Thursday , December 26 2024

সূরা আল-হাশর

সূরা আল-হাশর

শ্রেণীঃ মাদানী সূরা
নামের অর্থঃ সমাবেশ

সূরার ক্রমঃ ৫৯
আয়াতের সংখ্যাঃ ২৪
পারার ক্রমঃ ২৮
সিজদাহ্‌র সংখ্যাঃ নেই

← পূর্ববর্তী সূরা সূরা আল-মুজাদালাহ
পরবর্তী সূরা → সূরা আল-মুমতাহিনাহ

নামকরণঃ

সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতের (. . . ) অংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে ‘আল হাশর’শব্দের উল্লেখ আছে ।

নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ

বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে সা’ঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ সূরা আনফাল যেমন বদর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল তেমনি সূরা হাশর বনী নযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । হযরত সা’ঈদ ইবনে যুবাইরের দ্বিতীয় বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য এরূপ(. . . ) অর্থাৎএরূপ বলো যে, এটা সূরা নাযীর । মুজাহিদ, কাতাদা, যুহরী, ইবনে যায়েদ , ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক এবং অন্যদের থেকেও একথাটিও বর্ণিত হয়েছে । তাদের সবার ঐকমত্যভিত্তিক বর্ণনা হলো, এ সূরাতে যেসব আহলে কিতাবের বহিষ্কারের উল্লেখ আছে তারা বনী নযীর গোত্রেরই লোক । ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুজাহিদ এবং মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বক্তব্য হলো, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা সূরাটিই বনী নাযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন হলো, এ যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? এ সম্পর্কে ইমাম যুহরী উরওয়া ইবনে যুবায়েরের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্না করেছেন যে, এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধের ছয় মাস পরে সংঘটিত হয়েছিল । কিন্তু ইবনে সা’দ, ইবনে হিশাম এবং বালাযুরী একে হিজরী চতুর্থ সনের রবিউল আউয়াল মাসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন । আর এটিই সঠিক মত । কারণ সমস্ত বর্ণনা এ বিষয়ে একমত যে, এ যুদ্ধ ‘বি’রে মা’উনা’র দুঃখজনক ঘটনার পরে সংঘঠিত হয়েছিল । এ বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ‘বি’রে মা’উনা’র মর্মান্তিক ঘটনা ওহুদ যুদ্ধের পরে ঘটেছিল- আগে নয় ।
ঐতিহাসিক পটভূমি

এ সূরার বিষয়বস্তু ভালভাবে বুঝতে হলে মদীনা ও হিজাযের ইহুদীদের ইতিহাসের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন । তা নাহলে নবী (সা) তাদের বিভিন্ন গোত্রের সাথে যে আচরণ করেছিলেন তার প্রকৃত কারণসমূহ কি ছিল কেউ তা সঠিকভাবে জানতে পারবে না ।

আরবের ইহুদীদের নির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাস দুনিয়ায় নেই । তারা নিজেরাও পুস্তক বা শিলালিপি, আকারে এমন কোন লিখিত বিষয় রেখে যায়নি যা তাদের অতীত ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করতে পারে । তাছাড়া আরবের বাইরের ইহুদী ঐতিহাসিক কিংবা লেখকগণও তাদের কোন উল্লেখ করেননি । এর কারণ হিসেবে বলা হয়, আরব উপদ্বীপে এসে তারা তাদের স্বজাতির অন্য সব জাতি -গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । তাই দুনিয়ার ইহুদীরা তাদেরকে স্বজাতীয় লোক বলে মনেই করতো না । কারণ তারা ইহুদী সভ্যতা-সংস্কৃতি , ভাষা এমনকি নাম পর্যন্ত পরিত্যাগ করে আরবী ভাবধারা গ্রহণ করেছিল । হিজাযের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনাদির মধ্যে যেসব শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তাতে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পূর্বে ইহুদীদের কোন নাম নিশানা বা উল্লেখ পাওয়া যায় না । এতে শুধুমাত্র কয়েকজন ইহুদীর নাম পাওয়া যায় । এ কারণে আরব ইহুদীদের ইতিহাসের বেশীর ভাগ আরবদের মধ্যে প্রচলিত মৌখিক বর্ণনার ওপরে নির্ভরশীল । এরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদীদের নিজেদেরই প্রচারিত ।

হিজাযের ইহুদীরা দাবী করতো যে, তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের জীবনকালের শেষদিকে সর্বপ্রথম এখানে এসে বসতি স্থাপন করে । এই কাহিনী বর্ণনা করে তারা বলতো , হযরত মূসা (আ) আমালেকাদের বহিস্কারের উদ্দেশ্যে তাঁর একটি সেনাদলকে ইয়াসরিব অঞ্চল দিয়ে পাঠিয়েছিলেন । তিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ঐ জাতির কোন ব্যক্তিকেই যেন জীবিত রাখা না হয় । বনী ইসরাঈলদের এই সেনাদল নবীর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করল । তবে, আমালেকাদের বাদশার একটি সুদর্শন যুবক ছেলে ছিল । তারা তাকে হত্যা করল না । বরং সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনে ফিরে গেল । এর পূর্বেই হযরত মূসা (আ) ইনতিকাল করেছিলেন । তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিবর্গ এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন । তারা বললেনঃ একজন আমালেকীকেও জীবিত রাখা নবীর নির্দেশ এবং মূসার শরীয়াতের বিধি-বিধানের স্পষ্ট লংঘন । তাই তারা উক্ত সেনাদলকে তাদের জামায়াত থেকে বহিষ্কার করে । বাধ্য হয়ে দলটিকে ইয়াসরিবে ফিরে এসে এখানেই বসবাস করতে হয় । (কিতাবুল আগানী, ১৯তম খণ্ড , পৃষ্ঠা-৯৪ ) এভাবে ইহুদীরা যেন দাবী করছিল যে, খৃষ্টাপূর্ব ১২শ’বছর পূর্বে থেকেই তারা এখানে বসবাস করে আসছে । কিন্তু বাস্তবে এর পেছনে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । সম্ভবত এ কাহীনি তারা এ জন্য গড়ে নিয়েছিল যাতে আরবের অধিবাসীদের কাছে তারা নিজেদের সুপ্রাচীন ও অভিজাত হওয়া প্রমাণ করতে পারে ।

ইহুদীদের নিজেদের বর্ণনা অনুসারে খৃস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে বাস্তুভিটা ত্যাগ করে আরেকবার এদেশে তাদের আগমন ঘটেছিল । এই সময় বাবেলের বাদশাহ ‘বখতে নাসসার’ বায়তুল মাকদাস ধ্বংস করে ইহুদীদেরকে সারা পৃথিবীতে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল । আরবের ইহুদীরা বলতো, সেই সময় আমাদের কিছু সংখ্যক গোত্র এসে ওয়াদিউল কুরা, তায়মা, এবং ইয়াসরিবে বসতি স্থাপন করেছিল । (ফুতূহুল বুলদান, আল বালাযুরী) কিন্তু এর পেছনেও কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । অসম্ভব নয় যে, এর মাধ্যমেও তারা তাদের প্রাচীনত্ব প্রমাণ করতে চায় ।

