Thursday , December 26 2024

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা-এর অর্থ হচ্ছে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ ও আল্লাহর আনুগত্য কামনা করা। সম্পদের মোহ, বংশ বা স্থান ইত্যাদির কোন সংশ্লিষ্টতা এক অপরের সম্পর্কের ও ভালোবাসার মানদণ্ড হবে না।

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা

আল্লাহর জন্য ভালোবাসার কতিপয় ফজিলত:

১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা স্থাপনকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন :-আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন – এক ব্যক্তি অন্য গ্রামে বসবাসকারী নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হল। মহান আল্লাহ তার জন্য পথে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করে রাখলেন। যখন সে ফেরেশতা সে ব্যক্তির নিকটবর্তী হল, বলল তুমি কোথায় যাও ? সে বলল, এই গ্রামে বসবাসকারী আমার এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা আমার উদ্দেশ্য। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন পাওনা আছে কি-না ? সে বলল, না। কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বলে উঠল, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত। মহান আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে ভালোবেসেছেন যে রকম তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছ। (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৬)হাদিসে কুদসীতে আছে মহান আল্লাহ বলেন : আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসা-কারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। (আহমদ:২১৭১৭)

২. মহান আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :- “সাত ব্যক্তি, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ছায়াতলে ছায়া দিবে, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না…এবং দুজন ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহর জন্য তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করেছে, তাঁর ভালোবাসায় তারা একত্রিত হয়েছে, এবং তাঁর ভালোবাসায় তারা পৃথক হয়েছে‌।(বুখারী:৬২০) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন: আল্লাহ কিয়ামত দিবসে বলবেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ – যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না- আমি তাদের ছায়া দেব। (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৫)

৩. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম:৮১) এক সাথি আরেক সাথির উপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে সাথি গ্রহণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন: মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির উপর পরিচালিত হয়, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, কে তোমাদের বন্ধু হবে এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা। (তিরমিজি:২৩০০)

ভাল সাথির বেশ কিছু গুণাবলি

দীনদার ও তাকওয়াবান হওয়া : তাকওয়াবানের কিছু আলামত নিচে উল্লেখ করা হল।
আল্লাহ প্রদত্ত অকাট্য বিধি-বিধান পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান-ইত্যাদি।
গালিগালাজ, অভিশাপ, গীবত ইত্যাদি। থেকে নিজের জিহ্বাকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
নিজ সাথিকে ভাল উপদেশ দেওয়া।
সজনদেরকে ভালোবাসা।
অশ্লীলতা ও পংকিলতা থেকে দূরে থাকা।
ভাল কাজে সহযোগিতা প্রদান, পাপের কাজে নিরুৎসাহিত করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “বন্ধুরা সেই দিন হয়ে পড়বে একে অপরের শক্র, মুত্তাকীরা ব্যতীত।” [সূরা আয-যুখরুফ:৬৭] রাসূলুল্লাহ সা: বলেন: “ঈমানদার ব্যতীত সাথি গ্রহণ করো না, মুত্তাকী ব্যতীত কেহ যেন তোমার খাবার ভক্ষণ না করে। (তিরমিজি:৩২১৮)

২. বুদ্ধিমান হওয়া : নির্বোধকে সাথি হিসেবে গ্রহণে কোন কল্যাণ নেই। কেননা সেই লাভ করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসবে।

৩. সুন্দর চরিত্রবান হওয়া: কেননা দুশ্চরিত্রবান সাথির অশুভ কর্মে তুমি আক্রান্ত হয়ে পড়বে, কষ্টে নিপতিত হবে।

৪. সুন্নত মোতাবেক চলা : সাথি বিদআতী হলে তোমাকে বিদআতের দিকে নিয়ে যাবে, তোমার চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করবে,

ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের আদবসমুহ:

ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদব রয়েছে যা মেনে চললেই আল্লাহর জন্য ভালোবাসার দাবি যথার্থ প্রমাণিত হবে। নীচে কতিপয় আদব উল্লেখ করা হল।

• সালাম প্রদান ও হাসি-মুখে সাক্ষাৎ করা: রাসূলুল্লাহ সা: বলেন :- কোন ভাল কাজকে কখনো তুচ্ছ জ্ঞান করনা, এমনকি তা যদিতোমার ভাইয়ের সাথে হাসোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করা ও হয়। (সহীহ মুসলিম:৪৭৬০)

• উপঢৌকন প্রদান: ভালোবাসা বৃদ্ধি ও মনোমালিন্য দূরীকরণে এর রয়েছে বিরাট প্রভাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর, তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। (মুয়াত্তা:১৪১৩)

• এক ভাই অপর ভাইয়ের জন্য দুআ করা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :- কোন মুসলিম বান্দা যখন তার ভাইয়ের পিছনে তার জন্য দুআ করে তখন ফেরেশতা বলে উঠে তোমার জন্য ও অনুরূপ।(সহীহ মুসলিম:৪৯১২)আর ইহা তার সারা জীবন এমনকি মৃত্যুর পরে ও অব্যাহত থাকবে।

যাযাক-আল্লাহ খায়রান

আরো পড়ুন

About Abdul Latif Sheikh

Check Also

ইসলাম প্রচারে এগিয়ে আসুন

ইসলাম প্রচারের স্বার্থে নিচের পেইজটিতে নিজে লাইক দিন এবং কমপক্ষে ১০০০ জন বন্ধুকে ইনভাইট করুন, …

ইসলামে অবিচল থাকার উপায়

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় কাজ হলো ইসলামের আকিদা বিশ্বাসের ওপর অবিচল থাকা। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি …

ফেরেশতা যাদের জন্য দোয়া করেন

ফেরেশতা যাদের জন্য দোয়া করেন , ১.ওযূ অবস্থায় ঘুমানো ব্যক্তি: ঘুমানোর পূর্বে ওযু করা উত্তম …