি ছিলেন আমাদের আদি পিতা প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)। যা তিনি অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। আদমের যুগে পৃথিবীর প্রথম কৃষিপণ্য ছিল ‘তীন’ ফল। ফিলিস্তীন ভূখন্ড থেকে সম্প্রতি প্রাপ্ত সে যুগের একটি আস্ত তীন ফলের শুষ্ক ফসিল পরীক্ষা করে একথা প্রমাণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ‘তীন’ ফলের শপথ করেছেন। আল্লাহ আমাদের আদি পিতার উপরে শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!
সুরা বাকারার ৩৯ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে
وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ
আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে
আদম আঃ এর সন্তানদের ঘটনা ও অন্যান্য ঘটনা উক্ত বইয়ের পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
আদম আঃ এর জীবন থেকে শিক্ষা
১. তিনি সরাসরি আল্লাহর দু’হাতে গড়া এবং মাটি হ’তে সৃষ্ট। তিনি জ্ঞানসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে জীবন লাভ করেছিলেন।
২. তিনি ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা ও প্রথম নবী।
৩. তিনি জিন জাতির পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে এবং দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্বশীল খলিফা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন।
৪. দুনিয়ার সকল সৃষ্ট বস্ত্তর নাম অর্থাৎ সেসবের জ্ঞান ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দান করা হয়েছিল।
৫. জিন ও ফিরিশতা সহ সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৃষ্টির উপরে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। সকলে তাদের অনুগত ও তাদের সেবায় নিয়োজিত।
৬. আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করা হয়। যা পৃথিবীর বাইরে আসমানে সৃষ্ট অবস্থায় তখনও ছিল, এখনও আছে।
৭. জান্নাতে আদমের পাঁজরের হাড় থেকে তার জোড়া হিসাবে স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। সেকারণ স্ত্রী জাতি সর্বদা পুরুষ জাতির অনুগামী এবং উভয়ে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট।
৮. আদম ও হাওয়াকে আসমানী জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া হয়
৯. মানুষ হ’ল পৃথিবীর একমাত্র জ্ঞান সম্পন্ন প্রাণী। তাকে ভাল ও মন্দ দু’টিই করার ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
১০. আদমের মধ্যে মানবত্ব ও নবুওয়াতের নিষ্পাপত্ব উভয় গুণ ছিল। তিনি শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কথা সাময়িকভাবে ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে অনুতপ্ত হন ও তওবা করেন। তওবা কবুল হবার পরে তিনি নবুঅত প্রাপ্ত হন। অতএব নিঃসন্দেহে তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। একইভাবে আদমের আওলাদগণ পাপ করে তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করে থাকেন।
১১. আদমকে সিজদা না করার পিছনে ইবলীসের অহংকার ও তার পরিণতিতে তার অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনার মধ্যে মানুষকে অহংকারী না হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
১২. জৈবিক ও আধ্যাত্মিক দিকের সমন্বয়ে মানুষ একটি অসাধারণ সত্তা, যা অন্য কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়
১৩. ঈমানদার বান্দাগণ ক্বিয়ামতের দিন বিচার শেষে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে।
১৪. দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনার সকল জ্ঞান আদমকে দেওয়া হয়েছিল এবং তার মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম ভূমি আবাদ ও চাকা চালিত পরিবহনের সূচনা হয়।
১৫. সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সেবার জন্য। আর মানুষ সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর দাসত্বের জন্য।