সূরা যিলযাল
শ্রেণীঃ মাদানী সূরা
সূরার ক্রমঃ ৯৯
আয়াতের সংখ্যাঃ ৮
রুকুর সংখ্যাঃ ১
← পূর্ববর্তী সূরা সূরা বাইয়্যিনাহ
পরবর্তী সূরা → সূরা আল-আদিয়াত
নামকরণ : প্রথম আয়াতে যিলযালাহা ( আবরী —————) শব্দ থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে।
নাযিলের সময়– কাল
এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে মাসউদ ( রা) , আতা , জাবের ও মুজাহিদ বলেন , এটি মক্কী সূরা। ইবনে আব্বাসের ( রা) একটি উক্তিও এর সমর্থন করে । অন্যদিকে কাতাদাহ ও মুকাতিল বলেন , এটি মাদানী সূরা । এর মাদানী হবার সমর্থনে ইবনে আব্বাসেরও ( রা) আর একটি উক্তি পাওয়া যায়। ইবনে আবী হাতেম হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে যে রেওয়ায়াতটি উদ্ধৃত করেছেন তার থেকেও এর মাদানী হবার সমর্থনে প্রমাণ পেশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে : যখন ( আরবী ———————————–) আয়াতটি নাযিল হয় তখন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলালাম : হে আল্লাহর রসূল ! আমি কি আমার আমল দেখবো ? তিনি জবাব দিলেন , হাঁ। আমি বললাম , এই বড় বড় গোনাহগুলোও দেখবো ? জবাব দিলেন হাঁ । বললাম আর এই ছোট ছোট গোনাহগুলো ও ? জবাব দিলেন হাঁ। একথা শুনে আমি বললাম , তাহলে তো আমি মারা পড়েছি। তিনি বললেন , আনন্দিত হও , হে আবু সাঈদ কারণ প্রত্যেক নেকী তার নিজের মতো দশটি নেকীর সমান হবে। এই হাদীস থেকে এই সূরাটির মাদানী হবার ভিত্তিমূলক প্রমাণ পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রা) মদীনার অধিবাসী ছিলেন । ওহোদ যুদ্ধের পরে তিনি বালেগ হন। তাই যদি তাঁর উপস্থিতিতে নাযিল হয়ে থাকে তাহলে এর মাদানী হওয়া উচিত। কিন্তু আয়াত ও সূরার শানেনুযুল বর্ণনা সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেঈগণের যে পদ্ধতি ছিল তা ইতিপূর্বে সূরা দাহর এর ভূমিকায় আমি বর্ণনা করে এসেছি। তা থেকে জানা যায় , কোন আয়াত সম্পর্কে সাহাবীর একথা বলা যে , এ আয়াতটি উমুক ঘটনা প্রসংগে নাযিল হয়েছিল , সংশ্লিষ্ট আয়াতটির ঐ সময় নাযল হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। হতে পারে হযরত আবু সাঈদ জ্ঞান হবার পর যখন সর্বপ্রথম আয়াতটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরে মুখ থেকে শুনেন তখন তার শেষ অংশ তাঁর মনে ভীতির সঞ্চার করে থাকবে এবং তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওপরে বর্ণিত প্রশ্নগুলো করে থাকবেন। আর এই ঘটনাটিকে তিনি এমন ভাবে বর্ণনা করে থাকবেন যাতে মনে হবে এই আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখন তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই প্রশ্নগুলো করেন। যদি এই হাদীসটি সামনে না থাকে তাহলে কুরআনকে বুঝে অধ্যয়নকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই অনুভব করবেন এটি একটি মক্কী সূরা। বরং এর বক্তব্য বিষয় ও বর্ণনাভংগী থেকে অনুভূত হবে , এটি মক্কায় প্রাথমিক যুগে এমন সময় নাযিল হয় যখন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে ইসলামের বুনিয়াদি আকিদা – বিশ্বাস মানুষের সামনে পেশ করা হচ্ছিল।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এর বিষয়বস্তু মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং সেখানে দুনিয়ায় করা সমস্ত কাজের হিসেব মানুষের সামনে এসে যাওয়া । সর্বপ্রথম তিনটি ছোট ছোট বাক্যে বলা হয়েছে , মৃত্যুর পর মানুষের দ্বিতীয় জীবনের সূত্রপাত কিভাবে হবে এবং মানুষের জন্য তা হবে কেমন বিস্ময়কর। তারপর দু’টি বাক্যে বলা হয়েছে , মানুষ এই পৃথিবীর বুকে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে সব রকমের কাজ করে গেছে । সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি যে , এই নিষ্প্রান জিনিস কোনদিন তার কাজকর্মের পক্ষে – বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহর হুকুমে সেদিন সে কথা বলতে থাকবে। প্রত্যেকটি লোকের ব্যাপারে সে বলবে , কোন সময় কোথায় সে কি কাজ করেছিল । তারপর বলা হয়েছে , সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে দলে দলে আসতে থাকবে । তাদের কর্মকাণ্ড তাদেরকে দেখানো হবে। এমন পূর্ণাংগ ও বিস্তারিতভাবে এই কর্মকাণ্ড পেশ করা হবে যে , সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকী বা পাপও সামনে এসে যাবে।
إِذَا زُلْزِلَتِ ٱلْأَرْضُ زِلْزَالَهَا
وَأَخْرَجَتِ ٱلْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
وَقَالَ ٱلْإِنسَٰنُ مَا لَهَا
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَىٰ لَهَا
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ ٱلنَّاسُ أَشْتَاتًا لِّيُرَوْا۟ أَعْمَٰلَهُمْ
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُۥ
وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُۥ
উচ্চারণঃ ইযা-ঝুলঝিলাতিল আরদুঝিলঝা-লাহা-। ওয়া আখরাজাতিল আরদুআছকা-লাহা-। ওয়া কা-লাল ইনছা-নুমা-লাহা-। ইয়াওমাইযিন তুহাদ্দিছু আখবা-রাহা-।বিআন্না রাব্বাকা আওহা-লাহা-। ইয়াওমাইযিইঁ ইয়াসদুরুন্না-ছুআশতা-তাল লিউউরাও আ‘মা-লাহুম। ফামাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন খাইরাইঁ ইয়ারাহ। ওয়া মাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন শাররাইঁ ইয়ারাহ।
অর্থঃ যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে। এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।