The word taghut means that to transgression
পবিত্র কোরআনে মোট আট স্থানে ‘তাগুত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।
তাগুত হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি, যারা মানুষকে আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের আনুগত্যের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহর আইনের বিপরীতে নিজেরাই আইন তৈরি করে মানুষকে তা মেনে চলতে বাধ্য করে।
আল্লাহ তায়া’লা প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত করার জন্য
আল্লাহ বলেছেন- সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।
এখন মানুষ ইবাদাত করছে কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করবেন। তিনি বলেছেন
সূরা আনকবূত আয়াত ২
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ هُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ
মানুষ কি মনে করে যে আল্লাহর প্রতি ঈমন এনেছি বললেই তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেওয়া হবে?
ঈমানের পরীক্ষা আসে তাগূতের মাধ্যমে। তাগূতকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত না থাকলে পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করবে।
তাগুতে’র মূল কাজ হলো, মানুষকে ঈমানের পথ থেকে কুফরের দিকে নিয়ে যাওয়া।
(সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৭)
اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
তাগুত চিনার উপায় বা তাগুতের প্রকারভেদ
কেউ আমাকে প্রশ্ন করতে পারে ভাই তাগুতকে আমরা চিনবো কিভাবে বা তাগুকে কারা?
তাদের উত্তরে আমি বলবো-
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব (রহ.) তাঁর ‘মাজমুআহ আততাওহিদ’, পৃষ্ঠা ১৪ ও ১৫-তে লিখেছেন,
তাগুত’ প্রধানত পাঁচ প্রকার।
এক. শয়তান।
(সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬০)
اَلَمۡ اَعۡهَدۡ اِلَیۡکُمۡ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ اَنۡ لَّا تَعۡبُدُوا الشَّیۡطٰنَ ۚ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদাত করো না(১), কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
সুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ادۡخُلُوۡا فِی السِّلۡمِ کَآفَّۃً ۪ وَ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্ৰ।
দুই. আল্লাহর বিধান পরিহারকারী অত্যাচারী শাসক।
সুরা : নিসা, আয়াত : ৬০
یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَحَاکَمُوۡۤا اِلَی الطَّاغُوۡتِ وَ قَدۡ اُمِرُوۡۤا اَنۡ یَّکۡفُرُوۡا بِهٖ ؕ
তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে।
আমাদের সমাজে অনেক মানুষেই তাগুতকে জনপ্রতিনিধি হিসাবে মনোনয়ন করে এবং তাদের কাছে বিচার নিয়ে যায়, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
তিন. যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না।
সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৪৪)
فَلَا تَخۡشَوُا النَّاسَ وَ اخۡشَوۡنِ وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ
তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।
চার. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইলমে গায়েব বা অদৃশ্যের সর্বব্যাপ্ত জ্ঞান সাব্যস্ত করে।
(সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)
وَ عِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ
‘অদৃশ্যের চাবিগুলো তাঁর কাছেই রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত
বিভিন্ন বুজুর্গ গায়েব জানে এই রকম ধারনা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
পাঁচ. আল্লাহর পরিবর্তে যার উপাসনা করা হয় এবং সে ওই উপাসনায় সন্তুষ্ট থাকে।
সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৯
وَ مَنۡ یَّقُلۡ مِنۡهُمۡ اِنِّیۡۤ اِلٰهٌ مِّنۡ دُوۡنِهٖ فَذٰلِکَ نَجۡزِیۡهِ جَهَنَّمَ
“তাদের মধ্যে যে বলে, ‘তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই ইলাহ (উপাস্য)’, তাকে আমি প্রতিফল দেব জাহান্নাম…।”
কেউ যদি আল্লাহ’র প্রতি ঈমানের ঘোষণা দেয় কিন্তু তাগুতকে অস্বীকার-অমান্য না করে, তাগুতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা না করে, তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা সে ঈমান গ্রহণ করবেন না। আল্লাহ বলেছেন-
সূরা আল বাকারা ২৫৬
لَاۤ اِکۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
“দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুত অতঃপর কুফরীর সাথে যুদ্ধ করে আল্লাহ্’র প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরলো, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়। আর আল্লাহ্ সব কিছু শুনেন এবং সব কিছু জানেন।”
সূরা আন নাহল আয়াত ৩৬ এ বলা হয়েছে
اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ
তোমরা আল্লাহ্’র দাসত্ব, আনুগত্য (ইবাদাত) করো আর তাগুতকে বর্জন করো।”
কিভাবে ‘কুফুর বিত ত্বাগুত’ তথা ত্বাগুতকে বর্জন করতে হবে?
তাগুতকে বর্জন করার উপায়
এখন কেউ আমাকে প্রশ্ন করতে পারে ভাই তাগুতকে কিভাবে বর্জন করতে পারি তাদের উত্তরে বলবোঃ
ত্বাগুতকে পাঁচভাবে বর্জন করতে হবে-
১। তাগুতের ইবাদত বাতিল এ আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে-
মানুষ যত ধরনের ইবাদতই তাগুতের জন্য নিবেদন করুক তা সবই বাতিল এ আক্বীদা বা বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
সুরা হজ্জ ৬২
وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ هُوَ الۡبَاطِلُ
তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল।
২। তাগুতকে পরিত্যাগ ও তাগুত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে:
এর অর্থ হচ্ছে তাগুতের ইবাদত পরিত্যাগ করা, পরিহার করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
সুরা নাহল ৩৬
ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ
তোমরা আলাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকো।‘
৩। দুশমনি বা শত্রুতার মাধ্যমে:
আল্লাহ তা’আলা ইবরাহীম (আ:) এর ঘটনা বর্ণনা করত: বলেন-
সূরা শুআরা ৭৫-৭৭
ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻢ ﻣَّﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ [ ٢٦ :٧٥ ]
ﺃَﻧﺘُﻢْ ﻭَﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻗْﺪَﻣُﻮﻥَ [ ٢٦ :٧٦ ]
ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻋَﺪُﻭٌّ ﻟِّﻲ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺏَّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ [ ٢٦ : ٧٧ ]
‘ইবরাহীম বললো: তোমরা এবং তোমাদের অতীত বাপ-দাদারা যে সব জিনিসের ইবাদত করে আসছো, সে গুলি কি কখনো তোমরা চোখ মেলে দেখেছো? এরা সবাইতো আমার দুশমন একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া।’
যে ব্যক্তির ন্যুনতম জ্ঞান আছে এবং দাবী করে যে সে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে সে কখনো তাগুতকে বন্ধু হিসেবে নিতে পারে না। বরং তাগুতের সাথে থাকবে তার দুশমনি বা শত্রুতা।
৪। ক্রোধ ও ঘৃণার মাধ্যমে:
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
সুরা মুমতাহিনাঃ ৪
ﻛَﻔَﺮْﻧَﺎ ﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺑَﺪَﺍ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻜُﻢُ ﺍﻟْﻌَﺪَﺍﻭَﺓُ ﻭَﺍﻟْﺒَﻐْﻀَﺎﺀُ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ
‘আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা যতক্ষণ না এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, ততক্ষণ তোমাদের ও আমাদের মধ্যে থাকবে চির শত্রুতা, ক্রোধ ও ঘৃণা।’
সুতরাং তাগুতকে অস্বীকারের দাবী হচ্ছে তাগুত এবং যে ব্যক্তি তার ইবাদত করে কাফেরে পরিণত হয়েছে উভয়কেই পরিত্যাগ করতে হবে এবং উভয়ের সাথে ঈমানদারদের থাকবে দুশমনি, ঘৃণা-বিদ্বেষ।
৫। অস্বীকার করার মাধ্যমে:
ত্বাগুতকে অস্বীকার করা। তাগুতের যারা উপাসনা করে এবং নেতৃত্বের আসনে বসায় তাদেরকে অস্বীকার করা এবং যে ব্যক্তি কুফরী মতবাদের প্রবর্তন করে অথবা কুফরীর দিকে আহবান জানায় তাকে অস্বীকার করা।
কুরআন দিয়ে নির্দেশ পাওয়ার পরেও যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয় বা তাগুত থেকে দূরে না থাকে তাহলে তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি
পবিত্র কুরআনের সুরা সাজদা আয়াত ২২ বলা হয়েছে
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’
তাগুতের আলোচনা শেষ করার আগে কুরআনের একটি উদ্ধৃত দিয়ে শেষ করতে চাই
সুরা নিসা : ৭৬
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ الطَّاغُوۡتِ
যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরি করে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে।
ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
2 comments
Pingback: জিহাদকে কেন বৈধতা দেয়া হল?
Pingback: জিহাদ কি? জিহাদ কত প্রকার · ISLAMIC DAWAH FOUNDATION