সূরার ফাতিহার নাম ও কিছু বৈশিষ্ট্যঃ সূরা আল-ফাতিহা-ই সর্বপ্রথম কুরআন মজীদের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসাবে রাসূলের প্রতি নাযিল হয়েছে। সৰ্বপ্রথম অহীর মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি যে আয়াত বা সূরার অংশ নাযিল হয় তা হচ্ছে সূরা আল-আলাক’-এর প্রাথমিক আয়াত কয়টি। সূরা আল-মুদাসসির-এর প্রাথমিক কতক আয়াত এর কিছুদিন পর নাযিল হয়। কিন্তু এই খণ্ড আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার মধ্যে একটিও পূর্ণাঙ্গ সূরা ছিল না। পূর্ণাঙ্গ সূরা প্রথম যা নাযিল হয়েছে, তা হচ্ছে সূরা আল ফাতিহা। কুরআন মজীদের ১১৪ টি সূরার মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য একটি নাম নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই নামকরণ ব্যাপারে কয়েকটি বিশেষ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। কোন কোন সূরার নাম রাখা হয়েছে এর প্রথম শব্দ দ্বারা। কোন সূরায় আলোচিত বিশেষ কোন কথা কিংবা তাতে উল্লেখিত বিশেষ কোন শব্দ নিয়ে তা-ই নাম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোন কোন সূরার নামকরণ করা হয়েছে তার আভ্যন্তরীণ ভাবধারা ও বিষয়বস্তুকে সম্মুখে রেখে। কয়েকটি সূরার নাম রাখা হয়েছে কোন একটি বিশেষ ঘটনার প্রতি খেয়াল রেখে। সূরা আল-ফাতিহার নাম রাখা হয়েছে কুরআনে এর স্থান-মর্যাদা, বিষয়বস্তু-ভাবধারা, এর প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে। এদিক দিয়ে সূরা আল-ফাতিহার স্থান সর্বোচ্চ। কেননা অন্যান্য সূরার ন্যায় সূরা আল-ফাতিহার নাম মাত্র একটি নয়, অনেকগুলো। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হচ্ছে,
১. “ফাতিহাতুল কিতাব” (فَاتِحَةُ الْكِتَاب) কুরআনের চাবি-কাঠি। কেননা, এই সূরা দ্বারাই কুরআনের সূচনা হয়, কুরআনের প্রথম স্থানেই একে রাখা হয়েছে।
২. “উম্মুল কিতাব” (أمُّ الكِتَاب) আরবী ভাষায় ‘উম্ম’ বলা হয় সর্ব ব্যাপক ও কেন্দ্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন জিনিসকে।
৩. “সূরাতুল হামদ” (سُورَةُ الْحَمْد) তা’রীফ ও প্রশংসার সূরা।
৪. “সূরাতুস-সালাত” (سُورَةُ الصَّلاة) অর্থাৎ সালাতের সূরা। যেহেতু সব সালাতের সব রাকাআতেই এটি পাঠ করতে হয় সেজন্যই এই নামকরণ হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, لا صَلاة لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার সালাত হবে না। বুখারীঃ ৭৫৬,
এই সূরার আরো অনেক নাম হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, ‘উম্মুল ক্বুরআন’ (ক্বুরআনের মূল), ‘আস্সাবউল মাসানী’ (সাত আয়াতবিশিষ্ট বারবার পঠনীয় সূরা), ‘আল-ক্বুরআনুল আযীম’ (মহাক্বুরআন), ‘আশ্শিফা’ (রোগের প্রতিকার) এবং ‘রুক্ব্য়াহ’ (ঝাড়-ফুঁকের মন্ত্র) ইত্যাদি।