শেষ জামানার লক্ষণ ও তার হাদিসসমূহ নিম্ম্রুপঃ
১) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার (ইন্তিকালের) পর আমার উম্মত থেকে এমন গভীর মহব্বতকারীও হবে যে, তার আত্মীয়-স্বজন ও অর্থ-সম্পত্তিকে বিসর্জন দিয়ে হলেও আমার সাক্ষাতের কামনা করবে। (মুসলিম)
২) রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- দোজখীদের এমন দু’টি দল রয়েছে যাদের আমি দেখিনি। তাদের এক দলের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে। তারা তা দিয়ে লোকদের মারবে। আর একদল হবে নারীদের। তাদেরকে পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে। গর্বের সাথে নৃত্যের ভঙ্গিতে বাহু দুলিয়ে পথে চলবে। বুখতী উটের উচু কুঁজের মতো করে খোঁপা বাধবে। এবস নারী কখনোও জান্নাত লাভ করবে না, জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম)
৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-(শেষ জামানায়) আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের অন্তর হতে দ্বীনি জ্ঞান টেনে বের করে উঠিয়ে নেবেন না, বরং দ্বীনেরে জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের ইন্তিকালের মাধ্যমে ‘ইলম উঠিয়ে’ নেবেন। এমনকি যখন দুনিয়ায় আর কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খ লোকদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলবে। অতঃপর তাদের নিকট বিভিন্ন বিষয়ে (মাসআলা-মাসায়েল) জিজ্ঞাস করা হবে। তখন তারা না জানা সত্ত্বেও বিনা ইলমে রায় (ফতোয়া) দিবে, ফলে নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং অন্যদেরকেও পথ ভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
৪) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানাষ এমন একটি যুগে উপনীত হবে সে যে সম্পদ অর্জন করেছে তা কি হালাল নাকি হারাম তার পরোয়াও করিবে না।(বুখারি)
৫) হযরত মু’যায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- শেষ জামানায় এমন সমপ্রদায়ের আবির্ভাব হবে, যারা বাহ্যিক বন্ধুসুলভ আচরণ করেব (কিন্তু) ভিতরগত হবে শত্রুতা পোষণকারী। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! এমন কি করে হয়? উত্তরে বললেন, একে অপরের প্রতি লোভ-লালসা ও একের অন্যের প্রতি ভয়ভীতি। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একের পর এক নেক বান্দাগণ চলে যাবেন। যব কিংবা খেজুরের ভুসির মত অবশিষ্ট থাকবে মন্দলোকগণ। আল্লাহ ত’য়ালা তাদেরকে কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ করবেন না। (আহমদ)
৬) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-জমানা অতি নিকটবর্তী হয়ে যাবে, ইলম উঠে যাবে, ফিতনা প্রকাশিত হবে, কৃপণতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ‘হরজ’ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ‘হরজ’ কি? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,হত্যা (সন্ত্রাস)। (বুখারি ও মুসলিম)
৭) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সে সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা রয়েছে যে, পৃথিবী বিলীন হবে না যতক্ষণ না মানুষের সামনে এমন একটি যুগ অতিবাহিত না হবে যে, হত্যাকারী বলতে পাবে না কেন তাকে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও বলতে পারবে না কোন দোষে সে নিহত হয়েছে। প্রশ্ন করা হয়েছে এমন কেন হবে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা, কলেছেন, ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে। এতে হত্যাকারী ও নিহত দুই জনই জাহান্নামী হবে। (মুসলিম)
৮) হযরত ইব্রাহিম বিন আবদ্ রে;হমান আযরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- প্রত্যেক পরবর্তী দলের ভাল লোকেরাই এই (কিতাব ও সুন্নাহর) ইলমকে অর্জন করবেন। যারা এটা হতে সীমালঙ্ঘনকারীদের রদ-বদল, বাতিল লোকদের মিথ্যা আরোপ এবং মূর্খ লোকদের ভুল বা কদার্থ ব্যাখ্যাকে বিদূরিত করবেন। (বাযহক্বী)
৯) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানুষের সম্মুখে এমন একটি যুগ আসবে যে, সুদখোর ব্যতীত কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। যদি সুদ নাও খায় তার ধোঁয়াতো অবশ্যই পাবে। (আবু দাউদ ও আহমদ)
১০) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- শেষ জামানায় কিছু মিথু্যক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলীক (মিথ্যা-মনগড়া) কথাবার্তা উপস্থিত করবে, যা না তোমরা শুনেছ আর না তোমাদের বাপ-দাদারা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের সংশ্রব হতে দূরে থাকবে যাতে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে কিংবা বিপদ-বিপর্যয়ে ফেলতে না পারে। (মুসলিম)
১১) হযরত মু’য়ায রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যিনি সকল সত্যবাদীদের সর্দর, আল্লাহর নির্দেশ (তথা কিয়ামত) আসা পর্যন্ত কেউ তাদের সাহায্য ছেড়ে দিয়ে ও বিরোধিতা করে অনিষ্ট পৌছাতে পারবে না। তারা সে অবস্থায়ই থাকবে।
১২) হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার যুগের মানুষই সর্বোত্তম মানুষ, আতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী হবে, তারপর যারা এদের নিকটবর্তী হবে। অতঃপর এমন একটি সমপ্রদায় আসবে (বদদ্বীনী ও বেপরোয়ার কারণে) তাদের সাক্ষ্য তাদের শপথ থেকে অগ্রীম হবে, (কখনো) তাদের মিথ্যা শপথ তাদের সাক্ষ্য হতে আগে বেড়ে যাবে। (মুসলিম)
১৩) হযরত আমর ইবনে আ’উপ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- দ্বীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর ন্যায় যাত্রা শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেরূপ হয়ে যাবে যেরূপ প্রথম ছিল। অতঃপর যে সকল প্রবাসীর জন্য সুসংবাদ রয়েছে তারা হলো সেই লোক যারা সে বিষয়কে সংস্কার করবে যা আমার পর লোকেরা নষ্ট করে দিয়েছে। (তিরমিযি)
১৪) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সে সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা যে, পৃথিবী দ্বংস হবে না যতক্ষণ না যে, মানুষ কবরের নিকট দিয়ে অতিবাহিত হবে অতঃপর তার ওপর গড়াগড়ি করবে এবং বলতে থাকবে, হায়! এ সমাধিস্থলে যদি আমি হতাম। তার এ বিলাপনা কিন্তু দ্বীনের জন্য হবে না বরং দুনিয়ার বিপদাপদের কারণেই হবে। (মুসলিম)
১৫) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ভবিষ্যতে মানুষের এমন এক যুগ আসবে, যখন নাম ব্যতীত উসলামের আর কিছুই থাকবে না, আর অক্ষর ব্যতীত কুরআনেরও কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাদের মাসজিদসমূহ জাক-জমক পূর্ণ হবে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হিদয়েতশূন্য হবে। তাদের আলেমগন হবে আকাশের নিচে মন্দ লোক। তাদের পক্ষ থেকে দ্বীন সংক্রান্ত ফিত্না প্রকাশ পাবে। অতঃপর সে ফিতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে। (বায়হাক্বী)
১৬)হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামত ঘটবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না কমিনার বাচ্চা কমিনা নীচু (লোকেরা) ভালোদের আসনে অধিষ্ঠিত হবে। (তিরমিযি)
১৭) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানুষের সম্মুখে এমন একটি যুগ আসবে যে, দ্বীনের ওপর ধৈর্য ধারণ কারীর অবস্থা হবে মুষ্টিতে অগি্ন ধরার মতোই (যে বিশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না)। (তিরমিযি)
১৮) হযরত সওবান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সে যুগ অতি নিকটে যে, দুনিয়াদারগণ তোমাদেরকে এমনভাবে আহবান করবে যেমন ভক্ষণকারী একে অপরকে তাদের খাবারে পাত্রে আহবান করে। অতঃপর উপস্থিত এক ব্যক্তি বলে উঠল, আমরা কি সংখ্যায় তখন নগণ্য হবো? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (না); বরং সংখ্যায় হবে অধিক। কিন্তু স্রোতের ফেনার মতো হবে তোমরা (দুর্বল)। আল্লাহ তায়ালা শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়-ভীতি কেড়ে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ ঢেলে দেবেন (দুর্বলতা ও অবহেলা)। কেউ প্রশ্ন করল ‘ওয়াহা’ কি? বললেন, পার্থিব মোহ ও মৃতু্যর প্রতি অনীহা। (আবু দাউদ)
১৯) হযরহ আবি সাদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামতের দিন সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এমন সমপ্রদায়ের আবির্ভর ঘটবে যারা গাভীর ন্যায় মুখ দিয়ে খাবে। (আহমদ)
২০) হযরত সালমা বিনতে হুররে রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামদের নিদর্শনসমূহ থেকে একটি হলো এই যে, মসজিদ পক্ষ ইমাম নিয়োগ ব্যাপারে ঠেলাঠেলি করবে, তাদেরকে নিয়ে নামাজ পড়ার জন্য একজন ইমাম পাবে না। (আবু দাউদ)
সংগৃহিত
প্রথম নামাজ ফরজ করা হয় কবে কোথায় ?