প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্রমাণিত তা হলো, ৭০ খৃস্টাব্দে রোমানরা যখন ফিলিস্তিনে ইহুদীদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং ১৩২ খৃস্টাব্দে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের সম্পূর্ণরূপে বহিস্কার করে সেই সময় বহু সংখ্যক ইহুদী গোত্র পালিয়ে হিজাযে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো । কেননা, এই এলাকা ছিল ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চল সংলগ্ন । এখানে এসে তারা যেখানেই ঝর্ণা ও শ্যামল উর্বর স্থান পেয়েছে সেখানেই বসতি গড়ে তুলেছে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ষড়যন্ত্র ও সুদী কারবারের মাধ্যমে সেসব এলাকা কুক্ষিগত করে ফেলেছে । আয়লা, সাকনা, তাবুক, তায়মা, ওয়াদিউল কুরা, ফাদাক, এবং খায়বরের ওপরে এই সময়েই তাদের আধিপত্য কায়েম হয়েছিলো । বনী কুরাইযা , বনী নাযির, বনী বাহদাল এবং বনী কায়নুকাও এ সময়ই আসে এবং ইয়াসরিবের ওপর আধিপত্য কায়েম করে ।

ইয়াসরিবে বসতি স্থাপনকারী ইহুদী গোত্রসমূহের মধ্যে বনী নাযির ও বনী কুরায়যা ছিল বিশেষভাবে উল্লখযোগ্য । কারণ তারা ইহুদী পুরোহিত (Cohens বা Priests) শ্রেণীর অন্তরভুক্ত ছিল । ইহুদীদের মধ্যে তাদের অভিজাত বলে মান্য করা হতো এবং স্বজাতির মধ্যে তারা ধর্মীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী ছিল । এরা যে সময় মদীনায় এসে বসতি স্থাপন করে তখন কিছু সংখ্যক আরব গোত্রও এখানে বসবাস করতো । ইহুদীরা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং কার্যত শস্য-শ্যামল উর্বর এই বুখণ্ডের মালিক মোখতার হয়ে বসে । এর প্রায় তিন শ’বছর পরে ৪৫০অথবা ৪৫১ খৃস্টাব্দে ইয়ামানে সেই মহাপ্লাবন আসে সূরা সাবার দ্বিতীয় রুকূ’তে যার আলোচনা করা হয়েছে । এই প্লাবনের কারণে সাবা কওমের বিভিন্ন গোত্র ইয়ামান ছেড়ে আরবের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয় । এদের মধ্য থেকে গাসসানীরা সিরিয়ার, লাখমীরা হীরায় (ইরাক) , বনী খুযা’আ জিদ্দা ও মক্কার মধ্যবর্তী এলাকায় এবং আওস ও খাযরাজ ইয়াসরিবে গিয়ে বসতি স্থাপন করে । ইহুদীরা যেহেতু আগে থেকেই ইয়াসরিবের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল । তাই প্রথম প্রথম তারা আওস ও খাযরাজ গোত্রকে কর্তৃত্ব চালানোর কোন সুযোগ দেয়নি । তাই দুটিগোত্র অনুর্বর এলাকায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হয় যেখানে জীবন ধারণের ন্যূনতম উপকরণেও তারা খুব কষ্টে সংগ্রহ করতে পারতো । অবশেষে তাদের একজন নেতা তাদের স্বগোত্রীয় গাসসানী ভাইদের সাহায্য প্রার্থনা করতে সিরিয়া গমন করে এবং সেখান থেকে একটি সেনাদল এনে ইহুদীদের শক্তি চূর্ণ করে দেয় । এভাবে আওস ও খাযরাজ ইয়াসরিবের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব ও আধিপত্য লাভ করে এবং ইহুদীদের দু’টি বড় গোত্র বনী নযীর ও বনী কুরায়যা শহরের বাইরে গিয়ে বসতি স্হাপন করতে বাধ্য হয় । তৃতিয় আরেকটি ইহুদী গোত্র বনী কায়নুকার যেহেতু বনু কুরাইযা ও বনু নাজীর গোত্রের সাথে তিক্ত সম্পর্ক ছিল তাই তারা শহরের ভেতরেই থেকে যায় । তবে এখানে থাকার জন্য তাদেরকে খাযরাজ গোত্রের নিরাপত্তামূলক ছত্রছায়া গ্রহণ করতে হয় । এর বিরুদ্ধে বনী নাযীর ও বনী কুরায়যা গ্রোত্রকে আওস গোত্রের নিরাপত্তামূলক আশ্রয় নিতে হয় যাতে তারা নিরাপদে ইয়াসরিবের আশেপাশে বসবাস করতে পারে । নীচের মানচিত্র দেখলে স্পষ্ট বুঝা যাবে, এই নতুন ব্যবস্থা অনুসারে ইয়াসরিবে এবং তার আশোপাশে কোথায় কোথায় ইহুদী বসতি ছিল ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় আগমনের পূর্বে হিজরাতের সূচনাকাল পর্যন্ত সাধারণভাবে গোটা হিজাযের এবং বিশেষভাবে ইয়াসরিবে ইহুদীদের অবস্থা ও পরিচয় মোটামুটি এরূপ ছিলঃ

ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, তাহযীব, তামাদ্দুন সবদিক দিয়ে তারা আরবী ভাবধারা গ্রহণ করে নিয়েছিল । এমনকি তাদের অধিকাংশের নামও হয়ে গিয়েছিল আরবী । হিজাযে বসতি স্থাপনকারী ইহুদী গোত্র ছিল বারটি । তাদের মধ্যে একমাত্র বনী যা’য়ুরা ছাড়া আর কোন গোত্রেরই হিব্রু নাম ছিল না । হাতেগোণা কয়েকজন ধর্মীয় পণ্ডিত ছাড়া তাদের কেউ-ই হিব্রু ভাষা জানতো না । জাহেলী যুগের ইহুদী কবিদের যে কাব্যগাঁথা আমরা দেখতে পাই তার ভাষা, ধ্যান-ধারণা ও বিষয়বস্তুতে আরব কবিদের থেকে স্বতন্ত্র এমন কিছুই পাওয়া যায় না যা তাদেরকে আলাদাভাবে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে । তাদের ও আরবদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছিল । মোটকথা, তাদের ও সাধারণ আরবদের মধ্যে ধর্ম ছাড়া আর কোন পার্থক্যই অবশিষ্ট ছিল না । কিন্তু এসব সত্তেও তারা আরবদের মধ্যে একেবারেই বিলীনও হয়ে যায়নি । তারা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিজেদের ইহুদী জাত্যভিমান ও পরিচয় টীকিয়ে রেখেছিল । তারা বাহ্যত আরবী ভাবধারা গ্রহণ করেছিল । শুধু এ জন্য যে, তাছাড়া তাদের পক্ষে আরবে টীকে থাকা অসম্ভব ছিল । আরবী ভাবধারা গ্রহণ করার কারণে, পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদরা তাদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে মনে করে নিয়েছে যে, তারা মূলত বনী ইসরাঈল নয়, বরং ইহুদী ধর্ম গ্রহনকারী আরব কিংবা তাদের অধিকাংশ অন্তত আরব ইহুদী । ইহুদীরা হিজাযে কখনো ধর্ম প্রচারের কাজ করেছিল অথবা তাদের ধর্মীয় পণ্ডিতগণ খৃস্টান পাদ্রী এবং মিশনারীদের মত আরববাসীদের ইহুদী ধর্মের প্রতি আহবান জানাতো এবং কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না । পক্ষান্তরে আমরা দেখতে পাই যে, তাদের মধ্যে ইসরাঈলিয়াত বা ইহুদীবাদের চরম গোঁড়ামি এবং বংশীয় আভিজাত্যের গর্ব ও অহংকার ছিল । আরবের অধিবাসীদের তারা ‘উম্মী’ (Gentiles) বলে আখ্যায়িত করত যার অর্থ শুধু নিরক্ষরই নয়, বরং অসভ্য এবং মূর্খও । তারা বিশ্বাস করত, ইসরাঈলীরা যে মানবাধিকার ভোগ করে এরা সে অধিকার লাভেরও উপযুক্ত নয় । বৈধ ও অবৈধ সব রকম পন্থায় তাদের অর্থ -সম্পদ মেরে খাওয়া ইসরাঈলীদের জন্য হালাল ও পবিত্র । নেতৃ পর্যায়ের লোক ছাড়া সাধারণ আরবদের তারা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত করে সমান মর্যাদা দেয়ার উপযুক্তই মনে করত না । কোন আরব গোত্র বা বড় কোন আরব পরিবার ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না । আরব লোকগাথায় তার কোন হদিসও মেলে না । এমনিতেও ইহুদীদের ধর্মপ্রচারের চেয়ে নিজেদের আর্থিক কায়-কারবারের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ ছিল অধিক । তাই একটি ধর্ম হিসেবে হিজাযে ইহুদীদের বিস্তার ঘটেনি । বরং তা হয়েছিল কয়েকটি ইহুদী গোত্রের গর্ব ও অহংকারের পুজি । তবে ইহুদী ধর্মীয় পণ্ডিতরা তাবীজ-কবচ, ভাল -মন্দ লক্ষণ নির্ণয় এবং যাদুবিদ্যার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল । আর এ কারণে আরব সমাজে তাদের ‘ইলম’ ও ‘আমলে’র খ্যাতি ও প্রতাপ বিদ্যামান ছিল ।

আরব গোত্রসমূহের তুলনায় তাদের আর্ধিক অবস্থা ও অবস্থান ছিল অধিক মজবুত । তারা যেহেতু ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার অধিক সুসভ্য অঞ্চল থেকে এসেছিল তাই এমন অনেক শিল্প ও কারিগরী তারা জানতো যা আরবের অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না । তাছাড়া বাইরের জগতের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিল । এসব কারণে ইয়াসরিব এবং হিজাযের উত্তরাঞ্চলে খাদ্যশস্যের আমদানী আর এখান থেকে খেজুর রপ্তানীর কারবার তাদের হাতে চলে এসেছিল । হাঁস-মুরগী পালন ও মৎস পালন ও মৎস শিকারেরও বেশীর ভাগ তাদেরই করায়ত্ত ছিল । বস্ত্র উৎপাদনের কাজও তারাই করত । তারাই আবার জায়গায় জায়গায় পানশালা নির্মাণ করে রেখেছিল । এসব জায়গা থেকে মদ এনে বিক্রি করা হতো । বনু কায়নুকা গোত্রের অধিকাংশ লোক স্বর্ণকার, কর্মকার ও তৈজসপত্র নির্মাণ পেশায় নিয়োজিত ছিল । এসব কায়কারবারে ইহুদীরা অস্বাভাবিক মুনাফা লুটতো । কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় কারবার ছিল সুদী কারবার । আশেপাশের সমস্ত আরবদের তারা এই সুদী কারবারের ফাঁদে আটকে ফেলেছিল । বিশেষ করে আরব গোত্রসমূহের নেতা ও সরদাররা বেশী করে এই জালে জড়িয়ে পড়েছিল । কারণ ঋণগ্রহণ করে জাঁকজমকে চলা এবং গর্বিত ভঙ্গিতে জীবনযাপন করার রোগ সবসময়ই তাদের ছিল । এরা অত্যন্ত চড়া হারের সুদের ভিত্তিতে ঋণ দিতো এবং তা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়াতে থাকত । কেউ একবার এই জালে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তো । এভাবে তারা আর্থিক দিক দিয়ে আরবদেরকে অন্তসারশূন্য করে ফেলেছিল । তবে তার স্বাভাবিক ফলাফলও দাঁড়িয়েছিল এই যে, তাদের বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে ব্যাপক ঘৃণা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়েছিল ।

-আবরদের মধ্যে কারো বন্ধু হয়ে অন্য কারো সাথে শত্রুতা সৃষ্টি না করা এবং পারস্পরিক যুদ্ধ -বিগ্রহে অংশগ্রহণ না করাই ছিল তাদের ব্যবসায়িক ও আর্থিক স্বার্থের অনুকূলে । কিন্তু অন্যদিকে আবার আরবদেরকে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হতে না দেয়া এবং তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ -বিগ্রহে লিপ্ত রাখাই ছিল তাদের স্বার্থের অনুকূলে । কারণ , তারা জানতো, আরব গোত্রসমূহ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে তখন আর তারা সেই সব সহায়-সম্পত্তি , বাগান এবং শস্য-শ্যামল ফসলের মাঠ তাদের অধিকারে থাকতে দেবে না, যা তারা সুদী কারবার ও মুনাফাখোরীর মাধ্যমে লাভ করেছে । তাছাড়া নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তাদের প্রতিটি গোত্রকে কোন না কোন শক্তিশালী আরব গোত্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হতো যাতে অন্য কোন শক্তিশালী গোত্র তাদের গায়ে হাত তুলতে না পারে । এ কারণে আরব গোত্রসমূহের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে তাদেরকে বারবার শুধু জড়িয়ে পড়তেই হতো না, বরং অনেক সময় একটি ইহুদী গোত্রকে তার মিত্র আরব গোত্রের সাথে মিলে অপর কোন ইহুদী গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হতো, বিরোধী আরব গোত্রের সাথে যাদের থাকতো মিত্রতার সম্পর্ক । ইয়াসরিবের বনী কুরায়যা ও বনী নাযীর ছিল আওস গোত্রের এবং বনী কায়নুকা ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র । হিজরাতের কিছুকাল পূর্বে ‘বু’আস’নামক স্থানে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল তাতে এই ইহুদী গোত্রগুলোও নিজ নিজ বন্ধু গোত্রের পক্ষ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল ।

এই পরিস্থিতিতে মদীনায় ইসলাম পৌঁছে এবং শেষ পর্যন্ত রসূলুল্লাহর(সা) আগমনের পর সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় । ইসলামী রাস্ট্র কায়েম করার সাথে সাথে তিনি প্রথম যে কাজগুলো করলেন তার মধ্যে একটি হলো, আওস, খাযরাজ এবং মুহাজিরদের মধ্যে একটি ভ্রাতৃবন্ধন সৃষ্টি করা । দ্বিতীয় কাজটি হলো, এই মুসলিম সমাজে এবং ইহুদীদের মধ্যে স্পষ্ট শর্তাবলীর ভিত্তিতে এটি চুক্তি সম্পাদন করা । এ চুক্তিতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল যে, একে অপরের অধিকারসমূহে হস্তক্ষেপ করবে না এবং বাইরের শত্রুর মোকাবিলায় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পতিরক্ষার ব্যবস্থা করবে ।

ইহুদি এবং মুসলমানরা পরস্পরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মেনে চলবে এই চুক্তি থেকে তা স্পষ্টভাবে জানা যায় । চুক্তির কতকগুলো বিষয় নিম্নরূপঃ (. . . . . . . . . . . . . . . . .)

ইয়াহুদীরা নিজেদের ব্যয় বহন করবে এবং মুসলমানরাও নিজেদের ব্যয় বহন করবে ।

এই চুক্তির পক্ষসমূহের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করলে তারা পরস্পরকে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে ।

নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার সাথে তারা একে অপরের কল্যাণ কামনা করবে । তাদের পরস্পরের সম্পর্ক হবে কল্যাণ করা ও অধিকার পৌছিয়ে দেয়ার সম্পর্কে গোনাহ ও সীমালংঘনের সম্পর্ক নয় ।

কেউ তার মিত্রশক্তির সাথে কোনপ্রকার খারাপ আচরণ করবে না ।

মজলুম ও নির্যাতিতদের সাহায্য করা হবে ।

যতদিন যুদ্ধ চলবে ইহুদীরা ততদিন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে মিলিতভাবে তার ব্যয় বহন করবে ।

এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী পক্ষাগুলোর জন্য ইয়াসরিবের অভ্যান্তরে কোনপ্রকার ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ।

এই চুক্তির শরীক পক্ষগুলোর মধ্যে যদি এমন কোন ঝগড়া -বিবাদ ও মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় যার কারণে বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা দেখা দিতে পারে তাহলে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বিধান অনুসারে তার মীমাংসা করবেন……………

কুরাইশ এবং তাদের মিত্র ও সাহায্যকারীদের আশ্রয় দেয়া হবে না ।

কেউ ইয়াসরিবের ওপর আক্রমণ করলে চুক্তির শরীকগণ তার বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করবে । প্রত্যেকপক্ষ নিজ নিজ এলাকার প্রতিরক্ষার দায় -দায়িত্ব বহন করবে । (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৪৭ থেকে ১৫০ পর্যন্ত)

এটা ছিল একটা সুস্পষ্ট ও অলংঘনীয় চূড়ান্ত চুক্তি । ইহুদীরা নিজেরাই এর শর্তাবলী গ্রহণ করেছিল । কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক আচরণ করতে শুরু করল । তাদের এই শত্রুতা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠতে লাগল । এর বড় বড় কারণ ছিল তিনটিঃ

একঃ তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাতির একজন নেতা হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিল যিনি তাদের সাথে শুধু একটি রাজনৈতিক চূক্তিতে আবদ্ধ থাকবেন এবং নিজের দলের পার্থিব স্বার্থের সাথে কেবল তার সম্পর্ক থাকবে । কিন্তু তারা দেখলো, তিনি আল্লাহ, আখেরাত , রিসালাত এবং কিতাবের প্রতিও ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছেন (যার মধ্যে তাদের নিজেদের রসূল ও কিতাবের প্রতি ঈমান আনাও অন্তরভুক্ত) এবং গোনাহর কাজ পরিত্যাগ করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং নৈতিক সীমা ও বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে আহবান জানাচ্ছেন, খোদ তাদের নবী -রসূলগণ দুনিয়ার মানুষকে যে আহবান জানাতেন । এসব ছিল তাদের কাছে অপছন্দনীয় । তারা আশংকাবোধ করলো, যদি এই বিশ্বজনীন আদর্শিক আন্দোলন চলতেই থাকে তাহলে তার সয়লাবের মুখে তাদের স্থূল ও অচল ধর্ম ও ধর্মীয় দর্শন এবং বংশ ও গোষ্ঠীগত জাতীয়তা খড়কুটোর মত ভেসে যাবে ।

দুইঃ আওস, খাযরাজ এবং মুহাজিরদেরকে পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখে এবং আশেপাশের আরব গোত্রসমূহের যারাই ইসলামের এই আহবানে সাড়া দিচ্ছে তারাই মদীনায় এই ইসলামী ভ্রাতৃবদ্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে দেখে তারা এই ভেবে শংকিত হয়ে উঠলো, যে, নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের খাতিরে আরব গোত্রসমূহের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে স্বার্থোদ্ধার করার যে নীতি তারা শত শত বছর ধরে অনুসরণ করে আসছে নতুন এই ব্যবস্থাধীনে তা আর চলবে না , বরং এখন তাদেরকে আরবের একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তির মোকাবিলা করতে হবে । যেখানে এই অপকৌশল আর সফল হবে না ।

তিনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজ ও সভ্যতার যে সংস্কার করেছিলেন তাতে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে সব রকম অবৈধ পথ ও পন্থা নিষিদ্ধ ঘোষণা করাও অন্তরভুক্ত ছীল । সর্বাপেক্ষা বড় ব্যাপার হলো, সুদভিত্তিক কারবারকেও তিনি নাপাক উপার্জন এবং হারাম খাওয়া বলে গোষণা করেছিলেন । এ কারণে তারা আশংকা করেছিল যে, আরব জনগণের ওপর যদি ঘোষনা করেছিলেন । এ কারণে তারা আশংকা করছিল যে, আরব জনগণের ওপর যদি তাঁর শাসন কর্তৃত্ব কায়েম হয় তাহলে তিনি আইনগতভাবে সুদ নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দেবেন । একে তারা নিজেদের মৃত্যুর শামিল বলে মনে করছিল ।

এসব কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা করা তারা নিজেদের জাতীয় লক্ষ হিসেবে স্থির করে নিয়েছিল । তাঁকে আঘাত দেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত করার কোন অপকৌশল , ষড়যন্ত্র ও উপায় অবলম্বন করতে তারা মোটেই কুণ্ঠিত হতো না । সাধারণ মানুষ যাতে তার প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠে সে জন্য তারা তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা প্রচারণা চালাতো । ইসলাম গ্রহণকারীদের মনে সব রকমের সন্দেহ-সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতো । যাতে তারা এ দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলাম ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যত বেশী পারা যায় ভুল ধারণা সৃষ্টি করার জন্য নিজেরাও মিথ্যামিথ্যি ইসলাম গ্রহণ করতো এবং তারপর আবার মুরতাদ বা ইসলাম ত্যাগী হয়ে যতো । অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য মুনাফিকদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতো । ইসলামের শত্রু প্রতিটি ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং গোত্রের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতো । মুসলামনদের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করতে এবং তাদেরকে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত করানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতো । তাদের বিশেষ লক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকজন । দীর্ঘদিন যাবত এ দুটি গোত্রের সাথে তাদের সুসম্পর্ক ছিল । অপ্রাসঙ্গিকভাবে বারবার ‘বু’আস’ যুদ্ধের আলোচনা তুলে তাদেরকে পূর্ব শত্রুতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতো । যাতে আরেকবার তাদের মধ্যে তরবারি ঝনঝনানি শরু হয়ে যায় । এবং ইসলাম তাদেরকে যে ভ্রাতৃন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছিলো তা যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় । মুসলমানদের আর্থিক দিক থেকে বিব্রত ও বিপদগ্রস্ত করার জন্যও তারা নানারূপ জালিয়াতি করতো । যাদের সাথে আগে থেকেই তাদের লেনদেন ছিল তাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করতো তারা তার ক্ষতিসাধন করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যেতো । তার কাছে যদি কিছু পাওনা থাকতো তাহলে তাগাদার পর তাগাদা দিয়ে তাকে উত্যক্ত ও বিব্রত করে তুলতো । তবে তার যদি কিছু পাওনা থাকতো তাহলে তা আত্মসাৎ করতো । তারা প্রকাশ্যে বলতোঃ আমরা তোমার সাথে যখন লেনদেন ও কারবার করেছিলাম তখন তোমার ধর্ম ছীল অন্যকিছু । এখন যেহেতু তুমি তোমার ধর্মই পরিবর্তন করে ফেলেছো তাই আমাদের কাছে তোমার কোন অধিকারই আর অবশিষ্ট নেই । তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে নয়শাবুরী, তাফসীরে তাবরাসী এবং তাফসীরে রূহুল মায়ানীতে সূরা আলে ইমরানের ৭৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এর বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে ।

চুক্তির বিরুদ্ধে খোলাখুলি এই শত্রুতামূলক আচরণ তারা বদর যুদ্ধের আগে থেকেই করতে শুরু করেছিলো । কিন্তু বদর যুদ্ধে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানগণ কুরাইশদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিজয় লাভ করলে তারা অস্থির হয়ে ওঠে এবং তাদের হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন আরো অধিক প্রজ্জ্বলিত হয় । তারা আশা করছিলো, এই যুদ্ধে কুরাইশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মুসলমানরা ধ্বংস হয়ে যাবে । ইসলামের এই বিজয়ের খবর পৌঁছার পূর্বেই তারা মদীনায় গুজব ছড়াতে শরু করেছিল যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ হয়ে গিয়েছেন, মুসলমানদের চরম পরাজয় ঘটেছে এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে কুরাইশ বাহিনী মদীনার দিকে ধেয়ে আসছে । কিন্তু ফলাফল তাদের আশা আকাংখার সস্পূর্ণ বিপরীত হলে তারা রাগে ও দুঃখে ফেটে পড়ার উপক্রম হলো । বনী নাযীর গোত্রের নেতা কা’ব ইবনে আশরাফ চিৎকার করে বলতো শরু করলোঃ খোদার শপথ, মুহাম্মাদ যদি আরবের এসব সম্মানিত নেতাদের হত্যা করে থাকে তাহলে পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগেই আমাদের জন্য অধিক উত্তম । এরপর সে মক্কায় গিয়ে হাজির হলো এবং বদর যুদ্ধে যেসব কুরাইশ নেতা নিহত হয়েছিলো তাদের নামে অত্যন্ত উন্তেজনাকর শোকগাঁথা শুনিয়ে শুনিয়ে মক্কাবাসীদের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উত্তেজিত করতে থাকলো । এরপর সে মদীনায় ফিরে আসলো এবং নিজের মনের ঝাল মিটানোর জন্য এমন সব কবিতা ও গান গেয়ে শুনাতে শুরু করলো যাতে সম্মানিত মুসলমানদের স্ত্রী -কন্যাদের সাথে প্রেম নিবেদন করা এবং প্রেম সম্পর্কের কথা উল্লেখ থাকতো । তার এই ঔদ্ধত্য ও বখাটেপনায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত নবী (সা) তৃতীয় হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা আনসারীকে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করাতে বাধ্য হলেন । (ইবনে সা’দ ইবেন হিশাম, তারীখে তাবারী) ।

বদর যুদ্ধের পর ইহুদীদের যে গোত্রটি সমষ্টিগতভাবে সর্বপ্রথম খোলাখুলি চুক্তিভংগ করেছিল সেটি ছিল বনু কায়নুকা গোত্র । এরা মদীনার শহরাভ্যন্তরে একটি মহল্লায় বাস করতো । যেহেতু তারা স্বর্ণকার, কর্মকার ও তৈজসপত্র প্রস্তুতকারী ছিল, তাই মদীনবাসীদের তাদের বাজারে বেশী বেশী যাতায়াত করতে হতো । নিজেদের বীরত্ব ও সাহসিকতা নিয়ে তারা গর্ববোধ করতো । কর্মকার হওয়ার কারণে তাদের প্রতিটি বাচ্চা পর্যন্ত অস্ত্র সজ্জিত ছিল । তাদের মধ্যে ছিল সাত শত যুদ্ধোপযোগী পুরুষ । খাযরাজ গোত্রের সাথে তাদের পুরানো মিত্রতা সম্পর্ক ছিল । আর খাযরাজ গোত্রের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল তাদের পৃষ্ঠপোষক । এ কারণেও তাদের অহমিকা ছিল । বদর যুদ্ধের ঘটনায় তারা এতটা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে, তারা তাদের বাজারে যাতায়াতকারী মুসলমানদের বিব্রত করা কষ্ট দেয়া এবং বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের উত্যক্ত করতে শুরু করেছিলো । আস্তে আস্তে পরিস্থিতি এতদূর গড়ায় যে , তাদের বাজারে একদিন একজন মুসলামন মহিলাকে সবার সামনে উলঙ্গ করে ফেলা হলে তা নিয়ে মারাত্মক ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয় এবং হাংগামায় একজন মুসলমান এবং একজন ইহুদী নিহত হয় । পরিস্থিতি এতদূর গড়ালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মহল্লায় গেলেন এবং তাদের সবাইকে ডেকে একত্রিত করে ন্যায় ও সততার পথ অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন । কিন্তু প্রত্যুত্তরে তারা বললোঃ “মুহাম্মাদ’সম্ভবত তুমি আমাদেরকেও কুরাইশ মনে করছো? যুদ্ধবিদ্যায় তারা ছিল অনভিজ্ঞ । তাই তুমি তাদেরকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছো । কিন্তু আমাদের সাথে পালা পড়লে জানতে পারবে পুরুষলোক কাকে বলে । ” এটা ছিল স্পষ্ট যুদ্ধ ঘোষণার শামিল । অবশেষে নবী (সা) দুই হিজরীর শাওয়াল (অপর এক বর্ণনা অনুসারে যিলকা’দা) মাসের শেষ দিকে তাদের মহল্লা অবরোধ করলেন । মাত্র পনের দিন অবরোধ চলার পরই তারা আত্মসমর্পণ করলো এবং তাদের যুদ্ধক্ষম সমস্ত ব্যক্তিকে বন্দী করা হলো । এই সময় আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের সাহায্য সমর্থনে এগিয়ে আসলো । নবী (সা) যেন তাদের ক্ষমা করে দেন এ জন্য সে বারবার অনুরোধ উপরোধ করতে থাকলো । নবী (সা) তার আবেদনে সাড়া দিলেন । তিনি সিদ্ধান্ত দিলেন যে, বনু কায়নুকা তাদের অর্থ-সম্পদ , অস্ত্র-সস্ত্র এবং শিল্প-সরঞ্জাম রেখে মদীনা ছেড়ে চলে যাবে । (ইবনে সা’দ ইবনে হিশাম , তারীখে তাবারী) ।

এ দুটি চরম পদক্ষেপ (অর্থাৎ বনী কায়নুকার বহিষ্কার এবং কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যা) গ্রহণ করার ফলে কিছুকাল পর্যন্ত ইহুদীরা এতটা ভীত সন্ত্রস্ত রইলো যে, আর কোন দুষ্কর্ম করার সাহস তাদের হলো না । কিন্তু হিজরী ৩য় সনের শাওয়াল মাসে কুরাইশরা বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মদীনা আক্রমণ করতে আসলে ইহুদীরা দেখলো, কুরাইশদের তিন হাজার সৈন্যদের মোকাবিলায় মাত্র এক হাজার লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যুদ্ধাভিযানে বেরিয়েছে এবং তাদের মধ্যে থেকেও তিন শত মুনাফিক দলত্যাগ করে ফিরে এসেছে । তখন তারা প্রথমবারের মত স্পষ্টভাবে চুক্তিলংঘন করে বসলো । অর্থাৎ মদীনার প্রতিরক্ষায় তারা নবীর (সা) সাথে শরীক হলো না । অথচ চুক্তি অনুসারে তারা তা করতে বাধ্য ছিল । এরপর উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে তাদের সাহস আরো বেড়ে গেল । এমনকি রসূলুল্লাহ (সা) হত্যা করার জন্য বনী নাযীর গোত্র একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে বসলো । কিন্তু ঠিক বাস্তাবায়নের মুখে তা বানচাল হয়ে গেলো । ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ হলো, “বিরে মা’য়ুনা’র মর্মান্তিক ঘটনার (৪র্থ হিজরীর সফর মাস) পর আমর ইবনে উমাইয়া দামরী প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভুলক্রমে বনী আমের গোত্রের দু’জন লোককে হত্যা করে ফেলে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ছিলো চুক্তিবদ্ধ গোত্রের লোক । ‘আমর তাদেরকে শত্রু গোত্রের লোক মনে করেছিল । এ ভুলের কারণে মুসলমানদের জন্য তাদের রক্তপণ আদায় করা অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় । আর বনী আমের গোত্রের সাথে চুক্তিতে যেহেতু বনী নযীর গোত্রও শরীক ছিল, তাই রক্তপণ আদায়ের ব্যাপারে তাদেরকে শরীক হওয়ার আহবান জানাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে নিজে তাদের এলাকায় গেলেন । সেখানে তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কিছু খোশগল্পে ব্যস্ত রেখে ষড়যন্ত্র আঁটলো যে, তিনি যে ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসেছিলেন এক ব্যক্তি তার ছাদ থেকে তাঁর ওপর একখানা ভারী পাথর গড়িয়ে দেবে । কিন্তু তারা এই ষড়যন্ত্র কার্যকরী করার আগেই আল্লাহ তা’আলা যথা সময়ে তাঁকে সাবধান করে দিলেন । তিনি তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে উঠে মদীনায় ফিরে গেলেন ।

এরপর তাদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের কোন প্রশ্নই ওঠে না । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবিলম্বে তাদেরকে চরমপত্র দিলেন যে, তোমরা যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চেয়েছিলে তা আমি জানতে পেরেছি । অতএব দশ দিনের মধ্যে মদীনা ছেড়ে চলে যাও । এ সময়ের পরেও যদি তোমরা এখানে অবস্থান করো তাহলে তোমাদের জনপদে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই হত্যা করা হবে । অন্যদিকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদেরকে খবর পাঠালো যে, আমি দুই হাজার লোক দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবো । তাছাড়া বনী কুরায়যা এবং বনী গাতফানরাও তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে । তাই তোমরা রুখে দাঁড়াও নিজেদের জায়গা পরিত্যাগ করো না । এ মিথ্যা আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরমপত্রের জবাবে তারা জানিয়ে দিল যে, আমরা এখান থেকে চলে যাবো না । আপনার কিছু করার থাকলে করে দেখতে পারেন । এতে ৪র্থ হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অবরোধ করলেন । অবরোধের মাত্র ক’দিন পরই (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী মাত্র ছয় দিন এবং কোন কোন বর্ণনা অনুসারে পনর দিন) তারা এই শর্তে মদীনা ছেড়ে চলে যেতে রাজী হলো যে, অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া অন্য সব জিনিস নিজেদের উটের পিঠে চাপিয়ে যতটা সম্ভব নিয়ে যাবে । এভাবে ইহুদীদের দ্বিতীয় এই পাপী গোত্র থেকে মদিনাকে মুক্ত করা হলো । তাদের মধ্যে থেকে মাত্র দুজন লোক মুসলমান হয়ে মদীনায় থেকে গেল এবং অন্যরা সবাই সিরিয়া ও খায়বার এলাকার দিকে চলে গেল ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
আরবি উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাংলা অনুবাদ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ59.1 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১। সাব্বাহা-লিল্লা-হি মা-ফিস্ সামা-ওয়া-তি অমা-ফিল্ র্আদ্বি অহুওয়াল্ ‘আযীযুল্ হাকীম্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছে এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنْتُمْ أَنْ يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُمْ مَانِعَتُهُمْ حُصُونُهُمْ مِنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ59.2 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২। হুওয়াল্ লাযী য় আখ্ রজ্বাল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি মিন্ দিয়া-রিহিম্ লিআওয়্যালিল্ হাশ্র; মা-জোয়ানান্তুম্ আইঁ ইয়াখ্রুজ্ব ক্র অজোয়ান্ন ক্র য় আন্নাহুম্ মা-নি‘আতুহুম্ হূছূনুহুম্ মিনাল্লা-হি ফাআতা-হুমুল্লা-হু মিন্ হাইছু লাম্ ইয়াহ্তাসিবূ অক্বযাফা ফী কুলূ বিহির্মু রু’বা ইয়ুখ্রিবূনা বুইয়ূতাহুম্ বিআইদীহিম্ অ আইদিল্ মু”মিনীনা ফা’তাবিরূ ইয়া য় উলিল্ আব্ছোয়ার্-। বাংলা অনুবাদ ৫৯.২ আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরি করেছিল তিনিই তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলেন প্রথমবারের মত। তোমরা ধারণাও করনি যে, তারা বেরিয়ে যাবে। আর তারা ধারণা করেছিল যে, তাদের দগু র্গু লো তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর আযাব এমন এক দিক থেকে আসল যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি এবং তিনি তাদের অন্তরসমূহে ত্রাসের সঞ্চার করলেন, ফলে তারা তাদের বাড়ী-ঘর আপন হাতে ও মুমিনদের হাতে ধ্বংস করতে শুরু করল। অতএব হে দৃষ্টিমান লোকেরা তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ وَلَوْلَا أَنْ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَاءَ لَعَذَّبَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ59.3 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৩। অলাওলা য় আন্ কাতাবা ল্লা-হু ‘আলাইহিমুল্ জ্বালা-য়া লা‘আয্ যাবাহুম্ ফিদ্দুন্ইয়া-; অলাহুম্ ফিল্ ‘আ-খিরতি ‘আযা-বুন্ নার্-। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৩ আর আল্লাহ যদি তাদের জন্য নির্বাসন লিপিবদ্ধ না করতেন, তবে তিনি তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতেন এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে আগুনের শাস্তি। ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمَنْ يُشَاقِّ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ59.4 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৪। যা-লিকা বিআন্নাহুম্ শা-কক্ব ক্রল্লা-হা অরসূলাহূ অমাইঁ ইয়ুশা-কক্বি ল্লা-হা ফাইন্নাল্লা-হা শাদীদুল্ ই’ক্বা-ব্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৪ এটি এ জন্য যে, তারা সত্যিই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ59.5 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৫। মা-ক্বাত্বোয়া’তুম্ মিল্লীনাতিন্ আওতারক্তুমূহা-ক্ব-য়িমাতান্ ‘আলা য় উছূ লিহা-ফাবিইয্ নিল্লা-হি অ লিইয়ুখ্যিয়াল্ ফা-সিক্বীন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৫ তোমরা যে সব নতুন খেজুর গাছ কেটে ফেলছ অথবা সেগুলোকে তাদের মূলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ। তা তো ছিল আল্লাহর অনুমতিক্রমে এবং যাতে তিনি ফাসিকদের লাঞ্ছিত করতে পারেন। وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلَا رِكَابٍ وَلَكِنَّ اللَّهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ59.6 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৬। অমা য় আফা-য়াল্লা-হু ‘আলা-রসূলিহী মিন্হুম্ ফামা য় আওজ্বাফ্তুম্ ‘আলাইহি মিন্ খাইলিঁও অলা-রিকা-বিঁও অলা-কিন্নাল্লা-হা ইয়ুসাল্লিতু রুসুলাহূ ‘আলা-মাইঁ ইয়াশা-য়্; অল্লা-হু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন্ ক্বর্দী। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৬ আল্লাহ ইয়াহুদিদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ‌‌‌‌‌ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন তোমরা তার জন্য কোন ঘোড়া বা উটে আরোহণ করে অভিযান পরিচালনা করনি। বরং আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে যাদের ওপর ইচ্ছা কতৃর্ত প্রদান করেন। আল্লাহ সকল কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। مَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَى فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ 59.7 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৭। মা য় আফা-য়াল্লা-হু ‘আলা- রসূলিহী মিন্ আহ্লিল্ কুরা-ফালিল্লা-হি অর্লিরসূলি অলিযিল্ কুরবা- অল্ ইয়াতা-মা-অল্ মাসা-কীনি অব্নিস্ সাবীলি কাই লা-ইয়াকূনা দূলাতাম্ বাইনাল্ আগ্নিয়া-য়ি মিন্কুম্; অমা য় আ-তা-কুর্মু রসূলু ফাখুযূহু অমা-নাহা-কুম্ ‘আন্হু ফান্তাহূ অত্তাকুল্লা-হ্; ইন্না ল্লা-হা শাদী দুল্ ‘ইক্ব-ব্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৭ আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, আত্মীয়-স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও মুসাফিরদের এটি এ জন্য যে, যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে। রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ59.8 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৮। লিল্ ফুক্বারা-য়িল্ মুহাজ্বিরীনাল্ লাযীনা উখ্রিজ্ব ক্রমিন্ দিয়া- রিহিম্ অ আম্ওয়া-লিহিম্ ইয়াব্তাগূনা ফাদ্বলাম্ মিনাল্লা-হি অ রিদ্বওয়া-নাওঁ অ ইয়ান্ ছুরূনা ল্লা-হা অ রসূলাহ্; উলা-য়িকা হুমুছ্ ছোয়া-দিক্ব ক্রন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.৮ এই সম্পদ নিঃশর্ত মুহাজিরগণের জন্য ও যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। অথচ এরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেন। এরাই তো সত্যবাদী। وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ 59.9 আরবি উচ্চারণ ৫৯.৯। অল্লাযীনা তাবাওয়্যায়ুদ্ দা-রা অল্ঈমা-না মিন্ ক্বব্লিহিম্ ইয়ুহিব্বূনা মান্ হা-জ্বারা ইলাইহিম্ অলা-ইয়াজ্বিদূনা ফী ছুদূরিহিম্ হা-জ্বাতাম্ মিম্মা য় উতূ অইয়ু”ছিরূনা ‘আলা য় আন্ফুসিহিম্ অ লাও কা-না বিহিম্ খাছোয়া-ছোয়াহ্; অমাইঁইয়ূক্বা শুহ্হা নাফসিহী ফাউলা-য়িকা হুমুল্ মুফ্লিহূন্ । বাংলা অনুবাদ ৫৯.৯ আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোন ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কাপর্ণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম। وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ59.10 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১০। অল্লাযীনা জ্বা-ঊ মিম্ বা’দিহিম্ ইয়াক্ব ক্রলূনা রব্বানাগ্ ফিরলানা-অলিইখ্ওয়া-নিনাল লাযীনা সাবাক্ব ক্রনা বিল্ ঈমা-নি অলা- তাজ্ব ‘আল্ ফী কুলূবিনা-গিল্লাল্লিল্লাযীনা আ-মানূ রব্বানা য় ইন্নাকা রায়ূফুর রহীম্ বাংলা অনুবাদ ৫৯.১০ যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ نَافَقُوا يَقُولُونَ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَئِنْ أُخْرِجْتُمْ لَنَخْرُجَنَّ مَعَكُمْ وَلَا نُطِيعُ فِيكُمْ أَحَدًا أَبَدًا وَإِنْ قُوتِلْتُمْ لَنَنْصُرَنَّكُمْ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ 59.11 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১১। আলাম্ তারা ইলাল্লাযীনা না-ফাক্ব ক্র ইয়াক্ব ক্রলূনা লিইখ্ওয়া-নিহিমুল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি লায়িন্ উখ্রিজ্ব তুম্ লানাখ্রুজ্বান্না মা‘আকুম্ অলা-নুত্বী‘ঊ ফীকুম্ আহাদান্ আবাদাঁও অইন্ ক্ব ক্র তিল্তুম্ লানান্ ছুরন্নাকুম্; অল্লা-হু ইয়াশ্হাদু ইন্নাহুম্ লাকা-যিবূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১১ তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখনি যারা আহলে কিতাবের মধ্য হতে তাদের কাফির ভাইদেরকে বলে, ‘তোমাদেরকে বের করে দেয়া হলে আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্য বেরিয়ে যাব এবং তোমাদের ব্যাপারে আমরা কখনোই কারো আনুগত্য করব না। আর তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা হলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব।’ আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা মিথ্যাবাদী। لَئِنْ أُخْرِجُوا لَا يَخْرُجُونَ مَعَهُمْ وَلَئِنْ قُوتِلُوا لَا يَنْصُرُونَهُمْ وَلَئِنْ نَصَرُوهُمْ لَيُوَلُّنَّ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنْصَرُونَ59.12 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১২। লায়িন্ উখ্রিজ্ব ক্রলা-ইয়াখ্রুজ্ব ক্রনা মা‘আহুম্ অলায়িন্ ক্ব ক্রতিলূ লা-ইয়ান্ ছুরূনাহুম্ অলায়িন্ নাছোয়ারূ হুম্ লাইয়ুওয়াল্লুন্নাল্ আদ্বা-রা ছুম্মা লা-ইয়ুন্ছোয়ারূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১২ তারা (ইহুদিরা) যদি বহিষ্কৃত হয় তবে এরা (মুনাফিকরা) কখনো তাদের সাথে বেরিয়ে যাবে না আর তাদের (ইয়াহুদিদের) সাথে যদি যুদ্ধ করা হয় এরা (মুনাফিকরা) কখনো তাদেরকে সাহায্য করবে না। আর যদি তাদেরকে সাহায্য করে তবে তারা অবশ্যই পিঠ দেখিয়ে পালাবে; এরপর তারা কোন সাহায্যই পাবে না। لَأَنْتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً فِي صُدُورِهِمْ مِنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ59.13 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৩। লা আন্তুম্ আশাদ্দু রহ্বাতান্ ফী ছুদূরিহিম্ মিনা ল্লা-হ্; যা-লিকা বিআন্নাহুম্ ক্বওমুল্ লা-ইয়াফ্ক্বহূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৩ প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তরে আল্লাহর চাইতে তোমাদের ভয় বেশী; এটা এ কারণে যে, তারা অবুঝ সম্প্রদায়। لَا يُقَاتِلُونَكُمْ جَمِيعًا إِلَّا فِي قُرًى مُحَصَّنَةٍ أَوْ مِنْ وَرَاءِ جُدُرٍ بَأْسُهُمْ بَيْنَهُمْ شَدِيدٌ تَحْسَبُهُمْ جَمِيعًا وَقُلُوبُهُمْ شَتَّى ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ59.14 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৪। লা-ইয়ুক্ব-তিলূনাকুম্ জ্বামী‘আন্ ইল্লা-ফী কুরম্ মুহাছ্ ছনাতিন্ আও মিওঁ অর-য়ি জ্ব ুর্দু; বা”সুহুম্ বাইনাহুম্ শাদীদ্; তাহ্সাবুহুম্ জ্বামীয়াঁও অ কুলূবুহুম্ শাত্তা-; যা-লিকা বিআন্নাহুম্ ক্বওমুল্লা-ইয়া’ক্বিলূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৪ তারা সম্মিলিতিভাবে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না তবে সুরক্ষিত জনপদের মধ্যে অবস্থান করে বা দেয়ালের পেছন হতে; তারা নিজেরা নিজেদেরকে প্রবল শক্তিধর মনে করে; তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করছ অথচ তাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন। এটি এজন্য যে, তারা নির্বোধ সম্প্রদায়। كَمَثَلِ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ قَرِيبًا ذَاقُوا وَبَالَ أَمْرِهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ 59.15 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৫। কামাছালিল্ লাযীনা মিন্ ক্বব্লিহিম্ ক্বরীবান্ যা-ক্ব ক্র অবা- লা আম্রিহিম্ অলাহুম্ ‘আযা-বুন্ আলীম্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৫ তাদের অব্যবহিত পূর্বসূরিদের ন্যায়, যারা নিজেদের কৃতকর্মের কুফল আস্বাদন করেছে; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব। كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ59.16 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৬। কামাছালিশ্ শাইত্বোয়া-নি ইয্ ক্ব-লা লিল্ইন্সা-নিক্ র্ফু ফালাম্মা-কাফারা ক্ব-লা ইন্নী বারী-য়ুম্ মিন্কা ইন্নী য় আখ-ফুল্লা-হা রব্বাল্ ‘আ-লামীন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৬ (এরা) শয়তান-এর ন্যায়, সে মানুষকে বলেছিল, ‘কুফরি কর’, অতঃপর যখন সে কুফরি করল তখন সে বলল, আমি তোমার থেকে মুক্ত; নিশ্চয় আমি সকল সৃষ্টির রব আল্লাহকে ভয় করি। فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ59.17 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৭। ফাকা-না ‘আক্বিবাতাহুমা য় আন্নাহুমা-ফিন্না-রি খা-লিদাইনি ফীহা-; অযা-লিকা জ্বাযা-য়ুজ্ জোয়া-লিমীন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৭ তাদের দু জনের পরিণতি ছিল এই যে, তারা দু জনেই জাহান্নামী হবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর এটাই যালিমদের প্রতিদান। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ59.18 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৮। ইয়া য় আইয়্যুহাল্ লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা অল্ তার্ন্জু নাফ্সুম্ মা-ক্বাদ্দামাত্ লিগাদিন্ অত্তা কুল্লা-হ্; ইন্নাল্লা-হা খাবীরুম্ বিমা-তা’মালূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৮ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ59.19 আরবি উচ্চারণ ৫৯.১৯। অলা-তাকূনূ কাল্লাযীনা নাসুল্লা-হা ফাআন্সা-হুম্ আন্ফুসাহুম্; উলা-য়িকা হুমুল্ ফা-সিক্ব ক্রন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.১৯ তোমরা তাদের মত হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক। لَا يَسْتَوِي أَصْحَابُ النَّارِ وَأَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَائِزُونَ59.20 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২০। লা-ইয়াস্তাওয়ী য় আছ্হা-বুন্না-রি অ আছ্হা-বুল্ জ্বান্নাহ্; আছহা-বুল্ জ্বান্না-তি হুমুল্ ফা-য়িযূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.২০ জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসীরা সমান নয়; জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। لَوْ أَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ59.21 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২১। লাও আন্যালনা- হা-যাল্ কুরআ-না ‘আলা- জ্বাবালিল্ লারয়াইতাহূ খ-শি‘আম্ মুতাছোয়াদ্দি‘আম্ মিন্ খশ্ইয়াতি ল্লা-হ্; অতিল্কাল্ আম্ছা-লু নাদ্ব্রিবুহা-লিন্না-সি লা‘আল্লাহুম্ ইয়াতাফাক্কারূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.২১ এ কুরআনকে যদি আমি পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম তবে তুমি অবশ্যই তাকে দেখতে, আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ। মানুষের জন্য আমি এ উদাহরণগুলি পেশ করি; হয়ত তারা চিন্তাভাবনা করবে। هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ59.22 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২২। হুওয়াল্লা-হু ল্লাযী লা য় ইলা-হা ইল্লা হুওয়া ‘আ-লিমুল্ গইবি অশ্শাহা-দাতি হুওর্য়া রহ্মা-র্নু রহীম্ । বাংলা অনুবাদ ৫৯.২২ তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; দৃশ্য- অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করুণাময়, দয়ালু। هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ 59.23 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২৩। হুওয়াল্লা-হুল্ লাযী লা য় ইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল্ মালিকুল্ কুদ্দূসুস্ সালা-মুল্ মুমিনুল্ মুহাইমিনুল্ ‘আযীযুল্ জ্বাব্বা-রুল্ মুতাকার্ব্বি; সুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা- ইয়ুশ্রিকূন্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.২৩ তিনিই আল্লাহ; যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে তা হতে পবিত্র মহান। هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ 59.24 আরবি উচ্চারণ ৫৯.২৪। হুওয়া ল্লা-হুল্ খ-লিকুল্ বা-রিয়ুল্ মুছোয়াওয়্যিরু লাহুল্ আস্মা-য়ুল হুস্না-; ইয়ুসাব্বিহু লাহূ মা-ফিস্ সামা-ওয়া-তি অল্ র্আদ্বি অহুওয়াল্ ‘আযীযুল্ হাকীম্। বাংলা অনুবাদ ৫৯.২৪ তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশারী, প্রজ্ঞাময়।

About Abdul Latif Sheikh

Check Also

idf image

সুরা আল ইমরান আয়াত ১০২-১০৫ এর তাফসির

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ  وَ …

সুরা ইখলাস এর ফযিলত

সুরা আন আনফাল

সুরা আন আনফাল নামের অর্থঃ যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ শ্রেনীঃ মাদানী সুরা ক্রমঃ ৮ আয়াত সংখ্যাঃ …

সুরা ইখলাস এর ফযিলত

সূরা আত-তাওবাহ্‌

সূরা আত-তাওবাহ্‌ শ্রেণীঃ মাদানীনামের অর্থঃ অনুশোচনাঅন্য নামঃ আল-বারাহ্ (শাস্তি থেকে অব্যাহতি) সূরার ক্রমঃ ৯আয়াতের সংখ্যাঃ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *