আল গাশিয়াহ্
শ্রেণীঃ মাক্কী সূরা
নামের অর্থঃ বিহ্বলকর ঘটনা
সূরার ক্রমঃ ৮৮
আয়াতের সংখ্যাঃ ২৬
পারার ক্রমঃ ৩০
রুকুর সংখ্যাঃ নেই
সিজদাহ্র সংখ্যাঃ নেই
← পূর্ববর্তী সূরা সূরা আল-আ’লা
পরবর্তী সূরা → সূরা আল-ফাজ্র
নামকরণ
এই সূরাটির প্রথম আয়াতের اَلْغَاشِيَةِ বাক্যাংশ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে اَلْغَاشِيَةِ (‘আল গাশিয়াহ্’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা
নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান
এ সূরাটির সমগ্র বিষয়বস্তু একথা প্রমাণ করে যে এটিও প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত। কিন্তু এটি এমন সময় নাযিল হয় যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং মক্কায় লোকেরা তার দাওয়াত শুনে তার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করতে থাকে।
শানে নুযূলঃ
বিষয়বস্তু অনুধাবন করার জন্য একথাটি অবশ্যি সামনে রাখতে হবে যে , ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রধানত দু’টি কথা লোকদেরকে বুঝাবার মধ্যেই তার দাওয়াত সীমাবব্ধ রাখেন। একটি তাওহীদ ও দ্বিতীয়টি আখেরাত। আর মক্কাবাসীরা এই দু’টি কথা মেনে নিতে অস্বীকার করতে থাকে। এই পটভূমিটুকু অনুধাবন করার পর এবার এই সূরাটির বিষয়বস্তু ও বর্ণনা পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা – ভাবনা করুন।
এখানে সবার আগে গাফলতির জীবনে আকণ্ঠ ডুবে থাকা লোকদেরকে চমকে দেবার জন্য হঠাৎ তাদের সামনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে : তোমরা কি সে সময়ের কোন খবর রাখো যখন সারা দুনিয়ার ওপর ছেয়ে যাবার মতো একটি বিপদ অবতীর্ণ হবে ? এরপর সাথে সাথেই এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে , সে সময় সমস্ত মানুষ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দু’টি ভিন্ন পরিণামের সম্মুখীন হবে। একদল জাহান্নামে যাবে। তাদের উমুক উমুক ধরনের ভয়াবহ ও কঠিন আযাবের সম্মুখীন হতে হবে। দ্বিতীয় দলটি উন্নত ও উচ্চ মর্যাদার জান্নাতে যাবে। তাদেরকে উমুক উমুক ধরনের নিয়ামত দান করা হবে।
এভাবে লোকদেরকে চমকে দেবার পর হঠাৎ বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রশ্ন করা হয় , যারা কুরআনের তাওহীদী শিক্ষা ও আখেরাতের খবর শুনে নাম সিটকায় তারা কি নিজেদের চোখের সামনে প্রতি মুহূর্তে যেসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সেগুলো দেখে না ? আরবের দিগন্ত বিস্তৃত সাহারায় যেসব উটের ওপর তাদের সমগ্র জীবন যাপন প্রণালী র্ভিরশীল তারা কিভাবে ঠিক মরু জীবনের উপযোগী বৈশিষ্ট ও গুণাবলী সম্পন্ন পশু হিসেবে গড়ে উঠেছে , একথা কি তারা একটুও চিন্তা করে না ? পথে সফর করার সময় তারা আকাশ , পাহাড় বা বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী দেখে । এই তিনটি জিনিস সম্পর্কেই তারা চিন্তা করে না কেন ? মাথার ওপরে এই আকাশটি কেমন করে ছেয়ে গেলো ? সামনে ওই পাহাড় খাড়া হলো কেমন করে ? পায়ের নীচে এই যমীন কিভাবে বিছানো হলো ? এসব কিছুই কি একজন মহাবিজ্ঞ সর্বশক্তিমান কারিগরের কারিগরী তৎপরতা ছাড়াই হয়ে গেছে ? যদি একথা মেনে নেয়া হয় যে , একজন সৃষ্টিকর্তা বিপুল শক্তি ও জ্ঞানের সাহায্যে এই জিনিসগুলো তৈরি করেছেন এবং দ্বিতীয় আর কেউ তার এই সৃষ্টি কর্মে শরীক নেই তাহলে তাকেই একক রব হিসেবে মেনে নিতে তাদের আপত্তি কেন ? আর যদি তারা একথা মেনে নিয়ে থাকে যে সেই আল্লাহর এসব কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা ছিল , তাহলে সেই আল্লাহ কিয়ামত সংঘটিত করার ক্ষমতাও রাখেন , মানুষের পুর্নবার সৃষ্টি করার ক্ষমতাও রাখেন এবং জান্নাত ও জাহান্নাম বানাবার ক্ষমতাও রাখেন — এসব কথা কোন যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে মানতে ইতস্তত করছে ?
এ সংক্ষিপ্ত ও অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে বক্তব্য বুঝানো হয়েছে। এরপর কাফেরদের দিক থেকে ফিরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হেয়েছে । তাকে বলা হয়েছে , এরা না মানতে চাইলে না মানুক , তোমাকে তো এদের ওপর বল প্রয়োগকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি । তুমি জোর করে এদের থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে পারো না। তোমার কাজ উপদেশ দেয়া। কাজেই তুমি উপদেশ দিয়ে যেতে থাকো। সবশেষে তাদের অবশ্যি আমার কাছেই আসতে হবে । সে সময় আমি তাদের কাছ থেকে পুরো হিসেব নিয়ে নেব। যারা মানেনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবো।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।
আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি ? [2] وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ [2] উজু হুঁই ইয়াওমায়িযিন্ খ-শি‘আতুন্ ।
অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, [3] عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ [3] ‘আ-মিলাতুন্ না-ছিবাতুন্ ।
ক্লিষ্ট, ক্লান্ত । [4] تَصْلَى نَارًا حَامِيَةً [4] তাছ্লা-না-রন্ হা-মিয়াতান্ ।
তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে । [5] تُسْقَى مِنْ عَيْنٍ آنِيَةٍ [5] তুস্ক্বা-মিন্ ‘আইনিন্ আ-নিয়াহ্ ।
তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে । [6] لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ [6] লাইসা লাহুম্ ত্বোয়া‘আ-মুন্ ইল্লা-মিন্ দ্বোয়ারীই’
কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই । [7] لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ [7] ল্লা-ইয়ুস্মিনু অলা-ইয়ুগ্নী মিন্ জু‘ইন্ ।
এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না। [8] وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاعِمَةٌ [8] উজু হুই ইয়াওমায়িযিন্ না-‘ইমাতুল্ ।
অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব, [9] لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ [9] লিসা’য়িহা-র-দ্বিয়াতুন্ ।
তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট । [10] فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ [10] ফী জ্বান্নাতিন্ ‘আ-লিয়াতি ।
তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে । [11] لَا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً [11] লা-তাস্মা‘উ ফীহা-লা-গিয়াহ্ ।
তথায় শুনবে না কোন অসার কথাবার্তা । [12] فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ [12] ফীহা-‘আইনুন্ জ্বা-রিয়াহ্ ।
তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা । [13] فِيهَا سُرُرٌ مَرْفُوعَةٌ [13] ফীহা-ছুরুরুম্ র্মাফূ ‘আতুও ।
তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন । [14] وَأَكْوَابٌ مَوْضُوعَةٌ [14] অ আক্ওয়া-বুম্ মাওদু‘আতুঁও ।
এবং সংরক্ষিত পানপাত্র [15] وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ [15] অনামা-রিকু মাছ্ ফূফাতুঁও ।
[15] এবং সারি সারি গালিচা [16] وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَةٌ [16] অযারা বিয়্যু মাব্ছূছাহ্।
এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট । [17] أَفَلَا يَنْظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ [17] আফালা- ইয়ান্জুরূনা ইলাল্ ইবিলি কাইফা খুলিক্বত্
তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা
হয়েছে ? [18] وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ [18] অইলাস্ সামা-য়ি কাইফা রুফি‘আত্ ।
এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা
হয়েছে ? [19] وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ [19] অইলাল্ জ্বিবা-লি কাইফা নুছিবাত্ ।
এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে ? [20] وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ [20] অইলাল্ র্আদ্বি কাইফা সুত্বিহাত্
এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে ? [21] فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنْتَ مُذَكِّرٌ [21] ফা যার্ক্কি; ইন্নামা য় আন্তা মুযার্ক্কি ।
অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন
উপদেশদাতা, [22] لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُسَيْطِرٍ [22] লাস্তা ‘আলাইহিম্ বিমুসাইত্বিরিন্ ।
আপনি তাদের শাসক নন, [23] إِلَّا مَنْ تَوَلَّى وَكَفَرَ [23] ইল্লা-মান্ তাওয়াল্লা-অকাফার ।
কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়, [24] فَيُعَذِّبُهُ اللَّهُ الْعَذَابَ الْأَكْبَرَ [24] ফাইয়ু‘আয্যিবুহুল্ লা-হুল্ ‘আযা-বাল্ আর্ক্বা ।
আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন ।
[25] إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ [25] ইন্না ইলাইনা য় ইইয়া-বাহুম্
নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, [26] ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
[26] ছুম্মা ইন্না ‘আলাইনা- হিসা-বাহুম্
অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব ।